উদ্ধার করে নিয়ে আসা বোমা কেন নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়নি, তার সুদত্তর মিলল না উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানায় বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টা পরেও। রবিবার বোমাটি কেন তদন্তকারী অফিসারদের ঘরে নিয়ে আসা হয়েছিল, তারও উত্তর মেলেনি।
রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ থানায় বিস্ফোরণের পরেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেন খোদ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার। সোমবার বিকালে তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। থানার সমস্ত পুলিশকর্মীর ভূমিকাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বোমাটি নিস্ক্রিয় করা ও তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের ঘরে সেটি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কারও গাফিলতি স্পষ্ট হলে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।’’
বিরোধীরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের প্রশ্ন, ‘‘থানার মধ্যে সক্রিয় বোমা নিয়ে পুলিশকর্মীরা কি খেলছিলেন?’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের কর্তব্যের গাফিলতি প্রমাণিত হয়েছে। দলের তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছি।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য ইটাহারেরই বিধায়ক। তাঁর বাড়ি থেকে ১০০ মিটারের মধ্যেই ইটাহার থানা। তিনি বলেন, ‘‘থানার পুলিশকর্মীদের কর্তব্যে গাফিলতি, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অসতর্কতার জন্যই তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের ঘরে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। থানায় অনেক সাধারণ মানুষ যান। তাঁরাও আহত হতে পারতেন।’’ তাঁর দাবি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে অবিলম্বে দোষী পুলিশকর্মীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জেলাশাসক রণধীর কুমার জানান, থানায় বোমা বিস্ফোরণের বিষয়ে জেলা পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট তাঁর হাতে আসলেই তিনি প্রশাসনের তরফে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।
ওই দিন ইটাহার থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের ঘরে একটি বোমা ফেটে রায়গঞ্জ মহকুমার বিশেষ তদন্তকারী পুলিশ দলের ওসির পরাণ মন্ডল, ওই থানার সহকারী সাব ইন্সপেক্টর দীপঙ্কর চক্রবর্তী ও সিভিক ভলান্টিয়ার মনিরুল ইসলাম জখম হন। পরাণবাবু ও মনিরুল ইসলামকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে রাতে চোখের সমস্যা দেখা দেওয়ায় পরাণবাবুকে কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৬ মে ইটাহারের কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জামালপুর এলাকা থেকে বোমাটি উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরে কেন সেটি নিষ্ক্রিয় করা হয়নি, তার উত্তরই খুঁজছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, বোমাটি থানা চত্বরে জলভর্তি একটি প্লাস্টিকের বালতিতে চুবিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই জল শুকিয়ে যাওয়ার কারণেই বোমাটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেটি ওই দিন থানা চত্বরে ফাটলে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল। কারণ, ওই বোমাটির পাশেই নানা সময়ে উদ্ধার হওয়া কেরোসিন তেল, গ্যাস সিলিন্ডার সহ নানা দাহ্য পদার্থ রাখা হয়েছিল। বোমাটি প্রাথমিকভাবে নিষ্ক্রিয় করা হলেও পরে কার গাফিলতিতে সেটি নষ্ট করা হয়নি ও কেন ওই দিন সেটিকে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের ঘরে ঢোকানো হয়েছিল, সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ইটাহার থানার ওসি নিমশেরিং ভুটিয়া।
ইটাহার থানার পুলিশের একাংশের দাবি, অতীতে বিভিন্ন সময়ে বোমা উদ্ধার করার পর তা প্রাথমিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের ঘরে নিয়ে গোনা হয়। সেই সময় কোনও বোমা মেঝেতে গড়িয়ে আলমারির পিছনে ঢুকে গিয়ে থাকতে পারে। ওইদিন কোনওভাবে সেটিতে চাপ পড়ে বিস্ফোরণ ঘটে যায়। যদিও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘খোলা জায়গা ছাড়া থানার ভিতরে বোমা নিস্ক্রিয় করা বা বোমা গোনা বেআইনি। তদন্তে আমরা সব দিকই খতিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy