শ্লথ বিচারব্যবস্থা নিয়ে হিন্দি ছবির সংলাপ জনপ্রিয় হয়েছিল অনেক দিন আগেই। তার পরেও মামলা জমতে জমতে পাহাড় হয়েছে। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বিচারকের অভাবে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি নিয়ে আক্ষেপ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই চোখে জল চলে এসেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির। ছবিটা বদলায়নি।
রঘুনাথপুর আদালতে সম্প্রতি এক সপ্তাহ কর্মবিরতি চললেও তা উঠে গিয়েছে। কিন্তু তারও আগে থেকে বার অ্যাসোসিয়েশন রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের অফিসে থাকা সাব ডিভিশনাল এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাস বয়কট চালিয়ে যাচ্ছে। এতে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা।
আইনজীবীদের অভিযোগ, রঘুনাথপুর মহকুমাশাসকের অফিসে ওই এসডিইএম আদালতের এক বিচারক তাঁদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেন না। সময়মতো এজলাসে বসেন না তিনি। এই অভিযোগে দেড় মাস আগে থেকে রঘুনাথপুর বার অ্যাসোসিয়েশন ওই আদালতের সব ক’টি এজলাসই বয়কট করে আসছেন।
এই আদালতে জমিজমার বিবাদ ও সংঘর্ষের কম গুরুত্বের মামলা ওঠে। কিন্তু বিচার না হওয়ায় সামান্য ঘটনায় জামিন না পেয়ে কেউ কেউ জেলে রয়েছেন বলে অভিযোগ। বয়কটের জন্য জমি সংক্রান্ত কোনও বিবাদের মামলাও সেখানে এখন উঠছে না। এতে সমস্যায় পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা।
গত ১২ মে থেকে এজলাসগুলিতে বয়কট চলছে। আইনজীবীদের ক্ষোভ, তাঁরা সমস্যার কথা বার অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রসাশনের কাছে অনেক আগে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে পুরুলিয়ার জেলাশাসক সমস্যা মেটানোর বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
পরিকাঠামোগত বিভিন্ন দাবিদাওয়া তো বটেই, এমনকী মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণেও আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি নতুন ঘটনা নয়। সম্প্রতি রঘুনাথপুর আদালতে সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন) এর কোর্ট শুরুর দাবিতে বার অ্যাসোসিয়েশন ছ’দিনের কর্মবিরতি পালন করে। ওই কর্মবিরতির জেরে সমস্যায় পড়তে হয় বিচারপ্রার্থীদের। কিন্তু টানা দেড় মাস ধরে এসডিইএমের এজলাস বয়কটের ঘটনায় ভোগান্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে হয়েছে।
আইনজীবীরাই জানাচ্ছেন, সামান্য বিবাদের জেরে মারামারারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন সাঁতুড়ির কিষান মুর্মু। আদালতে সময়মতো হাজিরা না দেওয়ায় তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা বেরিয়েছিল। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। কিন্তু, আইনজীবীদের এসডিইএমের আদালত বয়কটের জেরে ৩১ মে থেকে জেলে রয়েছেন কিষান। একই ঘটনা ঘটেছে কাশীপুরের মহাদেব কালিন্দী ও নিতুড়িয়ার দীপক হাড়ির ক্ষেত্রেও। মহাদেব ১৩ মে থেকে এবং দীপক ৩১ মে থেকে জেলবন্দি। আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ওই ব্যক্তিরা অপরাধের গুরুত্বের বিচারে সামান্য ঘটনায় জেলে রয়েছেন। অথচ তাঁদের আদালতে পেশ করলে আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলেই মঞ্জুর হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা রয়েছে।
তা হলে তাঁরা বয়কটের পথে এখনও অনড় কেন?
বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তপনকুমার মাজির অভিযোগ, ‘‘ওই এজলাসে আইনজীবীরা ন্যূনতম সম্মান পান না। তা ছাড়া প্রায়ই এজলাস দেরিতে শুরু হয়। তাই বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা সর্বসম্মত ভাবে সব এজলাস বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ কিন্তু কার্যক্ষত্রে তিনটি এজলাসই বয়কট করা হয়েছে কেন? তার কোনও সদুত্তর মেলেনি বার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে।
এত দিন ধরে কেন বয়কট চলছে, তার দায়ভার প্রশাসনের উপরেই চাপিয়ে তপনবাবু বলেন, ‘‘বিচারপ্রার্থীদের হয়রানির মধ্যে ফেলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছি। অথচ প্রশাসনই আইনজীবীদের নিয়ে আলোচনায় বসায় উদ্যোগী হয়নি।’’ জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন একজন বিচারকের এজলাস তাঁরা বয়কট করছেন। সমস্ত এজলাস বয়কটের কথা বার অ্যাসোসিয়েশন জানায়নি।” তাঁর আশ্বাস, সাধারণ মানুষের হয়রানির কথা ভেবেই রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসককে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে তিনি বলবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy