ভোটের অঙ্ক কষছেন বিপ্লব মিত্র।—নিজস্ব চিত্র।
ভোট হয়ে গিয়েছে প্রায় দু’সপ্তাহ আগে। নিজের কেন্দ্রে যাওয়া বন্ধ হয়নি তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী বিপ্লব মিত্রের। পড়ন্ত বেলায় রোদের তেজ কমতেই প্রায় রোজ পালা করে হরিরামপুর ও বংশীহারি ব্লকে যাচ্ছেন। ওই দু’টি ব্লক নিয়েই দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের প্রার্থী তিনি। সেখানকার ভোট সেনাপতি দলের ব্লক নেতৃত্ব থেকে পোলিং এজেন্টদের নিয়ে বসে তার পক্ষে কত ভোট পড়েছে প্রতিনিয়ত সমীক্ষা করছেন। বিভিন্ন স্তরের কর্মী ও সমর্থকেরা তো আছেনই। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে ভোটের হিসাব-নিকাশ যাচাই করে নিচ্ছেন। তাই ভোটের পরেও দক্ষিণ দিনাজপুরের সদ্য প্রাক্তন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা হরিরামপুরের প্রার্থী বিপ্লব মিত্রর দৌড় এখনও সমানে চলছে। মুখে বলছেন সোনা-কাঁটা এবার হুল ফোটাতে পারেনি। তবে ভিতর থেকে তাকে চিন্তাটা পুরো দূর হতে দিচ্ছে না।
বেশি রাতে ঘুমোতে যান বিপ্লববাবু। রোজ একটু বেলা করেই ওঠার অভ্যেসে শুক্রবারেও নড়চড় হয়নি। সাধারণত সকাল ১০টা পর্যন্ত তাঁর মোবাইলের সুইচড অফ থাকে। এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ গঙ্গারামপুর শহরের দুর্গাবাড়ি এলাকায় তাঁর বাড়ির অফিস ঘরে মুখোমুখি হতেই বোঝা গেল চেয়ারে বসা মানুষটার উপর বিরাট ঝড় বয়ে গিয়েছে। ভোটের একমাস ধরে হরিরামপুরে ঘাঁটি গেড়ে থাকা পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ বিপ্লববাবুর লাগাতার প্রচার ও পরিশ্রমের ধকল চেহারাতে ধরা পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভোটের আগে দল এবং প্রশাসনের যুগপত বিরোধিতার অভিযোগের ঘটনা সামলে তাকে নিরন্তর লড়াই চালিয়ে হরিরামপুর আসনে যে লড়াইটা দিতে হয়েছে। সেই ধকল তাঁর অনুগামীদের কাছে এখন আরও বেশি যেমন চাক্ষুষ। তেমনি তাঁর নিজের কাছে আরও বেশি দুঃখের। কেন ?
প্রসঙ্গ উঠতেই রোগা হয়ে যাওয়া শরীরটা সেই পুরনো মেজাজে ফিরে গেল। জ্বলে উঠে বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘১৯৯৮ সালে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাকালে মমতার (নাম ধরে ডাকেন) পর রাজ্যে আমি এবং মুকুল রায় দুজন সাধারণ সম্পাদক। দলটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে গেলাম। পঞ্চায়েত, পুরসভা, লোকসভা একের পর এক নির্বাচনে সাফল্য এ জেলার যে দলের মধ্যে কম্বিনেশন (সমন্বয়) তৈরি হয়েছিল। এই বিধানসভা ভোটের আগে সেটাই ভেঙে দেওয়া হল। বিধায়কদের এলাকার চেয়ারম্যান করার মধ্যে দিয়ে পুরনো নেতৃত্বদের সরিয়ে নতুনদের ব্লক ও অঞ্চল কমিটিতে বসিয়ে বিভাজন তৈরির মধ্যদিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বীজ বোনা হলো।’’ শুধু কী তাই? ভোটের মাত্র তিন সপ্তাহ আগে বিপ্লবাবুকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে দলেরই বিধায়ক ও তাদের গোষ্ঠীর একাধিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দলনেত্রীর কানভারী ও উসকানির অভিযোগের সঙ্গেই তাঁকে “একঘরে” করে দেওয়ার চেষ্টারও কোনও কমতি ছিল না বলে এদিন সরব হন বিপ্লববাবু। তিনি অভিযোগ করেন, গতবছর বয়স্ক মহিলার মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ করে সোনা পাল হরিরামপুরের ব্লক সভাপতি তাজমুল হককে ফাঁসানোর চক্রান্ত করেছিল। পুলিশি তদন্তে তার ফাইনাল রিপোর্টেও ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে উঠে আসে। অথচ ওই রিপোর্টটিকে চেপে দিয়ে ভোটের আগে তাঁকে কোণঠাসা করতে নতুন করে পুলিশকে দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে তাজমুলকে গ্রেফতার করা হয়।
বিপ্লববাবুর আরও অভিযোগ, সোনা পাল হরিরামপুরে জোড়া ফুল চিহেৃর বদলে সিপিএমের কাস্তে-হাতুড়িতে ভোট দিতে প্রকাশ্যে প্রচার করেছে। অথচ সোনা পালকে নিয়ে অন্য সব কেন্দ্রের বিধায়ক থেকে সাংসদেরা সভামঞ্চে পাশে বসিয়ে ভাষণ দেওয়াচ্ছেন। এসব সকলেই দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে সাংসদ অর্পিতা দলীয় কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়ে বিষয়টি পরে বুঝতে পেরে আমাকে ফোনও করেছিলেন।’’
এরপরই বিপ্লববাবু জোর দিয়ে বলে ওঠেন, এসব করে হরিরামপুর আসনে জয় ঠেকাতে পারবে না। মমতা আমাকে বলেছিল বিপ্লবদা আপনার কেন্দ্রের সভা করার সময় নেই। আমি বলেছি দরকার নেই। তুমি অন্য আসনে প্রচার করো। আমি হরিরামপুর দেখে নিতে পারব।’’ সোনা পাল বলেন, ‘‘হরিরামপুরে হার-জিত নিয়ে বেটিং শুরু হয়েছে বলে শুনছি। কাকু জিতলে নাকি চারগুণ লাভ দেওয়া হবে, এই হিসাবে বাজি ধরা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy