খুদে পায়ে ফুটবল। সাঁইথিয়া স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।
প্রয়োজনের তাগিদে নাম বদলে গিয়েছে। কিন্তু নানা বাধা-বিপত্তিতে ৭১ বছরেও বদলায়নি সাঁইথিয়া স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের (এসএসএ) সংস্কৃতি।
বরং নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল ওই ক্রীড়া সংস্থা। খেলাধূলার জন্য ১৯৪৪ সালে রেবতী সরকার, নীহার দত্ত, শিশির দত্ত, বুবা মিত্র, বলাই সাহা, কালিদাস মিত্র, রামদুলাল সরকার, ধীরেন সেন প্রমুখদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে অগ্রণী সমাজ ক্লাব। খেলাধূলার পাশাপাশি তখন উদ্যোক্তারা স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রামে গ্রামে পুকুর সংস্কারের কাজও করতেন। ওই কাজের সুবাদেই লাগোয়া গ্রামগুলিতেও অন্য পরিচিতি পেয়েছিল সেদিনের সেই ক্লাবটি। তাই সকলের সহযোগিতায় একটি শক্তিশালী ফুটবল টিমের পাশাপাশি ক্রীড়া চর্চার ক্ষেত্র গড়ে ওঠে। ওই টিমেরই দুলাল মিত্র, সুবল মিত্র, ফজু মিত্র, নির্মল দত্ত, নীহার দত্ত, শম্ভু চট্টোপাধ্যায়রা বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় দল-সহ সুপার ডিভিশনের খেলায় মাঠ মাতিয়েছেন।
১৯৪৬ সালেই শুরু হয় হরিপদ চন্দ্র চ্যালেঞ্জ শিল্ড ফুটবল প্রতিযোগিতা। তারপরই নেমে আসে নানা ঘাত-প্রতিঘাত। ব্যক্তি মালিকাধীন মাঠে খেলা নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। ক্রীড়া চর্চাতেও ভাঁটা পড়ে। ওই অবস্থাতেও লড়ে যান উদ্যোক্তারা। ১৯৫৪ সালে ফের নন্দিকেশ্বরী ফুটবল টুর্নামেন্ট নামে শুরু হয় বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিযোগিতা। ওই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন সময় খেলে গিয়েছেন রামবাহাদুর, বীরবাহাদুর, চুনী গোস্বামী, আমেদ খান, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল চক্রবর্তী, ক্যাপ্টেন ঘোষ, দীপু দাস, নুরুল ইসলামদের মতো নামী ফুটবলাররা। ওইসময় খেলাধূলায় অগ্রণী সমাজের সুনামের সুবাদে রাজ্য ক্রীড়া সংস্থা সাঁইথিয়ায় ফুটবলের প্রশিক্ষণের জন্য একজন প্রশিক্ষক মঞ্জুর করে।
প্রশিক্ষক পাওয়ার শর্ত ছিল এলাকার ফুটবলার এবং ক্রীড়ামোদীদের নিয়ে গড়তে হবে একটি স্বতন্ত্র ক্রীড়া সংস্থা। ওই শর্ত পূরণের লক্ষ্যেই ১৯৭৬ সালে অগ্রণী সমাজ গড়ে তোলে সাঁইথিয়া স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন। অগ্রণী সমাজের তদানীন্তন সভাপতি এবং সম্পাদক যথাক্রমে নীহার দত্ত এবং শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় ক্রীড়া সংস্থাতেও একই পদে বহাল হন। খেলার মাঠের সমস্যা ঘোচে ১৯৮১ সালে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সৌজন্য ডানকান ব্রার্দাসের কাছে প্রথম ১ লক্ষ টাকা অনুদান পায় ওই ক্রীড়া সংস্থা। সেই টাকায় প্রাচীর নির্মাণ-সহ দীর্ঘ মেয়াদী লিজে নেওয়া হয় খেলার মাঠটিও। পরে ক্রীড়া সংস্থারই মালিকানাধীন হয় সেই মাঠ। মাঠটির নাম এখন কামদাকিঙ্কর স্টেডিয়াম। তারপর ধীরে ধীরে প্রণববাবু এবং সাংসদ কোটার টাকায় তৈরি হয় গ্যালারি, জিম-সহ নিজস্ব অফিস। এখনও ওই মাঠে ঐতিহ্যবাহী নন্দিকেশ্বরী ফুটবল প্রতিযগিতার পাশাপাশি ভলিবল, ব্যাডমিন্টন বাস্কেটবল, অ্যাথলেটিক চর্চাও রয়েছে। প্রদীপ সেনের অধীনে ৭০ জনের একটি ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবিরও চলে।
ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত মহকুমা এবং জেলাস্তরের ফুটবল লিগে প্রায় প্রতিবছরই প্রশিক্ষণ নেওয়া ফুটবলাররা সম্মানজনক স্থান দখল করেছে বলে কর্মকর্তাদের দাবি । ফুটবলার ননীচোরা ঘোষ, নোটন ঘোষ, শিবলাল মুর্মরা জানান, শুধু ক্রীড়া সংস্থার প্রতিযোগিতাতেই নয়, বিভিন্ন ক্লাবের খেলাতেও আমরা প্রতিবছর চ্যাম্পিয়ন হই। নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্যই এমনটা সম্ভব হয়েছে। ক্রীড়া সংস্থার এ হেন উন্নয়নে জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রয়াত নীহার দত্তের অবদান অন্যতম বলে দাবি সাঁইথিয়ার অধিকাংশ বাসিন্দাদের। কারণ নীহারবাবু নিজে শুধু ভাল ফুটবলারই ছিলেন না, ছিলেন ক্রীড়ামোদীও। প্রণববাবুর সঙ্গে ছিল তাঁর বিশেষ সখ্যতা। সেই সুবাদেই প্রণববাবু বিভিন্নভাবে ওই ক্রীড়া সংস্থার পাশে দাঁড়িয়েছেন। একদিন এলাকার ক্রীড়া চর্চার উন্নয়নের লক্ষ্যে অগ্রণী সমাজ থেকে জন্ম হয়েছিল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের।
আজও সেই দুটি সংস্থার মধ্যে যোগসূত্র অটুট। অগ্রণী সমাজের অন্যতম কর্মকর্তা সব্যসাচী দত্ত এবং বিপ্লব দত্ত স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েসনেরও সহ সভাপতি। অগ্রণী সমাজের দুর্গাপুজোর পাশাপাশি স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের খেলাধুলোতেও তারা অগ্রণী ভূমিকা নেন। আবার স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েসনের সভাপতি শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, কার্যকরী সভাপতি নির্মল দত্ত, সম্পাদক পিনাকীলাল দত্তদেরও দেখা যায় অগ্রণী সমাজের পুজোমণ্ডপে। ‘‘শুরু থেকেই আমরা একে অন্যের পরিপূরক। সেই ঐতিহ্যটাই ধরে রাখতে চাই’’— বলেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy