কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-নিগ্রহ থেকে শুরু করে সরকারি টাকা খরচে নাক গলানো পর্যন্ত বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনায় আঙুল উঠেছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দিকেই। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৌরভ অধিকারীকে। সংগঠনের নেতৃত্বে রদবদলের পরে সেই ছাত্রনেতার ডানা ছাঁটার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
শিক্ষক-নিগ্রহের ঘটনার পরে শিক্ষকদের কাছে সৌরভকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করিয়েছিলেন অস্থায়ী উপাচার্য সুগত মারজিত। কিন্তু তার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমাল লেগেই আছে। এবং তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাঠগড়ায় টিএমসিপি। শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের সমান্তরালে কাজিয়া চলছে ছাত্র সংগঠনেও।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য নেতৃত্ব সূত্রের খবর, সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে যে-সব গোলমাল হয়েছে, তার মূলে আছে ওই সংগঠনেরই অভ্যন্তরীণ বিরোধ। বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি ক্যাম্পাসে গোলমালের কারণ ছিল টিএমসিপি-র নিজেদের ঝগড়া। কেন এত ঝগড়া, এ বার নিজে থেকে সেটা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংগঠনের নবনিযুক্ত রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘শুধু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠছে কেন, সেই বিষয়ে দলের উচ্চতর নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলছি। এই ধরনের সমস্ত অভিযোগ আমি নিজে খতিয়ে দেখছি।’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকঠাক চলছে। কিন্তু যাদবপুর আর প্রেসিডেন্সিতেই এত গোলমাল কেন? এখন তাঁর দলেরই ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র রাজ্য নেতৃত্বের প্রশ্ন, শুধু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ই কেন গোলমালের কেন্দ্র হয়ে উঠছে বারবার? শুধু প্রশ্ন তোলাই নয়, গোলমালের কারণ খতিয়ে দেখতেও শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য নেতৃত্ব।
কারণ অনেক এবং তার বেশির ভাগের সঙ্গেই জড়িত একটি নাম— সৌরভ অধিকারী। কীসের জোরে ওই ছাত্রনেতার এত দাপট? টিএমসিপি-র একাংশের বক্তব্য, দাদা ধরার মুন্সিয়ানার জোরেই দাদাগিরিতে দড় হয়ে উঠেছেন সৌরভ। সংগঠনের সদ্য-প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই ছিল তাঁর মূল শক্তি। সেটার অপব্যবহারই সৌরভের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছে টিএমসিপি-র একটি অংশ।
সংগঠন সূত্রে জানানো হয়:
l ২০১৪ সালে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মেয়ে রোশনারা মিশ্রের নিগ্রহের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল সৌরভের। l জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের মারধরের ঘটনায় তাঁর দিকে আঙুল উঠেছিল। l সম্প্রতি রাজাবাজার স্ট্রিট ক্যাম্পাসে এক প্রাক্তন টিএমসিপি নেতাকে নিগ্রহের মূলেও তিনি। l রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান (রুসা)-এর টাকা খরচের ব্যাপারে নাক গলানোর অভিযোগও আছে সৌরভের বিরুদ্ধে। l সোমবার রাতে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের এক ছাত্রকে মারধর করার ঘটনাতেও অভিযোগের তির তাঁর দিকেই।
সংগঠনের অন্দরের খবর, অন্য কলেজের একটি ছাত্র কাউন্সেলিংয়ের জন্য রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের এক শিক্ষকের কাছে যেতেন। সোমবার সন্ধ্যায় তাঁকে ছাত্র সংসদের ঘরে পেটানো হয়। বহিরাগত হওয়ায় তাঁকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতেও। মঙ্গলবার রাতে তৃণমূল ভবনে গিয়ে সৌরভের নামে লিখিত অভিযোগ জানান ওই ছাত্রের বাবা। নড়েচড়ে বসে দল। সৌরভের নামে পুরনো সমস্ত অভিযোগ সামনে নিয়ে এসে এ বার ব্যবস্থা নিতে চলেছেন টিএমসিপি নেতৃত্ব। জয়াদেবী জানান, যে-কোনও রকমের কঠোর পদক্ষেপ করতেও পিছপা হবে না টিএমসিপি।
অস্থায়ী উপাচার্য সুগতবাবু চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আছেন। তিনি আর এ-সবের মধ্যে ঢুকতে চাইছেন না। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘সৌরভের বিরুদ্ধে আমার কাছে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy