গ্রাফিক: তিয়াষা দাস।
মুক্তিরচকে ঢোকার মুখে কংক্রিটের সেতুর সামনে মঙ্গলবার সকাল থেকেই সবুজ আবির উড়েছে। ডিজে বক্সে বাজছে গান। একে একে ১০টি মালা পরিয়ে দেওয়া হয়েছে দশ জনকে। তার পর তাদের নিয়ে গ্রামের ভিতর গিয়েছে মিছিল—ওই দশ জনই মুক্তিরচক গণধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত।
ধর্ষিতাদের বাড়ির সামনে দিয়েই গিয়েছে মিছিল। নির্যাতিতাদের দাবি, ‘‘রাস্তায় চিৎকার করেছে ওরা— গ্রামে ফিরে এসেছি। সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। দেখব কে বাঁচায়! আমরা ভয়ে জানলা বন্ধ করে থেকেছি।’’
২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে আমতার মুক্তিরচক গ্রামের এক মহিলা ও তাঁর জেঠশাশুড়িকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বরুণ মাখাল, শ্যামল মণ্ডল-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে।
ঘটনার পরই গ্রেফতার করা হয় বরুণ ও রণজিৎ মণ্ডলকে। ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশ চার্জশিট দিলেও হাইকোর্ট থেকে জামিন পায় অভিযুক্তরা। তবে জামিনের শর্তে বলা ছিল, বিচার চলাকালীন অভিযুক্তরা আমতা থানা এলাকায় ঢুকতে পারবে না। শুধুমাত্র শুনানির দিনগুলিতে আমতা আদালতে হাজিরা দিতে পারবে।
বছর খানেক আগে এক অভিযুক্ত গ্রামে ঢুকে তাঁদের হুমকি দিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন নির্যাতিতারা। তার পর সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, অভিযুক্তরা শান্তিপূর্ণ ভাবে গ্রামে থাকতে পারবে। তার পর এ দিন তারা গ্রামে ঢোকে।
অভিযোগ, সকালে স্থানীয় তৃণমূল নেতা তাপস গায়েনের নেতৃত্বে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ আমতা-মুক্তিরচক সেতুর সামনে জড়ো হন। অভিযুক্তদের বরণ করে শুরু হয় মিছিল। এক নির্যাতিতার বক্তব্য, ‘‘পাঁচ বছরে ধরে মামলা চলছে। ৫১ জন সাক্ষীর বেশির ভাগেরই সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শীঘ্রই মামলার রায় ঘোষণা হবে। এর মধ্যে এ ভাবে আমাদের ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে!’’ আর এক নির্যাতিতা বলেন, ‘‘ওরা রাস্তায় সগর্বে চিৎকার করছে আর আমরা ঘরে মুখ লুকিয়ে আছি। অপরাধী কি তাহলে আমরাই?’’
নির্যাতিতাদের বাড়ির সামনে অবশ্য পুলিশি প্রহরা রয়েছে। দুই মহিলার দাবি, তাঁরা নিরাপত্তারক্ষীদের অনুরোধ করেছিলেন যেন মিছিল তাঁদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে দেওয়া না হয়। কিন্তু পুলিশ কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ। এ দিনই পুলিশের কাছে দরবার করেছেন দুই নির্যাতিতা। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘নির্যাতিতাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে।’’
অভিযোগকারিণীদের তরফে হাইকোর্টের আইনজীবী রবিশঙ্কর মিত্র বলেন, ‘‘২৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে যে শুনানি হয় তাতে আমরা হাজির ছিলাম না। অভিযুক্তদের জামিন বাতিলের দাবি জানিয়ে ফের মামলা করব।’’ উলুবেড়িয়া
আদালতেও নতুন করে মামলা রুজু করা হবে বলে জানান অভিযোগকারিণীদের আরও এক আইনজীবী রেজাউল করিম।
তবে তৃণমূল নেতা তাপস গায়েন বলেন, ‘‘অপরাধ প্রমাণ হবে আদালতে। কিন্তু রায় তো বেরোয়নি। সে অবস্থায় পাঁচ বছর বাইরে থাকা ঘরের ছেলেরা যদি ফিরে আসে, তাদের বরণ করে নেব না?’’ তবে মিছিলে দলীয় পতাকা তিনি ব্যবহার করেননি বলে দাবি করেছেন তাপস। হুমকির অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy