লড়াই: বাবা-মায়ের সঙ্গে পূজা টুডু। নানুরে। —নিজস্ব চিত্র।
সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর হাল। তাই দিনমজুরি করেই পড়াশোনা করে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে পূজা টুডু। তারপরও লড়াই থামেনি। ফের দিনমজুরি করেই কলেজে পড়া শুরু করেছে পূজা।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ পর্যন্ত নানুর ব্লক এলাকায় হাতেগোনা যে কয়েক জন আদিবাসী মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে, পূজা তাদের অন্যতম। এ বারে সে হাটসেরান্দি হাইস্কুল থেকে কলা বিভাগে ৪৩৯ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। হাটসেরান্দি গ্রামেই এক চিলতে মাটির ঘরে পাঁচ সদস্যের সংসার পূজাদের। বিপিএল তালিকাভুক্ত হলেও, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই বাড়িতে। হ্যারিকেনই ভরসা। বাবা সনাতন এবং মা মালা টুডু স্কুলের চৌকাঠও পেরোননি। অষ্টম শ্রেণির পরে বোন মন্দিরার আর পড়া এগোয়নি।
ভাই সূর্য তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
এক সময় পূজারও পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কারণ, বাবা-মায়ের দিনমজুরির আয়ে ভাল ভাবে সংসারই চলে না। তাই নিজের পড়াশোনার জন্য পূজাকে বেছে নিতে হয় দিনমজুরি। ছুটির দিনগুলিতে তো বটেই, স্কুল কামাই করেৈও তাকে মজুর খাটতে হয়েছে। সেই জন্যই ভাল রেজাল্ট হয়নি বলে আক্ষেপ রয়েছে পূজার। যদিও সে বরাবরই পাশে পেয়েছে শিক্ষকদের। যাঁরা বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। পূজাকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা পয়সায় টিউশনি পড়িয়েছেন গ্রামেরই মহিমারঞ্জন মজুমদার। উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজি পড়িয়েছেন নবদ্বীপ ঘোষ। তাঁরা জানান, অর্থাভাবে পূজা উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে টিউশানি নিতে পারেনি। নিজের পড়ার খরচ জোগাড় করতে মাঝে মধ্যে দিনমজুরিও করতে হয়েছে।
পূজার বাবা বলেন, ‘‘আমাদের অভাবের সংসার। কী করে মেয়ের পড়ার খরচ জোগাব? সব বছর তো ঘরের চাল ছাওয়ার খড়ই জোগাড় করতে পারি না। শিকেয় ওঠে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা।’’
এত প্রতিকূলতা সত্বেও পূজা পিছু হঠতে রাজি নয়। সে চায় শিক্ষিকা হতে। খুজুটিপাড়া চণ্ডীদাস মহাবিদ্যালয়ে ভূগোল নিয়ে ভর্তি হয়েছে। দিনমজুরি করেই সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। এই লড়াইয়ে অন্য কেউ পাশে না থাকলেও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘নতুন সকালের’ প্রতি পূজা কৃতজ্ঞ। ক্লাস এইট থেকে ওই সংস্থা বই এবং টাকা দিয়ে আর্থিক সাহায্য করেছে তাকে। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা, নতুন সকালের সদস্য অমিয় মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়েটির পড়াশোনার নিষ্ঠা দেখে অবাক হতে হয়। আমরা যতটা পারি সাহায্য করি। বাকিটা ওকে দিনমজুরি করেই চালিয়ে নিতে হয়।’’
নানুরের বিডিও মৃণালকান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই মেয়েটির বিষয়ে কিছু জানা নেই। ব্লক প্রশাসন সব সময়ই দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের পাশে রয়েছে। ওই মেয়েটির ক্ষেত্রেও থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy