পাটরানি: তিন নম্বর স্ত্রী আশার সঙ্গে বিমল গুরুঙ্গ। —ফাইল চিত্র
শনিবার দলের দশম প্রতিষ্ঠা দিবসে তাঁর কথা কেউ স্মরণ করেননি। বস্তুত পাহাড়ে ঢোকার উপায়ই নেই তাঁর। ইউএপিএ-তে অভিযুক্ত হওয়ার জেরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধানকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। আর সিকিমের হোটেলে বা ব্যবসায়ী বন্ধুদের বাড়ি পাল্টে পাল্টে রাত কাটাচ্ছেন তিনি।
শরীরও বিশেষ ভাল যাচ্ছে না বিমল গুরুঙ্গের। পুলিশ জেনেছে, পাহাড়ে আন্দোলন চলাকালীনই ছোটখাটো একটা স্ট্রোক হয়েছে তাঁর। তবে চিকিৎসা করিয়ে এখন সুস্থ। এই কঠিন সময়ে গুরুঙ্গের পাশে নেই তাঁর পাঁচ জীবনসঙ্গিনীর চার জনই। এখন যেটুকু সেবা তিনি পাচ্ছেন, তা কনিষ্ঠ জীবনসঙ্গিনী পেমার কাছ থেকেই। বাকি চার জন কোথায়, তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রের দাবি, দার্জিলিংয়ের ‘সম্রাট’-এর পাঁচ জীবনসঙ্গিনী বা তাঁদের ছেলে-মেয়েরা কেউই এখন তেমন ভাল নেই, যেমনটা ছিলেন জুন মাসের আগে।
আরও পড়ুন: প্রতিষ্ঠা দিবসে মোর্চায় কি বিনয় উদয়
ষাট পেরনো মোর্চা প্রধানের ‘স্ত্রী’-র সংখ্যা পাঁচ হলেও পুলিশের কাছে খবর, কোনও বিয়েই নিয়ম মেনে পঞ্জিকৃত করা হয়নি। আদিবাসী সংস্কৃতি মেনে সামাজিক ‘বিবাহ’ হয়ে থাকতে পারে। তবে সরকারি ভাবে গুরুঙ্গ বরাবরই তাঁর তৃতীয় জীবনসঙ্গিনী আশাকেই ‘স্ত্রী’ হিসাবে সামনে রাখেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আশাই বিমলের পাশে বসতেন। তিনি নারী মোর্চারও প্রধান। এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, ‘‘আশা গুরুঙ্গই পাটরানি। বাকিদের কদর থাকলেও সামাজিক স্বীকৃতি তেমন নেই। তবে কর্তব্য পালনে গুরুঙ্গ অকাতর।’’
কেমন সে কাহিনি? প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, বিমলের প্রথম স্ত্রীর নাম অঞ্জু। তিনি লেবংয়ের মেয়ে। তাঁর ও গুরুঙ্গের মেয়ের নাম নন্দা (৩৪), ছেলে অবিনাশ (৩১)। নন্দা আইন পাশ করে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসাবে কাজ করতেন। এখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেতে গিয়েছেন। অবিনাশ নেপালি ছবিতে অভিনয় করেন। কিন্তু এখন ইউরোপ-আমেরিকায় ঘোরাফেরা করছেন। গুরুঙ্গের দ্বিতীয় জীবনসঙ্গিনীও নেপালি। (এঁর নাম পুলিশের জানা নেই) তাঁরও একাধিক সন্তান রয়েছে। কিন্তু তিনি বা তাঁর ছেলেমেয়েরা এখন ঠিক কোথায় তা নির্দিষ্ট ভাবে জানতে পারেনি গোয়েন্দারা। প্রশাসনিক কর্তাদের ধারণা, দ্বিতীয় সঙ্গিনী এখন সম্ভবত নেপালেই রয়েছেন। মোর্চা প্রধানের তৃতীয় স্ত্রী হলেন আশা। পুলিশ জেনেছে, সোনাদার এক যুবক ছিলেন বিমলের বিশ্বস্ত চালক। তাঁর হেফাজতেই আশা এখন নেপালে। তাঁর ছেলের নাম জয় (১৪)। সে এখন অস্ট্রেলিয়ার স্কুলে পড়াশোনা করে।
তবে জয়ের প্রতি গুরুঙ্গের স্নেহ অটুট থাকলেও তিনি স্বপ্ন দেখেন চার বছরের যমজ ছেলে তরাই আর ডুয়ার্সকে ঘিরেই। গোয়েন্দারা জেনেছেন, গুরুঙ্গের চতুর্থ সঙ্গিনীর (এঁর নামও পুলিশের অজানা) এই দুই সন্তান এখন মায়ের সঙ্গে নেপালে। প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ‘‘পাহাড়ে জাঁকিয়ে বসার পরে গুরুঙ্গের স্বপ্ন ছিল সমতলে যাওয়ার। তখন যমজ সন্তানের বাবা হন তিনি। নাম রাখেন তরাই আর ডুয়ার্স।’’
তবে প্রশাসনে কানাঘুষো শোনা যায়, যমজ সন্তান জন্মানোর পর মাথায় চোটের চিহ্ন ছিল বিমলের। সে সব নাকি পারিবারিক হিংসার ফল। আশাও নাকি দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন কিছুকাল। এমনই এক সময়ে গরুবাথানে গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেল-এর মহিলা শিবিরে দার্জিলিংয়ের সিংমারির সুভাষনগরের মেয়ে পেমার দেখা পান গুরুঙ্গ। গুরুঙ্গের ভাল লেগে যায় তাঁকেও। জিটিএ-র স্কুল বোর্ডে চাকরি পেয়েছেন পেমা। তাঁর বাড়ির সামনের ভাঙাচোরা রাস্তা পাকা করে দিয়েছেন গুরুঙ্গ।
এই পেমা কবে জিটিএ-র চাকরিতে যোগ দেন সে দিকেই আপাতত নজর প্রশাসনের। তাঁর সূত্র ধরেই ইউএপিএ-র আসামিকে পাকড়াও করতে চায় তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy