কুকুর তাড়াতে হয় খাবারের থালা হাতেই। ছবি: অমিত মোহান্ত।
ভরদুপুরে ভাতের থালা হাতে আর ছোটাছুটি করতে পারছে না দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের বালাপুর হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। কখনও বৃষ্টি, কখনও কুকুরের তাণ্ডবে মিড ডে মিল আতঙ্কের হয়ে উঠেছে এই স্কুলে।
এমনিতেই খোলা আকাশের নীচে নোংরা মাঠে বসে কষ্ট করে দিনের পর দিন মিড ডে মিলের খাবার খেতে হয়। বৃষ্টি হলে মাঠ ভরে জল-কাদায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।
স্কুলটির শৌচাগারের অবস্থাও তথৈবচ। জেলা জুড়ে চলছে নির্মল বিদ্যালয় অভিযান। তার কোনও প্রভাব এই স্কুলের শৌচাগারে পড়েছে বলে মনে হয় না। ওই অবস্থা নিয়ে অভিভাবকেরা দীর্ঘ দিন ধরেই সরব। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের প্রতিনিধি স্কুল পরিদর্শন করে হাল ফেরাতে নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অতনু চৌধুরীর অবশ্য দাবি, ‘‘তহবিল নেই, বরাদ্দও নেই। তাই মিড ডে-র শেড তৈরি করা যায়নি।’’ তবে বৃষ্টি এলে স্কুলের সাইকেল স্ট্যান্ডে ছাত্রছাত্রীদের খাওয়ানো হয় বলে অতনুবাবুর দাবি।
বালুরঘাট-তপন রাজ্য সড়কের ধারে পাকা দোতালা বালাপুর হাইস্কুলটির মূল ভবন। তার থেকে আলাদা, পিছনের দিকে ঝোপঝাড়ের আড়ালে রয়েছে মিড ডে মিলের রান্নাঘর। সরু এবড়ো-খেবড়ো কাঁচা রাস্তা ধরে রান্নাঘরে পৌঁছনো গেলেও ওই চত্বরে বসে নিশ্চিন্তে মিড ডে খাওয়ার কোনও উপায় নেই। গোটা রান্নাঘর চত্বরের কাঁচা উঠোনটি জলকাদায় ভরা। অগত্যা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৬৪৪ জন ছাত্রছাত্রীকে লাগোয়া মাঠে থালা নিয়ে বসতে হয়। আর তখনই শুরু হয়ে যায় কুকুরের অত্যাচার। সারমেয় দলের আস্ফালনে ভয় পেয়ে ছুটতে গিয়ে মাটিতে খাবার পড়ে খাওয়াটাই সেদিনের মতো পণ্ড হয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীদের কথায়, ‘‘বৃষ্টি এলে ভাতের থালা ফেলে ছুটি। মাটিতে পড়ে ব্যথাও পেয়েছে নিচু ক্লাশের কয়েকজন পড়ুয়া।’’ স্কুলটিতে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১,২৭৪ জন।
মিড ডে-র রান্নার কাজে যুক্ত স্বনির্ভর দলের মহিলাদের বক্তব্য, ‘‘খাবারের জায়গায় ছাউনি তৈরির দাবি জানিয়ে জানিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছি।’’ তাঁদের অভিযোগ, পরিবেশনের জন্য বড় হাতা নেই। ডাল, সব্জি ঢেকে রাখার পাত্র নেই। নলকূপটি থেকে ঠিকঠাক জল পড়ে না। প্রধানশিক্ষক সবই জানেন। কিছুই হয় না। স্কুলটিতে আজ পর্যন্ত মিড ডে-র মেনুতে কোনওদিন মাংস হয়নি বলে পড়ুয়াদের অভিযোগ। তাদের কথায়, মাসে দু’দিন ডিম। বাকি দিনগুলিতে সব্জি ভাত কিংবা ডাল ভাত। অথচ হাইস্কুলগুলিতে মিড ডে রান্নার জন্য পড়ুয়া পিছু ৬ টাকা ১৮ পয়সা বরাদ্দ। প্রাথমিকের ক্ষেত্রে ৪ টাকা ১৩ পয়সা। অর্থাৎ বালাপুর হাইস্কুলটিতে মিড ডে-র আওতাভুক্ত ওই ৬৪৪ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য খাবার বাবদ রোজ প্রায় ৩৭০০ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা। স্কুলের কিছু শিক্ষকের অভিযোগ, প্রধানশিক্ষক নিজের হাতেই মিড ডে-র বাজার ও কেনাকাটা করেন। পড়ুয়ারা ঠিকঠাক খাবার পাচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব তিনি কয়েকজন শিক্ষককে দিয়েছেন।
এ দিন, দুপুর দেড়টার সময় গিয়ে দেখা গেল, এক শিক্ষক ওই মাঠের এক দিকে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে কুকুর তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কুকুরের দল অন্য দিক থেকে ছুটে আসছে। ছাত্রীরা পড়িমড়ি করে উঠে ছুটছে। থালার সব্জিভাত তখন মাটিতে গড়াগড়ি।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, শৌচাগারে গাছের পাতা নোংরায় ভরে দুর্গন্ধ ছড়ালেও নিয়মিত সাফ করা হয় না। ওই বাথরুমের পাশে তারা দুর্গন্ধে ক্লাশ করতে পারে না। অতনুবাবু বলেন, ‘‘১০ দিন ধরে পরীক্ষা চলছে বলে শৌচাগার পরিষ্কার করা যায়নি।’’ শনিবার করে শৌচাগার সাফ করা হয় বলে তাঁর দাবি। তপনের বিডিও সিদ্ধার্থ সুব্বা বলেন, ‘‘বালাপুর হাইস্কুলের মিড ডে পরিচালনা নিয়ে অব্যবস্থা ও অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy