জলপাইগুড়ি শহরের একটি এটিএমে লাইন।—সন্দীপ পাল
নতুন বছরেও সেই পুরানো ভোগান্তি চলছেই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গ্রামাঞ্চলে নোট সরবরাহ স্বাভাবিক করতে বাড়তি টাকা পাঠানোর নির্দেশ দিলেও উত্তরের বহু গ্রামের ব্যাঙ্কে আকাল চলছে। কোথাও ২ হাজার টাকা, কোথাও ১ হাজার এমনকী, ৫০০ টাকাও দেওয়া হচ্ছে। অনেক এটিএমেও সকাল ১০টার মধ্যেই টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে। দিনভর ‘নো ক্যাশ’ বোর্ড ঝুলছে বহু এটিএমে।
টাকার দেখা নেই
কোচবিহারের নাজিরহাটে একটি আঞ্চলিক ব্যাঙ্কের শাখা থেকে মঙ্গলবার গ্রাহকদের কোনও টাকা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে গ্রাহকরা সেখান থেকে ফিরে যান। গ্রামে কয়েকটি এটিএম চালু থাকলেও সেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা টাকা মেলে। যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক আব্দুর রউফ বলেন, “ব্যাঙ্ক থেকে একদিন টাকা দেওয়া হয়, আরেকদিন বন্ধ। আর এটিএমগুলি তো দীর্ঘদিন ধরে খারাপ।” সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়ারও একই অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, “সিতাইয়ের ব্যাঙ্কগুলি এখনও পাঁচশো, হাজার টাকার উপরে দিতে পারছে না।” ব্যাঙ্কের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, তারা যেমন টাকা পাচ্ছেন সেই হিসেবেই গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে।
একশো নেই
পাঁচশোর নোট মিললেও একশোর নোট খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না জলপাইগুড়ির বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকার ব্যাঙ্কগুলিতে৷ জলপাইগুড়ির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বলেন, জেলায় যে পরিমাণ টাকা আসছে, তার আশি শতাংশই দুই হাজার টাকার নোট৷ বাকি কুড়ি শতাংশের বেশিরভাগটা আবার পাঁচশো৷ একশোর নোট খুবই কম৷ ৫০ টাকার নোট কিছু আসছে৷ এর মধ্যে থেকেই যতটা সম্ভব গ্রামাঞ্চলের ব্যাঙ্কগুলিকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে ৷ এটিএমেও পাঁচশোর নোট বেশি দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ ৫০০, ১০০ টাকার নোটের অভাব চলছে উত্তর দিনাজপুরের গ্রামেও। মঙ্গলবার রায়গঞ্জের হেমতাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একটি এটিএমে হাজার টাকা তুলতে যান ঠাকুরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা গাড়ি চালক বাসুদেব চক্রবর্তী। ওই এটিএমে ১০০ ও ৫০০ টাকার নোট না থাকায় তিনিও ২০০০ টাকা তুলতে বাধ্য হন।
দু’হাজারে ১০ হাজার
২ জানুয়ারি থেকে ৩ বা ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা চার দিন কেবল বেতন, পেনশন দেওয়ার দিন ধার্য করে সাধারণ গ্রাহকদের লেনদেন বন্ধ করে রেখেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের অধিকাংশ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। তপন ব্লকে আবার এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে ৫ হাডার টাকা চাইলে দু’হাজার এবং পাঁচশোর দু’টি নোট দেওয়া হচ্ছে। একশোর নোট অমিল। সোমবার তপনে একটি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষকেরা তুমুল বিক্ষোভ দেখান। গঙ্গারামপুর এবং তপন ব্লকে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বেতন বাবদ শিক্ষকদের ১০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও তা সবই দু’হাজার টাকার নোটে। মালদহের গ্রামীণ এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত বা বেসরকারি ব্যাঙ্ক কোথাও ৫০০, ১০০ বা ৫০ টাকার নোট সে ভাবে মিলছে না। মিলছে দু’হাজারের নোট। কালিয়াচক, মানিকচক, গাজোল, হবিবপুর, বামনগোলা প্রভৃতি এলাকার ব্যাঙ্কগুলিতে সাধারণ গ্রাহকদের এখনও সর্বোচ্চ পাঁচ-ছ’হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দু’হাজার টাকার নোট দিয়েই গ্রাহকদের বিদায় দেওয়া হচ্ছে। জেলার গ্রামীণ এলাকার এটিএম বেশির ভাগই বন্ধ। যেগুলি চালু সেখানে দু’হাজার টাকার নোটই বেশি মিলছে।
ডাকঘরও তথৈবচ
মালবাজারে গ্রামীণ এলাকায় যেখানে ডাকঘরই সম্বল, সেখানে এখনও পর্যাপ্ত টাকা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। মালবাজার প্রধান ডাকঘরের অধীনে যেমন ২০টিরও বেশি গ্রামীণ ডাকঘর রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ডাকঘর প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে। সব ক্ষেত্রেই পাঁচশোর নোটের যোগান নেই। কোথাও ২ হাজার কোথাও ৩ হাজার টাকার বেশি টাকা তুলতেও পারছেন না গ্রাহকেরা। ডাকঘর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ব্যাঙ্ক থেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা আসছে না। কালিম্পঙের ফাগু, গৌরিবাসের মতো মালবাজার মহকুমার ক্যারণ, চালসা, লাটাগুড়ি সর্বত্রই এই চিত্র।
গ্রামীণ ব্যাঙ্কে সমস্যা
হরিশ্চন্দ্রপুরের চণ্ডীপুর বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক থেকে ১০ হাজার টাকা তুলেছিলেন শিক্ষিক সুজিত মণ্ডল। তাকে চারটে দু’হাজার ও চারটে পাঁচশো টাকার নোট দেওয়া হয়েছে। এক চাষি আব্দুল লতিফ দু’হাজার টাকা তুলতে এসে পেলেন একটিই দু’হাজার টাকার নোট। আবার চাঁচল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কেও এক গ্রাহককে ১০ হাজার টাকার মধ্যে চারটি দু’হাজারের নোট ও বাকি দু’হাজার টাকা দেওয়া হল একশো টাকার নোটে। গ্রামীণ এলাকায় গ্রাহকরা যে টাকা তুলবেন, তার ৪০ শতাংশ পাঁচশো তার কম টাকার নোট দিতে হবে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্দেশ দিলেও তা কতটা মানা সম্ভব তা নিয়ে সন্দিহান গ্রামীন ব্যাঙ্কের কর্তারা। স্টেট ব্যাঙ্কের চাঁচলের ম্যানেজার অনুপ রায় বলেন, ‘‘আমাদের আপাতত পাঁচশো ও একশো টাকার কোনও সমস্যা নেই।’’ তবে বঙ্গীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালদহের রিজিওনাল ম্যানেজার সব্যসাচী মজুমদার বলেন, ‘‘যেটুকু টাকা পাচ্ছি, তার অধিকাংশই দুহাজার টাকার নোট।’’
ছোট নোটের খোঁজ
আলিপুরদুয়ার জেলার গ্রামীণ এলাকার ব্যাঙ্কগুলিতেও ৫০০ ও ১০০ টাকার নোটের যোগান স্বাভাবিক নেই। গ্রামের একাধিক ব্যাঙ্কে গিয়ে কৃষক, বনবস্তির গ্রাহকরা বারেবারেই জানতে চাইছেন, ছোট নোট কবে আসবে। দু’হাজারের নোট গ্রামের দোকানে খুচরো পাওয়া মুশকিল। আলিপুরদুয়ারের লিড ডিস্ট্রিক ম্যানেজার তুষারকান্তি রায় জানান, নোটের যোগান এখনও স্বাভবিক হয়নি। রির্জাভ ব্যাঙ্ক নতুন নির্দেশ জারি করেছে গ্রামীণ এলাকায় ছোট নোটের যোগান দেওয়ার জন্য। রির্জাভ ব্যাঙ্ক থেকে নোটের যোগান এলে তা স্বাভাবিক হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy