নিমন্ত্রিতের সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, বাড়িতে ভোজ-কাজ হলে মাছ-মাংস কিংবা মিষ্টির মজুত আপনাকে কিছুটা বেশিই রাখতে হতে পারে। কেননা, অযাচিত নিমন্ত্রণের আর্জি নিয়ে আপনার দোরে হাজির হতে পারেন স্থানীয় স্কুলের শিক্ষকেরা। গ্রামের স্কুলের ছেলেমেয়েরা যাতে অন্তত সে দিনটা মিড-ডে মিল ভাল খেতে পারে, তার জন্যে মণ্ডা-মিঠাই দানের আর্জি রাখবেন তাঁরা।
স্থানীয়দের যোগদানের মাধ্যমে মিড-ডে মিলকে আকর্ষণীয় করতে এমনই পরিকল্পনা নিচ্ছে দফতর। কী ভাবে করা হবে, তা ঠিক করতে নদিয়ার কল্যাণী গাঁধীভবনে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা এবং মিড-ডে মিলের প্রজেক্ট ডিরেক্টরের দফতরের উদ্যোগে বি আর অম্বেদকর ইনস্টিটিউট ফর পঞ্চায়েত অ্যান্ড রুরাল ডেভলপমেন্টের পরিচালনায় ১৪ ডিসেম্বর থেকে তিন দিনের বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং পুরুলিয়া জেলার চারটি করে ব্লকের বিডিও প্রতিনিধি, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক, একটি করে স্কুলের শিক্ষক প্রতিনিধি এবং পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষদের নিয়ে ওই কর্মশালায় যোগদানকারী প্রতিনিধিরাই পরে ‘মাস্টার ট্রেনার’ হিসাবে নিজের জেলার অন্য স্কুলেও প্রশিক্ষণ দেবেন। এই কর্মসূচিতে বীরভূম থেকে সাঁইথিয়া, ইলামবাজার, সিউড়ি ১ এবং ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন।
মিড-ডে মিলের মান নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। একঘেয়ে খাবারের পাশাপাশি পুষ্টিগুণের অভাবেরও অভিযোগ রয়েছে। সেটা মেনে শিক্ষকদের অনেকের মত, এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হল মিল পিছু বরাদ্দ টাকা। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য দৈনিক বরাদ্দ রয়েছে মাথাপিছু ১০০ গ্রাম চাল এবং ৪ টাকা ১৩ পয়সা। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ওই বরাদ্দের পরিমাণ ১৫০ গ্রাম চাল এবং ৬ টাকা ১৬ পয়সা।
সেই বরাদ্দ এখনই বাড়ার তেমন সম্ভাবনা না থাকায় একটু অন্য রকম ভাবতে শুরু করেছিলেন অনেকেই। কী ভাবে মিড-ডে মিলকে জনপ্রিয় করা যায়, টাকার সমস্যার মধ্যে থেকেও কী ভাবে ভাল খাবার পাতে তুলে দেওয়া যায়, সে নিয়ে চর্চা ছিলই। কিছু পরিকল্পনার কথা মাথায় আসে কারও কারও। তাতে মত দেন হন অনেকে। তারই একটি হল, এলাকায় অনুষ্ঠানের খবর পেলে সটান সেখানে হাজির হওয়া। গৃহকর্তার কাছে অনুষ্ঠানের আড়ম্বর ছেঁটে স্কুলের মিড-ডে মিলের জন্য কিছু ভাল খাবারের বন্দোবস্ত করার অনুরোধ করা। ঠিক হয়েছে, সম্পূর্ণ না হলেও ভোজবাড়ির মাছ, মাংস কিংবা মিষ্টি পাঠিয়ে দেওয়ারও আর্জি জানাবেন তাঁরা।
পাশাপাশি স্কুলে জায়গা থাকলে সব্জি বাগান তৈরি, কিংবা অভিভাবকদেরই পতিত জায়গায় ওই বাগান করে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হবে। চাষিদের কাছ থেকে সব্জি সংগ্রহ করা হবে দান হিসাবে। ভেজাল রোধ এবং রান্নার কাজে যুক্ত কর্মীদের পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতাতেও জোর দেওয়ার ভাবনা রয়েছে।
নদিয়ার ওই কর্মশালায় যোগ দিয়েছেন মিড-ডে মিলের বীরভূম জেলা ডিইও কৌশিক গোস্বামী, সাঁইথিয়া এবং ইলামবাজারের সৌগত ভট্টাচার্য এবং প্রশান্ত কবিরাজ, আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুল এবং সিউড়ির আড্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়-সহ ১৩ জন প্রতিনিধি। তাঁরা জানালেন, মিড-ডে মিলের মানোন্নয়েনের লক্ষ্যে প্রথমে নিজেদের বাড়ির ভোজ দিয়ে শুরু করবেন।
বি আর অম্বেদকর ইনস্টিটিউট ফর পঞ্চায়েত অ্যান্ড রুরাল ডেভলপমেন্ট-এর ডিরেক্টর তথা রাজ্যের বিশেষ সচিব শুভেন্দু ঘোষের আশা, তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই এগিয়ে আসবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy