ভাঙচুর করা হয়েছে মদের ঠেক। নিজস্ব চিত্র।
এক কিশোরীর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রবিবার সকালে উত্তাল হয়ে উঠল জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া মণ্ডলঘাটে এলাকা। রবিবার ভোরে বাড়ি থেকেই ১৩ বছরের এক কিশোরীর দেহ উদ্ধার হয়। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন সকালে রেল লাইনের ওপারে একটি কুয়ো থেকে জল এনে বাড়িতে ফিরে বুকে ব্যাথার কথা জানায় কিশোরীটি। এরপরে ঘরে গিয়ে শুয়েও পড়ে সে। কিশোরীর দাদা এবং ভাই এলাকারই এক ওষুধের দোকানের মালিককে ডেকে আনেন। ওই ব্যক্তি কিশোরীর নাড়ি দেখে মৃত্যুর কথা জানান বলে জানা গিয়েছে। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভ তৈরি হয়। কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য রয়েছে বলে তারা দাবি করতে থাকেন।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় অনেক মদের ঠেক চলে। সন্ধ্যের পর থেকে নেশাগ্রস্তদের দৌরাত্ম্যে মহিলারা আতঙ্কে বের হতে চান না বলে দাবি। কিশোরীর রহস্যজনক মৃত্যু রহস্যের কিনারার দাবিতে এলাকার বেশ কয়েকটি মদের ঠেকে ভাঙচুরও চালানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গেলে পুলিশের গাড়ি ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা।
এ দিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা পুলিশের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখানো হয়। কিশোরীর মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত করা এবং এলাকায় মদের ঠেক রুখতে অভিযানের আশ্বাস দিলে বাসিন্দারা ঘেরাও বিক্ষোভ তুলে নেন। ময়নাতদন্তের পর রবিবার সন্ধ্যায় কিশোরীর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য পুলিশের কাছে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করেছেন। জলপাইগুড়ির ডিএসপি প্রভাত চক্রবর্তী এ দিন সকালেই মণ্ডলঘাটে যান। তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে কিশোরীর দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অসুস্থতার কারণ নাকি অন্য কোনও কারণে কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে।”
পুলিশ এবং বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত শনিবার মেয়েটির বাবা-মা ডুয়ার্সের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। দাদা এবং ভাইয়ের সঙ্গে কিশোরী বাড়িতে ছিল। কিশোরীর ভাই জানিয়েছে, প্রতিদিনের মতো এ দিনও ভোরে উঠে কিশোরী রেল লাইন পার হয়ে একটি কুয়োয় জল আনতে যায়। ফিরে এসে দাদা এবং ভাইকে বুকে ব্যাথার কথা জানায়। ব্যাথ্যার কথা জানিয়ে ফের নিজের ঘরে কিশোরী শুতে চলে যায় বলে পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে। এরপরে সকাল ৮টার সময়েও কিশোরীকে ঘুম থেকে উঠতে না দেখে স্থানীয় একজন ওষুধের দোকানের মালিক পরিতোষ তন্ত্রকে ডেকে আনে কিশোরীর ভাই। তিনি বলেন, “আমি গিয়ে কিশোরীর নাড়ির স্পন্দন না পেয়ে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেই।”
মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন বাবা-মা ফিরে আসেন। পেশায় দিনমজুর কিশোরীর বাবা বলেন, “কী ঘটেছে বলতে পারবো না। এলাকার বাসিন্দারা কী সন্দেহ করছেন, তা ভাল করে জেনে বুঝে অভিযোগ দায়ের করব।” নন্দনপুর বোয়ালমাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গৌতম তন্ত্র রবিবার অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানিয়েছি। এ দিন কিশোরীর মৃত্যুর খবর চাউর হয়ে যেতেই বাসিন্দাদের একাংশ মণ্ডলঘাট স্টেশন এবং চৌরঙ্গি এলাকার ৮টি দোকানে ভাঙচুর চালান। অভিযোগ, ওই দোকানগুলিতে নিয়মিত মদের আসর বসত।
মণ্ডলঘাটের সিপিএম নেতা পুলিন ঘোষ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুশীল মল্লিক দু’জনেই বলেন, “মণ্ডলঘাটে বেআইনি মদ বিক্রির কারবার রমরমিয়ে চলছে। দিনভর জুয়ার ঠেক চলে। পুলিশ এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় কিশোরীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জনরোষ ঘটেছে। মৃত্যু রহস্যের উদ্ঘাটন করতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy