Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

গেরো কাটিয়ে শিশুমৃত্যুর হার কমানোয় সাফল্য রাজ্যের

অবশেষে ‘একত্রিশ’-এর গেরো পেরোল পশ্চিমবঙ্গ! কী সেই গেরো? ‘রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া’ ২০১৩ সালে ‘স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম’ (এসআরএস) বুলেটিন প্রকাশ করেছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে রাজ্যে নবজাতক-মৃত্যুর হার একটুও কমেনি, এক জায়গায় থমকে রয়েছে।

সোমা মুখোপাধ্যায় ও পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২১
Share: Save:

অবশেষে ‘একত্রিশ’-এর গেরো পেরোল পশ্চিমবঙ্গ!

কী সেই গেরো? ‘রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া’ ২০১৩ সালে ‘স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম’ (এসআরএস) বুলেটিন প্রকাশ করেছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে রাজ্যে নবজাতক-মৃত্যুর হার একটুও কমেনি, এক জায়গায় থমকে রয়েছে। প্রতি হাজারে একত্রিশ।

অথচ ঝাড়খণ্ড, গুজরাত, জম্মু-কাশ্মীর, তামিলনাড়ু-সহ দেশের বেশির ভাগ রাজ্যই ওই তিন বছরে তাদের এই হার অনেকটা কমাতে পেরেছিল। ফলে স্বাস্থ্য-নীতি নিয়ে সর্ব স্তরে প্রবল সমালোচিত হতে হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গকে। রাজ্য জুড়ে ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) চালু করার পরেও কেন শিশু-মৃত্যু কমানো গেল না, সেই প্রশ্নও ওঠে। ফলে এ বারের এসআরএস রিপোর্ট প্রকাশ নিয়ে এক রকম কাঁটা হয়ে ছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। শেষমেশ মঙ্গলবার প্রকাশিত হল সেই রিপোর্ট। যাতে দেখা গিয়েছে রীতিমতো ডিস্টিংশন নিয়ে উতরে গিয়েছে রাজ্য। একত্রিশের গেরো কাটিয়ে রাজ্যে শিশু-মৃত্যুর হার কমে প্রতি হাজারে ২৮ হয়েছে। মঙ্গলবার এই রিপোর্ট পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। এর আগে কেরল, তামিলনাড়ু এবং দিল্লি এই লক্ষ্য পূরণ
করতে পেরেছিল। এ বার তা ছুঁয়ে ফেলল পশ্চিমবঙ্গও।

সহজে কিন্তু এই স্বস্তির জায়গায় পৌঁছয়নি রাজ্য। গত এপ্রিলে বিধানসভা ভোটের মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে প্রকাশিত ২০১৫-১৬ সালের ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৪’ (এনএফএইচএস-৪) রিপোর্ট অনেকটা আশ্বস্ত করেছিল রাজ্যের শাসক দলকে। তাতে বলা হয়েছিল, গত দশ বছরে (২০০৫-২০১৫) পশ্চিমবঙ্গে নবজাতক মৃত্যুর হার ২১ ভাগ (প্রতি হাজারে ৪৮ থেকে কমে প্রতি হাজারে ২৭) কমে গিয়েছে! একে নিজেদের সাফল্য দাবি করে ফলাও করে রাস্তায় রাস্তায় বিলবোর্ডও লাগিয়ে ফেলেছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তখন তাদের প্রবল সমালোচিত হতে হয়।

নবজাতক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ দাবি করেছিলেন, নবজাতক-মৃত্যুর প্রকৃত হার বা ‘ইনফ্যান্ট মর্টালিটি রেট’ বুঝতে একমাত্র এসআরএস রিপোর্টই গোটা দেশে প্রামাণ্য হিসেবে চিহ্নিত। সদ্যোজাতের অসুস্থতা রোখার যাবতীয় কর্মসূচি তৈরি হয় এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই। যত দিন না ফের সেই রিপোর্ট বেরোচ্ছে তত দিন পশ্চিমবঙ্গকে বাহবা দেওয়া যাবে না। কিছু দিনের মধ্যেই বিজ্ঞাপনগুলি তুলে নেয় স্বাস্থ্য দফতর।

নবজাতক-মৃত্যুর উপর লাগাম টানতে তৈরি করা হয়েছিল এসএনসিইউ। বাম আমলে রাজ্যে যার সংখ্যা ছিল ৬। গত সাড়ে পাঁচ বছরেই সেই সংখ্যাটাই বেড়ে হয়েছে ৫৩। আগামী মার্চের মধ্যে সংখ্যাটা ৭০ হবে বলে জানিয়েছেন
স্বাস্থ্য কর্তারা।

এ ছাড়া প্রায় ৩০০টির মতো সিক নিউ বর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট (এসএনএসইউ)-ও তৈরি হয়েছে জেলায়-জেলায়। ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমানোই তাঁর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ জন্য একটি টাস্ক ফোর্সও গড়ে দিয়েছিলেন তিনি।

ওই টাস্ক ফোর্সের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে এসএনসিইউ খোলা নিয়ে আমাদের অনেক বিদ্রুপ সইতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের ভাবনা যে ঠিক ছিল, এসআরএস রিপোর্ট তার প্রমাণ দিল।’’

রাজ্যের পরিবার কল্যাণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এসআরএস রিপোর্ট-ই যে সব চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য তা কেন্দ্র স্বীকার করে। কারণ এটি প্রতি বছর প্রকাশিত হয়। গোটা ভারতের জনসংখ্যার উপর এই সমীক্ষা হয়। নবজাতক-মৃত্যুর হারের কমা-বাড়া বোঝার জন্য এই রিপোর্টকেই মাপকাঠি ধরা হয়।’’ সেই রিপোর্টেই পশ্চিমবঙ্গের সাফল্য এ বার প্রমাণিত। নবজাতক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উপদেষ্টা নিওনেটোলজিস্ট অরুণ সিংহেরও বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ যে শিশু-মৃত্যু রুখতে ভাল কাজ করেছে এবং এসএনসিইউগুলি যে ভাল ফল দিয়েছে, তা দেখা গেল। এর জন্য স্বাস্থ্য দফতরের অভিনন্দন প্রাপ্য।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West bengal child death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy