Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

শ্রাবণ দিনে ফিরল গ্রীষ্ম

এ বার গোপেনবাবুর তিন বিঘা জমি এখন খাঁ খাঁ করছে। এবার জুন মাসের মাঝামাঝি সময়েই তিনি বীজতলা তৈরি করে ফেলেছেন এবং বৃষ্টি হলেই জমিতে সেই চারা রুইবেন বলে জমিও ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে রেখেছেন। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৮ ০৪:২৬
Share: Save:

ক্যালেন্ডারে শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহ। বাইরে তাকিয়ে তা বোঝার উপায় নেই। আকাশে আগুন ছড়াচ্ছে সূর্য। পথে লোকজন হাসফাঁস। কোনও কাজ থাকলে দ্রুত তা সেরে ঘরে ঢুকে ঘাম মুছতে মুছতে বলছেন সকলে, শ্রাবণে এত গরম! আগে তো দেখিনি।

পুরাতন মালদহের নারায়ণপুর লালদিঘির কৃষক গোপেন রাজবংশীর তিন বিঘা জমিতে গত বছর এই সময়ে আমন ধান দোলা দিচ্ছিল। ভাল বৃষ্টি হওয়ায় সেবার জুনের প্রথম সপ্তাহে বীজতলা তৈরি করে ওই মাসেরই শেষ দিকে সেই চারা জমিতে রুয়েছিলেন তিনি। বৃষ্টির জল পেয়ে প্রায় এক মাসেই সেই চারা তরতর করে বেড়ে উঠেছিল। এ বার গোপেনবাবুর তিন বিঘা জমি এখন খাঁ খাঁ করছে। এবার জুন মাসের মাঝামাঝি সময়েই তিনি বীজতলা তৈরি করে ফেলেছেন এবং বৃষ্টি হলেই জমিতে সেই চারা রুইবেন বলে জমিও ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে রেখেছেন। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই।

হবিবপুরের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের রতন দাস, সুকান্ত ঘোষ, বামনগোলার সগেন মার্ডি, উমেশ কিস্কু বা গাজোলের প্রণব সরকারদের মতো জেলার হাজার হাজার চাষি জমি তৈরি করে রেখেও বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধানের চারা রুইতে পারছেন না। জেলায় সেচের ব্যবস্থাও এখনও সব ব্লকে সেভাবে না হওযায় চাষিরা জলসেচ করেও ধান রুইতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে খরচও অনেক বেশি। এ দিকে বীজতলায় ধানের চারা বড় হতে চলায় সেই ধানে ফলন আদৌ হবে কি না, তা নিয়েও চাষিরা আতঙ্কিত। বৃষ্টি না হওয়ার জেরে আমন ধান রুইতে না পারায় জেলার ধান চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়, সেখানে এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ চারা বপন হয়েছে কি না সন্দেহ।

পরিসংখ্যান বলছে, জুন মাসে জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ২২৯.৪ মিলিমিটার, সেখানে হয়েছে ১১৩.৭ মিলি। প্রায় ৫০ শতাংশ ঘাটতি। এ দিকে পয়লা জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ২৩৩.৮ মিলি, সেখানে হয়েছে মাত্র ৫৭.১ মিলি। মাসে এ পর্যন্ত ঘাটতির পরিমাণ ৭৫.৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে ‘বর্ষাকাল’ বলে পরিচিত পয়লা জুন থেকে এ দিন পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত ঘাটতির পরিমাণ ৬৩ শতাংশ।

গোটা জেলা দাবদাহে রীতিমতো জ্বলছে। জেলা কৃষি দফতরের আবহাওয়া বিভাগ জানাচ্ছে, শুক্রবার সকাল থেকেই জেলায় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছিল। দুপুরে তা চড়ে হয়েছে ৩৭.৮ ডিগ্রি। বিকেল থেকে কিছুটা নেমে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। আপেক্ষিক আদ্রতা ৬৫ শতাংশ থাকলেও বৃষ্টি না হওয়ায় গরমে একেবারে হাঁসফাঁস অবস্থা। জেলা কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা দেবজ্যোতি মহলানবীশ বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধানের চারা জেলার বেশিরভাগ এলাকায় এখনও রোয়া যায়নি। তবে হাতে সময় এখনও রয়েছে। অগস্ট মাস অবধি চারা রোয়া যায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Heat Flow Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy