গান গেয়ে প্রচার করছেন তৃণমূল প্রার্থী বাউল শিল্পী মানিক হাজরা। ছবি: কল্যাণ আচার্য
রোদের ঝাঁঝ একটু কমে এসেছে! পাড়ার মোড়ে কিংবা পথচলতি মানুষজনের মুখে এখন শুধু ভোটের কথা। জমতে শুরু করেছে পাড়ার আড্ডাও। সঙ্গে রয়েছে চা-বিস্কুট। এমন এক মুহূর্তে ভেসে এল বাউলের সুর।
অসময়ে বাউল! কোথা থেকে বাউলের সুর ভেসে আসছে জানতে অনেকে চায়ের কাপ হাতেই বেরিয়ে আসেন। তাঁদের মধ্যে মৃদু সুরে কেউ কেউ বলে ওঠেন, ‘আরে এতো আমাদের মানিক বাউল’। তাঁদের প্রশ্ন, এমন সময়ে মানিকবাবুকে তো গ্রামে গান গাইতে বিশেষ একটা দেখা যায় না? মানিকবাবুর অবশ্য কোনও দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি তখন একতারা বাজিয়ে গেয়ে চলেছেন, ‘এই ভবের বাজারে আনন্দধারা বইছে/ সরকার মরা গাছে ফুল ফুটাইছে’। তারপর গান থামিয়ে গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে বললেন, ‘‘মা-বোন, দাদা-ভাইয়েরা আমি এ বারে প্রার্থী হয়েছি গো। ঘাসফুলে আমাকে ভোটটা দিও সবাই।’’
মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দিয়েই গান গেয়ে প্রচার শুরু করে দিলেন লোকশিল্পী বছর আটচল্লিশের মানিক হাজরা। তৃণমূলের হয়ে তিনি মনোনয়ন জমা দিলেন।
মানিকবাবুর বাড়ি নানুরের কুমিড়া গ্রামে। বাবা ছিলেন প্রান্তিক চাষি। অর্থাভাবে মাধ্যমিকের পরে থমকে গিয়েছে তাঁর পড়াশোনা। তাই পেটের টানে আঠারো বছর বয়সেই স্থানীয় আরার গ্রামের দিলীপ দাস বৈরাগ্যের কাছে বাউল গানের তালিম নিতে শুরু করেন। বর্তমানে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের স্বীকৃত শিল্পী হিসেবে মাসিক ১ হাজার টাকা ভাতা পান। ওই ভাতা আর বাউল গান করেই চলে তাঁর সংসার। স্ত্রী রাখি হাজরা আর দুই ছেলে শচীন ও রাজীবকে নিয়ে চার সদস্যের সংসার ওই লোকশিল্পীর। নিজের পড়াশোনা বেশিদূর না এগোলেও দুই ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করতে চান তিনি। বড় ছেলে শচীন বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আর রাজীব এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে।
এ বারে পঞ্চায়েত ভোটে মানিকবাবুকে চণ্ডীদাস-নানুর পঞ্চায়েতের প্রার্থী করেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার ব্লক অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েই তিনি নিজের গ্রামে গান গেয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ গানই তাঁরই লেখা। সুরও বসিয়েছেন তিনি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক দিক তুলে ধরেছেন ওই সব গানে। এ দিন ওই সব গান শুনতেই তাঁকে ঘিরে ভিড় জমে যায়। অসিত হাজরা, প্রতিমা হাজরা, সুবর্ণা হাজরাদের কথায়, ‘‘এ বারের ভোটে বাউল গান আমাদের উপরি পাওনা হল। যখনই ফাঁক পাব মানিকের গান শুনে যাব।’’
কার্যত এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চান মানিকবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ গান বেশি পচ্ছন্দ করেন গান। গানের কথা মনে গেঁথে যায়। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা আমি গানের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই।’’ এই কথা বলতে বলতেই ফের গুনগুনিয়ে ওঠেন তিনি, “শোন শোন ভাই একটা কথা বলে যায়/ কন্যাশ্রী আর সবুজ সাথীর তুলনা এ জগতে নাই/ তাই তো বলি ছেলেমেয়েরে স্কুলেতে পাঠাও/ হেলাফেলা করো নাকো, সবারে মানুষ হতে দাও।’’
স্বামীর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেমন চোখে দেখছেন রাখি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘একজন শিল্পী হিসেবে তাঁকে প্রার্থী করায় খুব ভাল লাগছে। বাউল গানের শিল্পীদেরও যে সম্মান আছে, এই প্রথম অনুভব করলাম।’’
কেন শিল্পীকে বাছাই?
তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের দলের নীতিই হল নির্বাচনে শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী-সহ নানা স্তরের মানুষকে সামিল করা। আগের নির্বাচনেও তাই করা হয়েছে। সেই নীতি মেনেই ওই বাউল শিল্পীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy