প্রতীকী ছবি।
গ্যাসের ট্যাঙ্কারের চাকায় সদ্য পিষে গিয়েছে চল্লিশোর্ধ্ব এক মহিলার হাত ও পেট। রাস্তায় ছড়ানো রক্তের উপর বসে তাঁর ছিন্নভিন্ন দেহ বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে সাহায্যের আর্তি জানাচ্ছেন ভাই। তাঁদের সাহায্য তো দূর, কে কার আগে ওই মর্মান্তিক দৃশ্য মোবাইলে তুলে ফেসবুকে পোস্ট করবে তারই ব্যস্ততা চলল। সোমবার দুপুরে পথচারিদের এ হেন অমানবিক মুখ দেখল ধূপগুড়ি শহর।
ওইদিন দুপুর ১২টা নাগাদ নিজের মোটরবাইকে দিদি সনেকা মণ্ডলকে নিয়ে ধূপগুড়ি বাজারে আসছিলেন ঠাকুরপাটের বাসিন্দা বিশ্বনাথ রায়। আচমকা একটি গ্যাসের ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়েন ভাইবোন। গাড়ির চাকার তলে পিষে যান সনেকা। জখম হন ভাইও। দুর্ঘটনার পর প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে দিদির রক্তাক্ত দেহটি আগলে বসে থাকার পরও কারও সাহায্য না পেয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন বিশ্বনাথ। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় দুই দোকানদার। তাঁরাই ওই যুবকের চোখেমুখে জল দিয়ে খবর পাঠান দমকলে। ততক্ষণে অবশ্য মারা যান সনেকা।
কিন্তু প্রকাশ্য রাস্তার উপর এত বড় একটা দুর্ঘটনার পরেও কেউ আহতদের সাহায্যে এগিয়ে না আসায় হতবাক অনেকেই। তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে গিয়েছিলেন নেতাজিপাড়ার এক পান-দোকানি পিন্টু সাহা। মঙ্গলবার পিন্টু বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার আধঘণ্টা পর সেখানে গিয়ে দেখি ওই দু’জন আহতকে ঘিরে মানুষের জটলা। কাছেই সিভিক ভলেন্টিয়াররাও দাঁড়িয়ে। সেখান থেকে একশো মিটার দূরে দমকল অফিস। কিন্তু সকলেই চুপচাপ দেখছেন। কেউ কেউ ছবিও তুলছেন মোবাইলে। আমি এবং আরও একজন যুবক এগিয়ে যাই।’’
ধূপগুড়ির ট্র্যাফিক ওসি অসীম মজুমদার বলেন, ‘‘এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে স্থানীয়দের একটা বড় ভূমিকা থাকে। তবে ওই দু’জন অপরিচিত বলেই হয়তো প্রথমে কেউ এগোয়নি।’’ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মনোবিদ উত্তম মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা আজকাল কারও উপকার মনে রাখি না। ফলে বিপদে পড়লে সাহায্যও পাই না। অনেক সময় এ-ও দেখা যায়, যিনি সাহায্য করছেন, তিনিই আইনি ঝামেলায় পড়ছেন। এ জন্যেও অনেকে এগোতে চান না।’’
গত ২৫ জুলাই জলপাইগুড়ির রানিনগর স্টেশনে ট্রেন থেকে পড়ে হাত ও পা কাটা গিয়েছিল এক যাত্রীর। সেখানেও যন্ত্রণায় কাতর ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে দৃশ্যটি মোবাইলে বন্দি করতেই ব্যস্ত ছিলেন যাত্রীরা। মনোবিদেরা বলছেন, অনলাইন-নির্ভর সামাজিক যোগাযোগই আমাদের এ রকম অসামাজিক করে তুলেছে। পরিশ্রম করে কারও সাহায্য করার চেয়ে বিপদে পড়া কারও দু’টো ছবি বা ভিডিও মোবাইলে তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করাটা আমাদের কাছে এখন অনেক সহজ কাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy