আগাম খবর না দিয়ে গরুমারায় এসে এতটা ঝক্কি পোহাতে হবে তা কল্পনাও করতে পারেননি চন্দননগরের বাসিন্দা আয়ূষ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সকালে গরুমারা জাতীয় উদ্যানের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের টিকিট ঘরের কর্মীকে তাঁর কাতর অনুরোধ, “দেখুন না দাদা, কোথায় একটা ব্যবস্থা করা যায় কি না। ফ্যামিলি নিয়ে এসেছি।” তার আগেই তিনি জেনেছেন, গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া গাছবাড়িতে কোনও ঘর খালি নেই। বিচাভাঙা, হর্নবিল কোনও সরকারি রিসর্টেও অগ্রিম বুকিং রয়েছে। টিকিট ঘরের কর্মী মানব ঘোষ বুকিং খাতা দেখে জানালেন, অন্য কোথাও বুকিং নেই। বাধ্য হয়ে চন্দননগরের পরিবারটিকে খুঁজতে হল বেসরকারি রিসর্ট। তাও বিফল। অবশেষে ময়নাগুড়ির ব্লকের কালীপুর ইকো রিসর্টে দু’টি ঘর পেলেন আয়ূষবাবুরা।
রবিবারে দোল হওয়ায়, ছুটিটা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে বলে সরকারি কর্মীদের সিংহভাগই প্রথমে হতাশ হয়েছিলেন। পরে, সোমবারে রাজ্য সরকার দোলের ছুটি ঘোষণা করার পরেই, ছুটির পরিকল্পনা সেরে ফেলেছিলেন তাঁদের অনেকেই। তার জেরেই ডুয়ার্সের বনবাংলোগুলি শনিবার থেকেই ‘হাউসফুল।’ শনি আর রবি এমনিতেই ক্যালেন্ডারে লাল কালির দাগ। রাজ্য সরকারের সৌজন্যে সোমবারও ছুটি মেলায়, টানা তিন দিন ছুটি কাটানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না অনেকেই।
শুধু বনবাংলো নয়, জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রানিনগর, শিলিগুড়ি লাগোয়া আমবাড়ির ইকোপার্কও ইতিমধ্যে বুক হয়ে গিয়েছে। ডুয়ার্স-তরাইয়ের বেশ কয়েকটি চা বাগানের বাংলোও ছুটি কাটানোর জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছেন অনেকেই। স্থানীয় ট্যুর অপারেটরা জানিয়েছেন, সাধারণত দোলের সময় বাইরের ও স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা কম থাকে। এ বারে টানা তিন দিনের ছুটিতে স্থানীয় পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে ডুয়ার্সে।
সোমবারে ছুটির কথা শুনেই জলপাইগুড়ির স্কুলশিক্ষক সিদ্ধার্থ গঙ্গোপাধ্যায় তিন দিনের ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করে ফেলেন। শনিবার দুপুরের মধ্যে পরিবার-সহ তাঁর লাটাগুড়িতে পৌঁছে যাওয়ার কথা। ত্রিশ পেরোনো সিদ্ধার্থের কথায়, “তিন দিনের ছুটিতে দূরে কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। তাই লাটাগুড়ি আর চালসার রিসর্ট বুক করেছি। একদিন করে দু’জায়গায় থাকব। সহকর্মীরাও অনেকে ছুটি নিয়ে আশেপাশের বিভিন্ন রিসর্ট বুক করেছেন।”
ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া এলাকায় বনদফতর, পর্যটন উন্নয়ন নিগম মিলিয়ে মোট আটটি ইকো রির্সট রয়েছে। চাপড়ামারির জঙ্গল ঘেরা জঙ্গল ক্যাম্প কিংবা বন নিগমের পর্যটক আবাস বা দক্ষিণ গরুমারা ধূপঝোরা বিটের গাছবাড়ি সর্বত্রই শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ‘ঠাঁই নাই’ দশা। লাটাগুড়ি এলাকায় ৪০টিরও বেশি বেসরকারি রির্সট রয়েছে। পুজো বা বড়দিনের পরে দোলের ছুটিতেও যে ভিড় উপচে পড়ে, এ বছরের আগে সেই অভিজ্ঞতা হয়নি রিসর্ট মালিকদেরও। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, “এ বছরই দোলের সময়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক এসেছেন। একটানা তিন দিন ছুটি পাওয়াতেই সকলে ছুটি কাটাতে এসেছেন। দোলের দিনগুলিতে পর্যটকদেরও রঙের উৎসবে সামিল করতে বাড়তি বন্দোবস্ত করেছি।”
শুধু রাত্রিবাস নয়, সারাদিনের সময় কাটানোর ব্যবস্থা থাকা ইকো পার্কগুলিতেও আগাম বুকিং হয়ে গিয়েছে। গয়েরকাটা লাগায়ো প্রকৃতিপাঠ কেন্দ্র বা আলিপুরদুয়ারের জয়ন্তীর হোম কটেজগুলিতেও শুক্রবার থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy