কেন রক্তবর্ণা এ পুজোর দুর্গামূর্তি? —নিজস্ব চিত্র।
বাবার চণ্ডীপাঠে নাকি ত্রুটি রয়েছে। সমালোচনা করে চণ্ডীপাঠ শুরু করেন ছেলেও। তবে চণ্ডীপাঠের এ ‘প্রতিযোগিতায়’ ভুল করে বসেন বাবা। তাতেই নাকি রাগে অগ্নিবর্ণা হয়ে দক্ষিণ থেকে পশ্চিমে মুখ ঘোরান দেবী দুর্গা। ধূপগুড়ির ভট্টাচার্য পরিবারের পুজো ঘিরে এমনই কথিত। ওই পুজোয় আজও লাল রঙের দুর্গার আরাধনা করা হয়।
ধূপগুড়ির ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অর্ধকালী বংশের পুজো সর্বজনীন হিসাবে বছর দশেকের পুরনো। ২০০৪ সাল থেকে এলাকায় তা ভট্টাচার্য পাড়া সর্বজনীন পুজো হিসেবে পরিচিতি পায়৷ তবে অর্ধকালী বংশীয় ভট্টাচার্য পরিবারের এ পুজোর ইতিহাস প্রায় তিনশো বছরের পুরনো। যার শিকড় লুকিয়ে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ তথা সাবেক ঢাকা জেলার মিতরা এলাকায়।
অর্ধকালী বংশের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা জানিয়েছেন, কথিত যে প্রায় চারশো বছর আগে অধুনা বাংলাদেশের শিলালোট গ্রামের বাসিন্দা দ্বিজদেব ভট্টাচার্য দেবীর বরলাভ করেন। তার পর দ্বিজদেবের পরিবারে জন্ম হয় দেবীরূপী অর্ধকালীর। মেয়ের দেহ অর্ধাঙ্গ শ্যামবর্ণা, বাকি বিপ্রবর্ণা অর্থাৎ ফর্সা৷ অর্ধকালী বড় হলে তাঁর বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করেন দ্বিজদেব। নিজের টোলের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র রাঘবানন্দ ভট্টাচার্যের কাছে অর্ধকালীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন তিনি। বিয়ের পর দ্বিজদেবের আপত্তি সত্ত্বেও স্ত্রী-কে নিয়ে ঢাকার মিতরার চরে বসবাস করতে শুরু করেন রাঘবানন্দ। সেখানেই শুরু হয় দেবীর পুজো। যা অর্ধকালী বংশের দুর্গাপুজো হিসেবে পরিচিতি পায়।
কেন রক্তবর্ণা এ পুজোর দুর্গামূর্তি? কথিত, এক নবমীতে দক্ষিণমুখী হরিৎবর্ণা দুর্গামূর্তির সামনে বসে চণ্ডীপাঠ করছিলেন পণ্ডিত রাঘবানন্দ। সে সময় সাত বছরের শিক্ষা শেষে বাড়ি ফেরেন তাঁর পুত্র রামেশ্বর। বাবার চণ্ডীপাঠ মনঃপুত না হওয়ায় রাঘবানন্দের পাশে বসে চণ্ডীপাঠ শুরু করেন তিনি। পুত্রের চণ্ডীপাঠে মৃন্ময়ী মূর্তিতে পঞ্চপ্রাণের সঞ্চার হয়। তবে ছেলের পাঠের জেরে বিঘ্ন ঘটে বাবার চণ্ডীপাঠে। ভুল করেন বাবা। এর পরেই ঘটে বিপত্তি। দেখা যায়, মৃন্ময়ী দেবীমূর্তি রক্তবর্ণা হয়ে গিয়েছে। দেবীর মুখ ঘুরে গিয়েছে দক্ষিণ থেকে পশ্চিম দিকে। স্বামী ও ছেলের লড়াই থামানোর পাশাপাশি রুষ্ট দেবীকে সন্তুষ্ট করতে সচেষ্ট হন অর্ধকালী। দু’জনকে নিরস্ত্র করে চণ্ডীপাঠের ভ্রান্তিজনিত পাপ থেকে বংশধরদের রক্ষায় অর্ধকালী ঘোষণা করেন, তাঁর বংশের পুজোয় কোনও দিন চণ্ডীপাঠ হবে না। আজও সে প্রথাই পালিত হচ্ছে। অর্ধকালী বংশের পুজোয় মৃন্ময়ী দেবীমূর্তি গড়া হয় রক্তবর্ণে। দেবী বসেন পশ্চিমমুখী হয়ে। চণ্ডীপাঠও করা হয় না।
ধূপগুড়িতে এ পুজোর সূচনাপর্ব থেকে আয়োজক তথা পুরোহিত অর্ধকালী বংশের উত্তরসূরি সুকান্ত ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘শুধু ধূপগুড়িতেই নয়, বাংলাদেশ-সহ বেশ কয়েকটি দেশে আমাদের বংশধরেরা আজও একই রীতিতে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। বংশের আদি দেবী অর্ধকালীর নির্দেশানুসারে পুজোর যাবতীয় আয়োজন করা হয়। তাঁর নির্দেশ মেনেই বংশের সকলেই অর্ধকালীর পিতা দ্বিজদেবের বংশধরদের কাছে দীক্ষাগ্রহণ করেন। দেশভাগের আগে ওপার বাংলার মিতরায় দুর্গাপুজো হত। এপার বাংলায় আসার পর ২০০৪ সালে ফের আমরা পুজো শুরু করি।’’
প্রসঙ্গত, বিশেষ রীতিতে দুর্গাপুজো ছাড়াও আজও দেবী রূপে পুজো হয় অর্ধকালীর। জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের বার্নিশে দেবী অর্ধকালীর মন্দিরও রয়েছে। প্রতি বছর মাঘ মাসের পূর্ণিমায় অর্ধকালীর জন্মতিথিতে সে পুজো হয়। অর্ধকালীর নির্দেশিত পথেই আশ্বিনে হয় দেবী দুর্গার পুজো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy