বিদায় বঙ্গ। রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের (বাঁ দিকে) সঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দরে সদ্য প্রাক্তন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। ছবি: দেবাশিস রায়।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল নিয়োগের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা না করে এক তরফা ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
রাজ্যপাল হিসেবে বিহারের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে আজ পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব নিয়েছেন ডি ওয়াই পাটিল। আজ রাজভবনে শপথ নেন তিনি। পাটিলের এই নিয়োগ নিয়ে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। যা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভও জানিয়েছেন মমতা। কিন্তু এখন রাজনাথ নিজেই চাইছেন, পূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে কাউকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানোর আগে উভয় পক্ষের সহমতের ভিত্তিতে এগোতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে দৌড়ে এগিয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহ। রাজনাথও তাঁকেই চাইছেন। সম্ভবত কল্যাণের নাম নিয়েই মমতার সঙ্গে আলোচনা করবেন রাজনাথ। তবে আরও দু’একটি নাম উঠতে পারে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর।
কল্যাণ নিজে অবশ্য রাজ্যপাল হতে সে ভাবে ইচ্ছুক ছিলেন না। গোড়ার এ ব্যাপারে দলের প্রস্তাবে তিনি সরাসরি না করে দিয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহলে কল্যাণ জানিয়েছিলেন, তিনি উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতেই সক্রিয় ভাবে থাকতে চান। কিন্তু হাল ছাড়েননি রাজনাথ। তিনি ক্রমাগত কল্যাণকে বুঝিয়েছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, এখন নিজের অবস্থান অনেকটাই নরম করেছেন কল্যাণ। এর পরে বিষয়টি আর ঝুলিয়ে রাখতে চাইছেন না রাজনাথ। এর মধ্যে আজই গোয়ার রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন ভারত বীর ওয়াঞ্চুু।
আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। তার আগেই রাজ্যপাল নিয়োগের বিষয়টি সেরে ফেলতে চায় বিজেপির একটি বড় অংশ। রাজ্যপালদের নিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে গত কাল রাতে বৈঠকে বসেছিলেন রাজনাথ ও নিতিন গডকড়ী। বিজেপি সূত্রের খবর, প্রাথমিক যে তালিকা হয়েছে, তাতে কল্যাণের পাশাপাশি রাম নায়েক, কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর মতো বর্ষীয়ান নেতাদের রাজ্যপাল করে রাজ্যে রাজ্যে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা এখনও বাকি বলেই জানিয়েছে বিজেপি শিবির। দলের বক্তব্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করার পরে যদি বড় কোনও বিরোধিতা না আসে, তা হলে রাজ্যপাল নিয়োগের বিষয়টি সরকারি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। এবং তা করা হবে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগেই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, সব ক’টি রাজ্যের রাজ্যপাল নিয়োগ এক সঙ্গে না-ও হতে পারে। দু’দফায় ওই নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ডি ওয়াই পাটিল আজই সরকারি ভাবে পশ্চিমবঙ্গের অস্থায়ী দায়িত্ব নিয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে তাঁকে সরিয়ে কাউকে পূর্ণ দায়িত্বে আনাটা কিছুটা অস্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে বাজেট অধিবেশন শেষেও ওই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
শপথ নিলেন অস্থায়ী রাজ্যপাল ডি ওয়াই পাটিল, হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। ছবি: সুমন বল্লভ।
তবে যা-ই হোক, রাজ্যপাল কে হবেন, তা নিয়ে মমতার সঙ্গে আগে কথা বলেই এগোতে চাইছেন রাজনাথ। তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবিরের মতে, কল্যাণের নামে মমতা রাজি হলে কোনও সমস্যাই নেই। কিন্তু আপত্তি জানালে তা নিয়ে কথা হবে। সে ক্ষেত্রে কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বা ভি কে মলহোত্রর মতো কারও নাম ভাবা হতেই পারে। সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপাল নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করলেও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে কেন্দ্রেরই। মমতা নিজেও এ কথা জানেন। পাটিলের নিয়োগ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়নি বলে ক্ষোভ থাকলেও কল্যাণ-প্রশ্নে তিনি শেষ পর্যন্ত কী করবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই নানা মত রয়েছে। কারণ মমতা জানেন, তিনি আপত্তি জানানোর পরে কেন্দ্র যদি নিজের অবস্থানে অনড় থেকে সেই ব্যক্তিকেই রাজ্যপাল করে পাঠায়, তা হলে রাজ্যপালের সঙ্গে প্রথম থেকেই একটি তিক্ততার সম্পর্ক তৈরি হতে পারে, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যা মোটেই কাম্য নয় মমতার কাছে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “ধরা যাক, কল্যাণ সিংহ বা অন্য যে নাম পাঠানো হল, তাতে আমাদের আপত্তি রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র যে সেই আপত্তি মানবেই, এমনটাও তো নয়। রাজনৈতিক বিরোধিতা বাড়াতে চেয়ে কেন্দ্র তাদের পছন্দ চাপিয়ে দিতেই পারে।”
রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বারংবার রাজ্য সফর বা তাপস পাল কাণ্ডে কেন্দ্রের জবাব তলবের মতো ঘটনা ভাল ভাবে নেননি মমতা। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, রাজ্যে নিজেদের প্রভাব বাড়াতেই পশ্চিমবঙ্গ প্রশ্নে অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে বিজেপি। এই বিষয়টি মাথায় রেখে তাই রাজ্যপাল প্রশ্নে প্রথম থেকেই বিরোধিতার পথে না হাঁটার কৌশল নেওয়ার কথা ভাবছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy