Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

জেদাজেদিতে হঠাৎ বাস বন্ধ, নাকাল বাঁকুড়া

তৃণমূলের শ্রমিক নেত্রীর সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে মারধর করার অভিযোগ তুলে বাঁকুড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় শুক্রবার হঠাৎ বাস বন্ধ করে দিলেন বাসকর্মীরা। এর জেরে তীব্র দাবদাহের মধ্যে দিনভর নাকাল হলেন যাত্রীরা। হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি বাসে ও অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ট্রেকারে বাদুড়ঝোলা অবস্থায় তাঁরা যাতায়াত করলেন।

চলছে না বাস। কড়া রোদের মধ্যেই ভাড়া গাড়ির অপেক্ষায় যাত্রীরা। বাঁকুড়ার বাসস্ট্যান্ডে। —নিজস্ব চিত্র

চলছে না বাস। কড়া রোদের মধ্যেই ভাড়া গাড়ির অপেক্ষায় যাত্রীরা। বাঁকুড়ার বাসস্ট্যান্ডে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০০:২৫
Share: Save:

তৃণমূলের শ্রমিক নেত্রীর সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে মারধর করার অভিযোগ তুলে বাঁকুড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় শুক্রবার হঠাৎ বাস বন্ধ করে দিলেন বাসকর্মীরা। এর জেরে তীব্র দাবদাহের মধ্যে দিনভর নাকাল হলেন যাত্রীরা। হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি বাসে ও অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ট্রেকারে বাদুড়ঝোলা অবস্থায় তাঁরা যাতায়াত করলেন। এই পরিস্থিতিতে কয়েকটি অতিরিক্ত সরকারি বাস চালানো ছাড়া এই কর্মবিরতি তুলতে বাসকর্মীদের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসতে দেখা গেল না জেলা প্রশাসনকে। ফলে কবে এই কর্মবিরতি উঠে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যাত্রী সাধারণের মধ্যে। বাঁকুড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) পি ডি ভুটিয়া বলেন, “টাটা-দুর্গাপুর দু’টি বাসেরই বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার প্রয়োজনীয় অনুমতি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কারও নিষেধ করার কিছু নেই।” তা হলে কর্মবিরতি তুলতে কেন বাসকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসল না জেলা প্রশাসন? এ বিষয়ে আরটিও বলেন, “এই কর্মবিরতি নিয়ে আগাম কিছুই জানানো হয়নি। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

টাটা-দুর্গাপুর রুটের দু’টি বেসরকারি বাসকে কেন্দ্র করে গোলমালের সূত্রপাত। আগে ওই দু’টি বাস বাইপাস হয়ে বেরিয়ে যেত। বুধবার থেকে বাস দু’টি বাঁকুড়া বাসস্ট্যান্ডে ঢুকতে শুরু করলে আপত্তি তোলেন বাসমালিক সমিতি ও বাসকর্মীদের একাংশ। অভিযোগ, সেই আপত্তিকে উপেক্ষা করে তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা বাস ওয়ার্কাস ইউনিয়নের জেলা সভাপতি অলকা সেন মজুমদার বাসগুলি বাসস্ট্যান্ডে ঢোকানোর ব্যবস্থা করেন। এতে বাধা দিতে গেলে অলকাদেবীর লোকজন বাসকর্মীদের উপর চড়াও হয় বলেও অভিযোগ। এই ঘটনার প্রতিবাদে আগাম কিছু না জানিয়েই শুক্রবার সকাল থেকে বাঁকুড়া বাসস্ট্যান্ডে কর্মবিরতি শুরু করেন বাসকর্মীরা।

বাঁকুড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলার কোনও রুটেই এ দিন বাস চলেনি। যদিও বিষ্ণুপুর ও খাতড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঁকুড়া ছাড়া অন্য রুটের বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু জেলা সদরের সঙ্গে জেলার অন্যান্য অংশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় হয়রান হলেন যাত্রীরা। তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। তালড্যাংরার মহুলবেড়িয়া গ্রাম থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ট্রেকারে চেপে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন সত্তর বছরের অজিত রায়। ফেরার পথে প্রচণ্ড হয়রান হতে হয় তাঁকে। বাঁকুড়া বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “আড়াই ঘণ্টা ঠায় রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এত বাস, কিন্তু কর্মীরা চালাতে চাইছেন না। কী ভাবে বাড়ি ফিরব জানি না।’’ একই সমস্যায় পড়েন মানকানালীর যুবক সুশান্ত রানা। তিনিও বাঁকুড়ার বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় ছিলেন। ছাতনার পাহাড়পুর থেকে ছেলেপুলেদের নিয়ে বান্দোয়ানে আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন লক্ষ্মীমণি মান্ডি। তিনি বলেন, “জানতামই না আজ বাস ধর্মঘট। ট্রেকারে বাঁকুড়ায় এসে শুনি বাস বন্ধ। এখন না পারছি বাড়ি ফিরতে, না বান্দোয়ান যেতে।”

যাত্রীদের এই হয়রানির জন্য তৃণমূলের তরফে দায়ী করা হচ্ছে বাসমালিক সমিতিকে। যদিও বাসমালিক সমিতির জেলা সম্পাদক দীপক শুকুলের দাবি, “এই কর্মবিরতির সঙ্গে বাসমালিকরা যুক্ত নয়। দু’টি বাসকে স্ট্যান্ডে ঢোকানোর প্রতিবাদ করায় কিছুদিন আগে অলকাদেবীর গুন্ডারা বাসকর্মীদের মারধর করে। তার প্রতিবাদেই বাসকর্মীরা কর্মবিরতি করেন। বাসমালিক সমিতি ধর্মঘট ডাকলে গোটা জেলাতেই বাস বন্ধ থাকত।” বাঁকুড়ার জেলা সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা কো চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, “আমরা আলোচনা করেই ওই দু’টি বাস গোবিন্দনগর স্ট্যান্ডে ঢোকার অনুমতি দিয়েছি।” অলকাদেবী বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ফাঁদা হচ্ছে। ব্যবসা মার খাবে বলে ছাড়পত্র থাকা সত্ত্বেও দু’টি বাসকে ওরা স্ট্যান্ডে ঢুকতে দিতে চাইছিল না। কর্মীদের দিয়ে বাসমালিকরাই এই ধর্মঘট করিয়েছে।”

যাত্রীদের অভিযোগ, তৃণমূলের বাস শ্রমিক সংগঠন এবং বাসমালিক সমিতি-বাসকর্মীদের জেদাজেদির জেরে এ দিন জেলার অধিকাংশ এলাকায় বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ থাকল। অন্য দিকে প্রশাসনও হাত গুটিয়ে থাকল। তবে বাঁকুড়ার জেলা সভাধিপতির দাবি, “২০টি অতিরিক্ত সরকারি বাস চালানো হয়েছে। যাত্রীদের অসুবিধায় পড়তে হয়নি।”

অন্য বিষয়গুলি:

bus strike bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy