শান্তিনিকেতনের পশ্চিম গুরুপল্লিতে চুরির পরে।—নিজস্ব চিত্র
ভাড়াটের ঘরের ভিতর দিয়ে ঢুকে বাড়িওয়ালার আলমারি খুলে কয়েক লক্ষ টাকার গয়না-সহ নানা জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে পালাল দুষ্কৃতীরা। শুধু তাই নয়, ফ্রিজ খুলে মিষ্টিও খেয়ে গেল তারা। ভোরের দিকে ঘুম ভাঙলে সব দেখে গৃহকর্তার চক্ষু চড়কগাছ! সোমবার গভীররাতে এই চুরির ঘটনাটি ঘটে শান্তিনিকেতনের পশ্চিম গুরুপল্লি এলাকায়। ঘটনার কথা লিখিত ভাবে স্থানীয় থানায় জানিয়েছেন বাড়ির কর্তা। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনা হল, শান্তিনিকেতনে চুরির ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। পুলিশও প্রতিবার চুরির পরেই নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। কিন্তু তাতে যে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কমেনি, সোমবার রাতে গুরুপল্লির ওই ঘটনা ফের তা সামনে এনে দিল। প্রতিবেশীর এহেন সর্বস্ব লুঠ হওয়ার ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ বেড়েছে এলাকায়। এলাকার জনজীবন এবং সম্পত্তির নিরাপত্তার দাবিতে জেলা পুলিশসুপারকে গণস্বাক্ষরিত চিঠি দিচ্ছেন বাসিন্দারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতীর পাঠ ভবনের কর্মী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বিশ্বভারতীর আবাসন ছেড়ে সম্প্রতি পশ্চিম গুরুপল্লি এলাকায় নিজের তিনতলার বাড়িতে উঠে যান। নীচেরতলায় ভাড়া দিয়ে নিজেরা উপরে দু’টি তলায় বাস করেন। সোমবার অবশ্য তাঁদের ভাড়াটে ওই বাড়িতে ছিলেন না।
এ দিন রবীন্দ্রনাথবাবুর স্ত্রী প্রভাতিদেবী বলেন, ‘‘আবাসন ছেড়ে নিজেদের বাড়িতে আসায় সমস্ত গয়না ও নগদ টাকা এবং থালা-বাসন বাড়িতেই রাখাছিল। কিন্তু চোরেরা যে এসে সর্বস্ব লুঠ করে নিয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।’’ তিনি জানান, দোতলায় স্বামী রবীন্দ্রনাথবাবু এবং তাঁদের স্নাতক স্তরের পড়ুয়া ছেলে সোমনাথ থাকতেন। তিনতলায় ছেলের পড়ার ঘর। সোমবার তাঁরা অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলেন। আনুমানিক রাত একটার পর তাঁরা শুতে যান। প্রভাতিদেবী ও তাঁর স্বামী একটি ঘরে ঘুমাতে যান। ছেলে তিনতলায় পড়ার ঘরে যান। এরপরেই কোনও একসময়ে বাড়িতে চোর ঢোকে বলে তাঁদের দাবি।
তাঁরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ প্রভাতিদেবীর ঘুম ভাঙে। তিনি দেখেন দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। অথচ তাঁরা দরজা খুলেই ঘুমাতে গিয়েছিলেন। ভিতর থেকে ছেলেকে ডাকাডাকি করেও সাড়া পাননি তাঁরা। এরপরে ওই দম্পতি দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে কোনওরকমে ভিতর থেকে খোলেন। রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, ‘‘চোরেরা বোধহয় শিকল তুলে দিয়েছিল। তিনতলায় ওঠার সিঁড়িতে দেখি ছেলের মানিব্যাগ পড়ে রয়েছে। ছেলে তিনতলার ঘরে ঘুমাচ্ছিল। সেই ঘরের দরজাও বাইরে থেকে আটকানো ছিল।’’ এরপরে তাঁরা দোতলায় ছেলের ঘরে যান। সেখানেই আলমারিতে দামি জিনিসপত্র রাখা ছিল বলে দম্পতির দাবি।
রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, ‘‘ঘরে পা দিয়ে দেখি আলমারি খোলা। সমস্ত জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।’’ প্রভাতিদেবীর দাবি, তাঁর আলমারি থেকে ২৫ ভরি সোনার গয়না, কাঁসা-পিতলের বাসন, নগদ ২৫ হাজার টাকা ও একটি সাইকেল, তিনটি মোবাইল নিয়ে পালিয়েছে চোরেরা। তাঁর ছেলে বলেন, ‘‘বিছানায় পড়তে বসেছিলাম। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েথি হুঁশ নেই।’’ ঘোষ পরিবারের অনুমান, দুষ্কৃতীরা সম্ভবত নেশার গ্যাস ছড়িয়ে লুঠপাট চালায়।
কিন্তু দুষ্কৃতীরা ওই বাড়িতে ঢুকল কী করে? ঘোষ পরিবারের দাবি, ভাড়াটেরা না থাকার সুযোগে ওদের দরজার তালা ভেঙে সেই ঘরে দুষ্কৃতীরা প্রথমে ঢোকে। ভাড়াটের আলমারির জিনিসপত্রও মেঝেতে পড়ে রয়েছে। তাঁরও কিছু জিনিস খোয়া গিয়েছে বলে অনুমান। তিনি না আসা পর্যন্ত কিছু খোয়া গিয়েছে কি না, তা নিয়ে পুলিশও ধন্দে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাড়াটের ঘর থেকে বাড়ি মালিকের দোতলায় ওঠার মুখে কোনও দরজা নেই। ফলে বিনা বাধাতেই দোতলায় উঠে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
শনিবার গৃহকর্তা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। এ দিকে শান্তিনিকেতনের পশ্চিম গুরুপল্লির ঘোষ বাড়িতে চুরির ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় ক্ষোভ বাড়ে বাসিন্দাদের মধ্যে। ঘোষ পরিবারের পড়শি রাজ্য সরকারের অর্থ বিভাগের আধিকারিক হারাধন সাহা ও তাঁর স্ত্রী রীতা সাহা বলেন, ‘‘রাত দেড়টা নাগাদ বাড়ির গ্রিলের দরজায় শব্দ পেয়ে আমরা আলো জ্বালিয়েছিলাম। সকালে জানতে পারি ঘোষবাড়িতে চুরি হয়েছে। মনে হয় চোরেরা আমাদের বাড়িতেও চুরির মতলবে ছিল।’’
ওই পাড়ার বাসিন্দা সুদীপ্ত মণ্ডল, সুদীপ্ত পাল, সুজাতা দত্ত প্রমুখেরা জানান, লোকজন না থাকার সুযোগে আগে এই পাড়ায় চুরি হয়েছে। কিন্তু সবাই বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও সেই বাড়িতে চুরির ঘটনা আগে ঘটেনি।’’ তাঁদের আশঙ্কা, কোনও কারণে ওই পরিবারের লোকেরা জেগে গেলে তাহলে বোধহয় প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটে যেতে পারত। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকার নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশসুপারের কাছে গণস্বাক্ষরিত চিঠি দেবেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy