দিল্লির পথও বড় সুগম নয়। পদে পদে বিছানো রয়েছে কাঁটা। সে কাঁটা কখনও গোষ্ঠীকোন্দল, প্রতিদ্বন্দ্বী, কখনও চাঁদিফাটা রোদ কখনও আবার বেমক্কা প্রশ্নবাণ, পরিস্থিতি কিংবা আবদার। যা সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রার্থীদের।
শুক্রবার যেমন বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনে গিয়েছিলেন আইনজীবীদের সঙ্গে পরিচয় করতে। কিন্তু সেখানে এক আইনজীবী তাঁকে এমন কিছু প্রশ্ন করে বসেন যা সামাল দিতে গিয়ে অস্বস্তি লুকোতে পারেননি ওই গায়ক-প্রার্থী। কী হয়েছিল এদিন? বার অ্যসোসিয়েশন কার্যালয়ে ইন্দ্রনীলকে ঘিরে আইনজীবীদের ভিড়। কফি, গল্প, গানের সঙ্গে কথাবার্তাও চলছিল।
হঠাৎ প্রার্থীকে প্রশ্ন শুরু করেন বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি তথা কার্যকরী কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু সিংহ। প্রার্থীর কলেজ রাজনীতি ও ভোটে দাঁড়ানোর বিষয়ে শুভ্রাশুবাবু এমন কিছু প্রশ্ন করেন যাতে অস্বস্তিতে পড়েন ইন্দ্রনীলবাবু। পরিচয় করতে গিয়ে যে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তা বোধহয় ভাবতে পারেননি খোদ প্রার্থীও।
যেমনটা ভাবতে পারেননি মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান ও ডোমকলের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমানও। কী রকম? দিনকয়েক আগে জলঙ্গির পাকুড়দেয়ার গ্রামে প্রার্থীকে সঙ্গে করে ভরদুপুরে প্রচারে বেরিয়েছিলেন আনিসুর। গ্রামের বহু লোকের সঙ্গেই কথা বলছেন প্রার্থী। কাউকে কাউকে ইশারায় ডেকে আনিসুর প্রার্থীর সঙ্গে পরিচয়ও করিয়ে দিচ্ছিলেন। পাশের একটি মাচায় জনাকয়েক বৃদ্ধ তখন নিজেদের গল্পে ব্যস্ত। সেই মাচার দিকে এগিয়ে ভোটের কথা তুলতেই কথা থামিয়ে দেন এক বৃদ্ধ, “আগে বাপু আমার কথা শোনো। তারপর তোমাদেরটা শুনব।” ওই বৃদ্ধ বলে চলেন, “অনেক হয়েছে। আর নয়। এতদিন ধরে ভোট দিয়েছি কিছুই পাইনি। টাকা না দিলে এবার ভোট হবে না।”
প্রার্থী বদরুদ্দোজা ও রাজনীতির ময়দানে পোড়খাওয়া আনিসুর দু’জনেই ওই বৃদ্ধের এমন কথাবার্তা শুনে তো থ। পরে অবশ্য ব্যাপারটাকে সামলে দিলেন আনিসুরও। তিনি ওই বৃদ্ধকে বলেন, “আমরা গরিবের দল করি। টাকা দিতে পারব না। টাকা দেবে অন্য দল যাদের টাকা আছে।”
সপ্তাহখানেক আগে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মান্নান হোসেনের কথা ছিল ভগবানগোলা এলাকায় পদ্মার ওপারের চরের গ্রামে যাওয়ার। প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে চরে যাবেন বলে জনা কয়েক কর্মীও জড়ো হয়েছিলেন চর শিবনগর গ্রামে। মান্নানের গাড়িও গিয়ে থামে চরের এপারে। কিন্তু চরে সেদিন দিনভর বইছিল বালি-ঝড়। সেই ঝড়ের কারণে সেদিন আর চরে যেতে চাননি মান্নান।
প্রার্থীর এই মত বদলে গোঁসা হয় দলের জনাকয়েক কর্মীর। তাঁরা বলে বসেন, “ওই পথে ধুলোবালি মেখে আমরা সারাবছর যাতায়াত করি। আর প্রার্থী একদিন তো যাবেন ওখানে। তা-ও আবার ভোট চাইতে। আর সেখানেও বালির ভয়!” মান্নান অবশ্য বলেন, “সত্যিই সেদিন খুব বালি উড়ছিল। তাই পরে একদিন যাওয়ার কথা হয়।” কিন্তু কর্মীরা যে এমন কথা বলেছিলেন সেটা অবশ্য মানতে চাননি তিনি।
জেলার রাজনীতির কারবারিরা অবশ্য মনে করছেন, এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। ভোটের সময় এমন কোন এলাকা বা গ্রামে যেতে হয় যেখানে অন্য কোনও সময় সেভাবে নেতা কিংবা প্রার্থীদের পা পড়ে না। ফলে দলের লোকজনের বাইরে এমন কিছু সাধারণ মানুষ থাকেন যাঁরা এমন কিছু প্রশ্ন কিংবা মন্তব্য করে বসেন যাতে সবাইকে অস্বস্তিতে পড়তে হয় বইকি। তবে হাসিমুখে সে সব সামলাতেও হয় প্রার্থী কিংবা দলের লোকজনকেই।
জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী মুজাফ্ফর হোসেন বলেন, “সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তাঁদের কথায় রাগ না করে যদি তাঁদের সমস্যার সমাধানের পথ বের করে দেওয়া যায় তাহলেই তো তাঁরা আমাদের কাছের মানুষ ও কাজের মানুষ বলে মনে করবেন। আর যদি মানুষের সঙ্গে সেই যোগাযোগটাই না থাকে তাহলে তো অস্বস্তিতে পড়তেই হবে।” তিনি জানান, দিনকয়েক আগে তিনিও জঙ্গিপুরের মুকুন্দপুরে প্রচারে বেরিয়েছিলেন। গ্রামে ঢুকতেই জনাকয়েক মহিলা তাঁকে ঘিরে নিকাশি সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ দেখান। দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট ধরে তাঁদের সঙ্গে বসে সমাধানের পথও বাতলে দেন তিনি। লোকজনও খুশি। খুশি প্রার্থীও। শেষতক গ্রামের লোকজনের আবদারে দু’কলি গানও শোনাতে হয় তাঁকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy