গেরুয়া শিবিরের এই বন্ধকে ‘সস্তার রাজনীতি’ হিসাবে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধের শুরুতেই অশান্তির আবহ কোচবিহার শহরে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়লেন বিজেপির বন্ধ সমর্থনকারীরা। যার জেরে প্রায় ২০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। বন্ধের সমর্থনে শুক্রবার সকালে কোচবিহার শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল বার করে বিজেপি। সেই মিছিল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস টার্মিনাসে এসে পৌঁছনোর পর বন্ধ সমর্থনকারীরা সরকারি বাস আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। অভিযোগ, পুলিশ এসে তাঁদের বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন বিজেপি কর্মীরা। এর পরই কুড়ি জন বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। বন্ধ রুখতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে প্রশাসন।
সরকারি বাসে ঢিল ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে বন্ধ সমর্থককারীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে কোচবিহার থেকে আলিপুরদুয়ার যাচ্ছিল বারোবিশা রুটের একটি সরকারি বাস। অভিযোগ, সেই বাসে ঢিল ছুড়ে কাচ ভেঙে ফেলেন বিজেপি কর্মীরা। সে সময় বাসের ভেতরে ছিলেন যাত্রীরা। এর পর আতঙ্কিত যাত্রীরা বাস থেকে নেমে যান।
বাসচালক শিবু সরকার বলেন, ‘‘বাস টার্মিনাস থেকে বাস বার করে যাচ্ছিলাম। গাড়ির ভিতরে অনেক যাত্রী ছিলেন। হঠাৎই একটি বড় পাথর বাসের সামনের কাচে এসে লাগে। কাচ ভেঙে যায়। মাথায় হেলমেট না পরে থাকলে আমার মাথা ফেটে যেত। আতঙ্কিত বাসযাত্রীরা বাস থেকে নেমে পড়েন।’’
কোচবিহারের চাকির মোড় এলাকাতেও দিনহাটাগামী একটি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে বন্ধ সমর্থককারীদের বিরুদ্ধে।
কালিয়াগঞ্জকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার ১২ ঘণ্টার উত্তরবঙ্গ বন্ধের ডাক দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। শুক্রবার সকাল থেকেই কোচবিহার শহরে সেই বন্ধের আংশিক প্রভাব লক্ষ করা গেল। সকাল থেকেই রাস্তায় কোনও যানবাহন নামায়নি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থাগুলি। জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দোকানপাটও। যাত্রী পরিবহণের জন্য সরকারি বাসগুলি রাস্তায় নামলেও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচতে সরকারি বাসের ড্রাইভারদের হেলমেট পরে বাস চালাতে দেখা গিয়েছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পাশাপাশি, শুক্রবার বিজেপির ডাকা বন্ধের বিরোধিতা করে কোচবিহার শহরে পাল্টা মিছিল বার করেছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাসচালক এবং তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা।
কোচবিহার শহরে বন্ধের প্রভাব পড়েছে দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতেও। বিভিন্ন জেলা জায়গায় জায়গায় পতাকা হাতে বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় মিছিল বার করেছেন বিজেপি কর্মীসমর্থকেরা। দার্জিলিং শহরেও সকাল ৯টা থেকে মিছিল বার করার কথা রয়েছে গেরুয়া শিবিরের।
প্রসঙ্গত, কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদগাঁয় বিজেপি কর্মী মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের মৃত্যু হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হয়েছে পুলিশের গুলিতেই। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সরব রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। জায়গায় জায়গায় রাস্তা ঘিরে সেই ঘটনার প্রতিবাদও করতে দেখা গিয়েছিল বিজেপির নেতাকর্মীদের। এর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে আচমকাই উত্তরবঙ্গ বন্ধের ডাক দেয় গেরুয়া শিবির। কালিয়াগঞ্জকাণ্ডের প্রতিবাদে রায়গঞ্জের দার্জিলিং মোড়ে বিজেপি ধর্না মঞ্চ থেকে শুক্রবার ১২ ঘণ্টা বন্ধের কথা ঘোষণা করেন স্থানীয় বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। দেবশ্রী বলেন, ‘‘একের পর এক ঘটনায় রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল যে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে ফুঁসছে উত্তরবঙ্গের মানুষ। সাধারণ মানুষের সেই ক্ষোভকে সম্মান জানিয়েই এই বন্ধের সিদ্ধান্ত।’’
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘জনসংযোগ যাত্রা’ কর্মসূচির জন্য বর্তমানে উত্তরবঙ্গে রয়েছেন। শুক্রবারও তাঁর কর্মসূচি রয়েছে তার মধ্যেই উত্তরবঙ্গ বন্ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। যদিও গেরুয়া শিবিরের এই বন্ধকে ‘সস্তার রাজনীতি’ হিসাবে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy