রত্না রায়।
টানা তিন দিন যমে-মানুষে টানাটানির পরে মৃত্যু হল একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রত্না রায়ের (১৬)। সোমবার স্কুলে গিয়েছিল রত্না। তখন ক্লাসের মধ্যে ঢুকে তার পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করে জিতেন্দ্র শাহ নামে এক কলেজ ছাত্র। তারপর রত্নাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর একটা নাগাদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় ধূপগুড়ি ব্লকের শালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রত্না।
গ্রামের লোকজন রত্নাকে কলি বলে ডাকতেন। কলির মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছতে শালবাড়ি জুড়ে শোকের ছায়া নামে। সে যে স্কুলে পড়ত সেই জুরাপানি হাইস্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। কলিকে খুনে অভিযুক্ত জিতেন্দ্রের বাড়িতে ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। রত্নাকে আঘাত করার পরে নিজের পেটে ছুরি ঢুকিয়েছিল জিতেন্দ্র। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। জিতেন্দ্রের বাবা বাজারের ফল ব্যবসায়ী রামহৃদয়বাবু বলেছেন, “আমার ছেলেকে গ্রামের সকলে ভাল ছেলে বলেই চেনেন। ওর সঙ্গে রত্নার প্রেম ছিল বলে শুনেছি। ছেলে যে এমন কাণ্ড করবে তা ভাবিনি। ছেলের অবস্থা ভাল নয়। ওর চিকিত্সা করানোর সামর্থ্যও আমার নেই।”
সোমবার সকাল পৌনে ১০ টা নাগাদ স্কুলের ক্লাশে কলি ও তার চার সহপাঠী ক্লাস রুমের এক কোণে বসে গল্প গুজব করছিল। সে সময় আচমকা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়ে জলপাইগুড়ি আইন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র জিতেন্দ্র। ওই যুবক সরাসরি রত্নার কাছে গিয়ে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। তার কথায় রাজি না হলে খুনের হুমকি দেয় জিতেন্দ্র। দু’জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়। বাকি ছাত্রীরা নির্বাক হয়েছিল। তখন জিতেন্দ্র আচমকা ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে কলির চুলের মুঠি ধরে। যুবকের হাতে ছুরি দেখে বাকি ছাত্রীরা চিত্কার শুরু করে। সে সময় ক্লাসে ঢুকছিল সুশান্ত সরকার নামে এক ছাত্র। সে পিছন থেকে গিয়ে জিতেন্দ্রের হাত ধরে ফেলে। সে সময় কলির চুলের মুঠি ছেড়ে জিতেন্দ্র নিজের হাত ছাড়িয়ে ছুরি দিয়ে সুশান্তের দু হাতে আঘাত করে। জখম ওই একাদশ শ্রেণির ছাত্রের আর বাধা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। জিতেন্দ্র তখন দৌড়ে গিয়ে ক্লাসের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া রত্নার পেটে দু’বার ছুরি দিয়ে আঘাত করে বলে অভিযোগ। রত্না মাটিতে লুটিয়ে পড়তে জিতেন্দ্র ওই ছুরি দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করে। সুশান্তের কথায়, “ওই দৃশ্য ভুলতে পারি না। এখনও রাতে ঘুমোতে পারি না। কলি মরে যাবে তা ভাবতে পারিনি।”
গ্রামের মোবাইল ফোন দোকানের মালিক শান্তিরঞ্জন বাবু ও তাঁর স্ত্রী অরুণা দেবীর এক মেয়ে ও এক ছেলে। ছোট মেয়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তাঁরা। কলির জেঠা গৌরপদ রায়ের কানে এখন শুধু ভাসছে কলির শেষ কথা টুকু, “জেঠা আমি বাঁচব তো?” গৌরবাবুর কথায়, “মঙ্গলবার বিকালে শেষ বার আমাকে ভাইঝি আমায় ওই কথা টুকু বলে জ্ঞান হারায়। ফুলের মতো মেয়েটার বাঁচার আকুতি ভুলতে পারছি না। ওই বদমাশ ছেলেটাকে কাছে পেলে যে কী করতাম।” জুরাপানি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভগীরথ রায়ের কথায়, “ওই ছাত্রীকে ছোট থেকে চিনতাম। আমার স্কুলের যেমন ছাত্রী ছিল, পাশাপাশি ওদের পরিবারের সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক ছিল। স্কুলের ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা কিছুতেই মানতে পারছি না।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলির মৃতদেহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে গ্রামে নিয়ে আসার পরে বাড়িতে উপচে পড়ে ভিড়। রত্নার বান্ধবী সুচরিতা ভৌমিক বলে, “আমি ওকে ধরে গাড়িতে তুলে ধূপগুড়ি হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েছি। তখনও তো বুঝিনি ও মারা যাবে। এটা মেনে নিতে পারছি না। ওই ছেলেটি বেঁচে থাকলে যাতে তার কঠোর শাস্তি হয় সেটাই চাইছি।”
ছবি: রাজকুমার মোদক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy