ভাস্বরিতা ধর।
চার বছর আগের বৃষ্টিভেজা সেই দিনটার কথা ভাবলে এখনও শিউরে ওঠে আলিপুরদুয়ার শহরের মধ্যপাড়ার ধর পরিবার৷ ভাস্বরিতা ধর। তখন সে নিউটাউন গার্লস হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী৷ মিলন সংঘ মোড়ের কাছে বক্সা-ফিডার রোড থেকে স্কুলের গলিতে ঢোকার মুখে একটা গাড়ি তার রিকশার পিছনে ধাক্কা মারে৷ পড়ে গিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম হয় ভাস্বরিতা। চিকিৎসার পর পাঁচমাস বাড়িতে শয্যাশায়ী থেকে সুস্থ হয় সে।
ভাস্বরিতার বাবা ভজনের কথায়, “আমার মেয়ের ওই দুর্ঘটনার পর স্কুলের মোড়ে ট্র্যাফিকের ব্যবস্থা হয়েছে৷ কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই রাস্তায় গাড়ি, মোটরবাইকের সংখ্যা বাড়ছে৷ অনেক সময় অনেকেই মারাত্মক বেপরোয়া হয়ে পড়েন। ফলে খুব ভয় হয়৷” ভাস্বরিতার কথায়, “রাস্তায় এখন বেপরোয়া বাইক দেখলেই ভয় পেয়ে যাই।” বাবা-মেয়ের কথাতেই পরিষ্কার, এখনও আলিপুরদুয়ারের রাস্তা নিরাপদ নয়। শনিবারও শহর ঘুরে মিলল সেই প্রমাণ।
এ দিন একটু আগেই ছুটি হয়েছে স্কুল৷ ফলে বক্সা-ফিডার রোডের ধারে ম্যাক উইলিয়াম স্কুল থেকে অনেক ছাত্রই বেরিয়ে এসেছে৷ অনেকে আবার দল বেঁধে বের হচ্ছে৷ অনেক অভিভাবক স্কুলের সামনে পৌছে গিয়েছেন৷ কিন্তু কোথায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবেন সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। কারণ, এই রাস্তা সংলগ্ন এলাকা অনেক আগে থেকেই ফুচকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পসরায় সাজানো ভ্যান গাড়ির দখলে৷ কোথাও ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে একের পর এক টোটো৷ তার মাঝেই ঠাসাঠাসি করে রাখা বাইক ও স্কুটি। কিন্তু কারও কিছু বলার নেই।
বক্সা ফিডার রোডের ধারে আরও বেশ কয়েকটা স্কুল রয়েছে৷ ফলে স্কুলে যেতে ওই রাস্তাটি ব্যাবহার করতেই হয়৷ অথচ, স্কুল শুরু বা ছুটির সময়েও এই রাস্তায় বেপরোয়া বাইকের দৌরাত্ম্য চলে। বক্সা ফিডার রোড সংলগ্ন একটি গলি পথে অবস্থিত নিউ টাউন গার্লস হাইস্কুল৷ প্রতিদিন স্কুল ছুটির সময় মিলন সঙ্ঘ মোড়ের কাছে যান নিয়ন্ত্রণ করেন দুই সিভিক ভলান্টিয়ার৷ কিন্তু অভিযোগ, তা সত্ত্বেও ওই রাস্তায় পূর্ণ মাত্রায় দাপাদাপি চলে বেপরোয়া বাইক কিংবা গাড়িচালকদের৷
আলিপুরদুয়ার জেলায় এই মুহূর্তে ৫৪টি হাইস্কুল ও আটটি স্কুল গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাস্ততম রাস্তার ধারে অবস্থিত৷ ৮৪০টি প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে দু’শোর বেশি স্কুল রয়েছে রাস্তার পাশে৷ এই সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এমনিতেই যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রিত করা হয়। যদিও জেলা পুলিশ জানিয়েছে, স্কুলের সময়ে বাড়তি নজরদারি চালানো হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা পুরো উল্টো।
এক স্কুল পড়ুয়ার অভিভাবক শ্যামল দে বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা সব দেখছে। জানছে। সত্যিই তো, রাস্তা দিয়ে যে ভাবে যানবাহন চলে, তাতে আমাদের ছেলেমেয়েদের কোনও নিরাপত্তাই নেই৷ মেয়েরা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত চিন্তায় থাকি৷’’ আরেক অভিভাবক প্রীতমা চৌধুরীর কথায়, ‘‘মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়াশোনা করে৷ রাস্তায় যে ভাবে গাড়ি চলে, তাতে করে কোনও দিনই ওকে একা স্কুলে ছাড়তে পারব বলে মনে হয় না৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy