Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

তিন জেলায় ঘর আগলাতে ছুটছে তৃণমূল

বিধানসভা ভোটে বরাবর অন্যদের কেন্দ্রেই প্রচার করতে দেখা যায় কোচবিহার জেলা সভাপতি রবি ঘোষকে। প্রচারের শেষ বেলায় রবিবাবুকে আটকে থাকতে হল নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নাটাবাড়িতে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০২:২২
Share: Save:

তখন রেলমন্ত্রী সি কে জাফর শরিফ। রেলমন্ত্রক স্থির করে একটি মাত্র ট্রেনে কলকাতার সঙ্গে কোচবিহার-জলপাইগুড়িকে সরাসরি জোড়া হবে। নতুন ট্রেনের নামকরণ করা হয় তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস। সে সময় রেল মন্ত্রকের মনে হয়েছিল, ভৌগোলিক এবং যোগাযোগের দিক থেকে পাশাপাশি থাকা তিন জেলার অনেক মিল রয়েছে। তিস্তা এবং তোর্সা দুই নদীর পাড়ের এখনকার তিন জেলা কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের মধ্যে রাজনীতিগত ভাবেও সেই মিলের ট্র্যাডিশন যে আজও অটুট, তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন শাসক দলের নেতারা।

বিধানসভা ভোটে বরাবর অন্যদের কেন্দ্রেই প্রচার করতে দেখা যায় কোচবিহার জেলা সভাপতি রবি ঘোষকে। প্রচারের শেষ বেলায় রবিবাবুকে আটকে থাকতে হল নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নাটাবাড়িতে। তবে কি লোকসভা উপনির্বাচনে জেলায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিজেপিকে এতই ভয় পাচ্ছেন রবিবাবুর মতো নেতাও? বিজেপি দাবি করছে, গত লোকসভা ভোটে বামেদের হাতে থাকা ৬ শতাংশ ভোটও এ বারের ভোটে তাঁদের ঝুলিতে আসবে। জনান্তিকে অবশ্য রবিবাবুর এক ছায়াসঙ্গী বলছেন, “আরে বিরোধীরা নয়, দাদার বেশি ভয় তো দলের ছেলেগুলোকে নিয়েই।”

কোচবিহারের ১৯৬৬ গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে অর্ধেকের বেশিতে দলেরই ‘বিক্ষুব্ধরা।’ যুব সংগঠনের সঙ্গে টিকিট দেওয়া নিয়ে বিবাদে গুলি-বোমাবাজি এমনকী মৃত্যুও হয়েছে জেলায়। সেই বিবাদে দলের ভোট কমলে, পদ্ম ফোটার সম্ভাবনা যে বেশি, তা মানছেন সকলেই। যদিও রবিবাবুর দাবি, “মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই ভোট দেবে।”

আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি দুই জেলা পরিষদই তৃণমূলের প্রতীকে জিতে নেবেন বলে দাবি করেছেন দুই জেলার তৃণমূল সভাপতিই। গত পঞ্চায়েতে বামেরা একক ভাবে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ দখল করে। পরবর্তীতে বাম এবং কংগ্রেসের ঘর ভেঙে জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল।

জলপাইগুড়িতে পঞ্চায়েতে তৃণমূল মনোনয়ন দিয়েছে ১৩৪১ আসনে। বিজেপি দিয়েছে ১০৮৩ আসনে। এক সময়ে বামেদের গড় বলে পরিচিত জেলায় বামেদের প্রার্থী রয়েছে মাত্র পাঁচশোর বেশি কিছু আসনে। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলছেন, “সংগঠন ছাড়াই বিজেপি এত আসনে মনোনয়ন দিল কী করে? বাম ও বিজেপির অশুভ আঁতাঁত হয়েছে। জনগণ ভোটবাক্সে জবাব দেবেন।”

গত বিধানসভায় আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট আসন ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। চা বলয়ের অন্য আসনে দ্বিতীয়স্থানে উঠে এসেছিল পদ্ম। জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বাম এবং কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীরা ভিড়তে শুরু করে বিজেপিতে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সেই প্রবণতা টের পেয়েই দলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি পদে বদল আনা হয়। সৌরভ চক্রবর্তী আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক হলে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় জলপাইগুড়ি জেলার, আলিপুরদুয়ারের ভার দেওয়া হয় চা শ্রমিক নেতা এবং হিন্দি ভাষায় সাবলীল মোহন শর্মার উপরে। সেই সুফলের আশায় তৃণমূল। তবে তৃণমূলের অভিমানী কম নেই বলে শোনা যান, কান পাতলেই। তাই শেষ বেলাতেও কোচবিহারে রবি, জলপাইগুড়িতে সৌরভ আলিপুরদুয়ারে মোহন ছুটছেন গ্রামে।

জেলার প্রবীণ তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, ‘‘নিচু স্তরে নানা কারণে নানা ধরনের সমঝোতা হয়। তাতে ভোটের অঙ্ক উল্টে যেতেও পারে।’’ সেই অঙ্ক সামাল দেওয়াই এখন সব দলের নেতাদেরই প্রধান কর্তব্য।

সহ প্রতিবেদন: নমিতেশ ঘোষ, পার্থ চক্রবর্তী, নারায়ণ দে

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Elections 2018 TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy