Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ভাবমূর্তি রক্ষাতেই অতিসক্রিয় পুলিশ

প্রতি পদে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তাড়া করছে পুলিশকে। তারই মধ্যে ‘ভাবমূর্তি’ ঠিক রাখতে মরিয়া যেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট। রবিবার মাঝরাত থেকে সোমবার ভোরের মধ্যে তা-ই বোঝানোর চেষ্টা করলেন পুলিশের কর্তারা। মাঝ রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে অবশেষে গ্রেফতার করা হল ২৮৮ জনকে।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪০
Share: Save:

প্রতি পদে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তাড়া করছে পুলিশকে। তারই মধ্যে ‘ভাবমূর্তি’ ঠিক রাখতে মরিয়া যেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট। রবিবার মাঝরাত থেকে সোমবার ভোরের মধ্যে তা-ই বোঝানোর চেষ্টা করলেন পুলিশের কর্তারা। মাঝ রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে অবশেষে গ্রেফতার করা হল ২৮৮ জনকে। এতদিন নাকি তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না! রাতারাতি ফেরার অভিযুক্তদের খোঁজ মিলল। যা শোনার পরে বিরোধী দলের নেতাদের মন্তব্য, পুলিশ চাপে পড়লে অনেক কিছুই খুঁজে পায়। যদিও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার দাবি, ‘‘নিয়মিত তল্লাশি চলছে। উপরন্তু, ভোটের প্রাক্কালে পুলিশকে বাড়তি সক্রিয় হওযার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে ফেরাররা ধরা পড়েছে।’’

সোমবার শিলিগুড়িতে প্রায় দিনভর প্রচার করেছেন কংগ্রেসের প্রদেশ নেতা মানস ভুঁইয়া। ছিলেন বিজেপির সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীরাও। তাঁরা যে ঘটনাকে ‘লোক দেখানো’ বলেই মন্তব্য করেছেন। মানসবাবু বলেছেন, ‘‘যতজন ধরা পড়েছে, তার বাইরের দ্বিগুণ বাইরে দাদাগিরি করার চেষ্টা করে চলেছে। তাঁদের কবে ধরা হবে কে জানে!’’ বিজেপির তরফে দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসুর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশে পুলিশ যে চলছে তা বোঝাই যায়। ভোটের দিন দাদাগিরি, হুমকি না হলেই বোঝা যাবে পুলিশ নিরপেক্ষ।’’

তৃণমূলের তরফে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য গোড়া তেকেই দাবি করে্ছেন, শিলিগুড়িতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়ে থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘এ সব গোলমালের কথা ভিত্তিহীন। আমরা আশাবাদী নির্বিঘ্নেই ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।’’

বস্তুত, কলকাতা পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগে বিরোধী দলগুলি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে কলকাতা পুলিশকে। ভোটের আগে থেকেই পুলিশের বিরুদ্দে পত্রপাতিত্বের একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। নানা অভিযোগে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল পুলিশকর্তাদের। এমনকী কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নালিশ জানাতে রাজপালের দ্বারস্থ হওয়ারও কথা জানিয়েছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তি-ক্ষোভ এড়াতে ভোট নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা অভিযান শুরু করে শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়েথছে বলে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের একাংশ কর্তাদের দাবি। রবিবারের ২৪ ঘণ্টায় কমিশনারেটের বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে ২৮৮ জনকে ধরেছে পুলিশ।

উত্তরবঙ্গের একমাত্র পুলিশ কমিশনারেট শিলিগুড়ি। সে কথা মাথায় রেখে পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা রবিবার সকালেই কড়া বার্তা দেন থানাগুলিকে। ২৪ ঘণ্টায় কমিশনারেটের বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে ২৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট মামলায় ১৬ জন, আগাম সতর্কতা হিসাবে ২০২ এবং সমন জারি থাকা ৭০ জনকে ধরা হয়েছে। ধৃতদের কয়েকজনের হেফাজত থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, প্রচুর মদ, গাঁজা এবং নেশার ট্যাবলেটও উদ্ধার হয়েছে। ৬৬০ জনের বিরুদ্ধে পরিবহণ আইনে মামলা করে প্রায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ফাইন আদায় করা হয়েছে। ভক্তিনগর এবং শিলিগুড়ি থানা এলাকায় মামলা বেশি হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রবিবার গভীর রাত অবধি অভিযান হয়েছে। আবার হবে। সিনিয়র পুলিশ অফিসারেরা রাতে বাইরে থেকে তদারকি করছেন। আমরা সুষ্ঠুভাবে ভোটপর্ব মেটাতে বদ্ধপরিকর।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতার ঘটনা যাতে কোনওভাবেই পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, পুলিশের উপস্থিতি বা সক্রিয়তা মানুষ দেখতে পারেন তা চাইছেন পুলিশের একটি বড় অংশ। তবে পুলিশের উপর অবশ্য চাপ বজায় রাখতে চাইছে বিরোধী দলগুলি। আজ মঙ্গলবার, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর দাবিতে কমিশনারেটে স্মারকলিপি দেবে বামেরা।

শেষ পর্যন্ত ভোটের দিন সব কিছু নিরপেক্ষ থাকে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয় বিরোধীদের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy