থানায় ঢুকে পুলিশের কাছে নির্বিকার গলায় তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘স্বামীকে খুন করেছি। আপনারা বডি নিয়ে আসুন।’’ ওই মহিলার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে পুলিশ আনন্দ হালদারের (৩৫) দেহ উদ্ধার করে। বুধবার বিকেলে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় অন্নপূর্ণা হালদারকে।
তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রানাঘাটের পানপাড়ার বাসিন্দা, রমেন তেলি নামে অন্নপূর্ণাদেবীর প্রতিবেশী এক যুবককেও পুলিশ ওই রাতেই গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার ধৃতদের রানাঘাট আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
নদিয়ার পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, ‘‘অন্নপূর্ণাদেবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রমেন তেলির কথা পুলিশ জানতে পারে। খুনের অভিযোগে ওই যুবককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ওঁদের কাছ থেকে আরও কিছু তথ্য পাওয়ার জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অন্নপূর্ণাদেবীর সঙ্গে ওই যুবকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আনন্দবাবু। সেই কারণেই এই খুন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে।
ওই পুলিশ কর্তার দাবি, ধৃত দু’জনেই আনন্দবাবুকে খুনের কথা কবুল করেছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জলের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বেহুঁশ করে দেওয়া হয় আনন্দবাবুকে। তারপর তাঁর গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে ঘরের পিছনে সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়া হয়। গোটা ঘটনার পরিকল্পনা থেকে শেষ পর্যন্ত অন্নপূর্ণাদেবীর সঙ্গে ছিলেন রমেন। তবে ঘটনার সময় আনন্দবাবুর বছর ছয়েকের ছেলে বাড়িতে ছিল না। সে বাড়িতে আসে রাত দশটার দিকে। ততক্ষণে ‘অপারেশন’ শেষ হয়ে গিয়েছে।
কেন খুন করা হল আনন্দবাবুকে? পুলিশের কাছে অন্নপূর্ণাদেবী দাবি করেছেন, আনন্দবাবু তাঁকে সহ্য করতে পারতেন না। মাঝে মধ্যেই বাড়ি ফিরে তাঁকে মারধর করতেন। তাই বাধ্য হয়েই তিনি স্বামীকে খুন করেছেন। তদন্তকারী এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ঘটনার পরে প্রায় বাইশ ঘণ্টা ওই মহিলা বাড়িতেই ছিলেন। তাঁর আচরণেও কারও কোনও সন্দেহ হয়নি। তবে তারপরে হয়তো মানসিক ভাবে তিনি দুর্বল হয়ে পড়ায় থানায় এসে গোটা ঘটনার কথা স্বীকার করেন।’’
বুধবার বিকেল থেকেই পানপাড়ার হালদার বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করেন এলাকার লোকজন। বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা গেল বেড়া ও টিনের চাল দেওয়া ঘরে তালা ঝুলছে। সেপটিক ট্যাঙ্ক দেখতেও ভিড় করেছেন অনেকেই। প্রতিবেশীরা এ দিনও বলেছেন, ‘‘লোকটা তো খারাপ ছিল না। দিব্যি সকলের সঙ্গে মেলামেশা করত। কিন্তু ভিতরে ভিতরে এত অশান্তি তা কে জানত!
আনন্দবাবুর বৌদি শঙ্করীদেবীর অভিযোগ, পথের কাঁটা সরিয়ে দিতেই অন্নপূর্ণা ও রমেন আনন্দকে শেষ করে দিল। রমেনের মা রমাদেবীর দাবি, ‘‘অন্নপূর্ণাই আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ও কিছুতেই এমন কাজ করতে পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy