—ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রের আহমেদ নগরে সেনা ক্যাম্পে চলছিল ট্যাঙ্ক চালানোর প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন ডোমকলের জওয়ান মোশারফ হোসেন। হঠাৎ তিনি দেখেন, প্রশিক্ষণ নেওয়া এক চালক ট্যাঙ্ক চালিয়ে প্রায় খাদের কিনারে পৌঁছে গিয়েছে। এক লাফে ছুটন্ত ট্যাঙ্কে উঠতে গিয়ে সে দিন মোশারফ পড়ে গিয়েছিলেন একেবারে ট্যাঙ্কের সামনে। মৃত্যুর মুখ থেকে লাফিয়ে উঠে নিজের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি খাদে পড়ার হাত থেকেও মোশারফ রক্ষা করেছিল সেই সেনা ট্যাঙ্কটিকে। মোশারফ বলছেন, ‘‘সে দিনের ওই ঘটনা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।’’ প্রায় খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাম কুচিয়ামোড়াকে রক্ষা করতে এখন তাই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মোশারফ।
যে গ্রাম সারা দিন বারুদের গুমোট আবহাওয়ার মধ্যে ডুবে থাকত। সমাজবিরোধীদের ফিসফাস আওয়াজে তঠস্থ হয়ে থাকত গ্রামের লোক। কুচিয়ামোড়ার অধিকাংশ ছেলেপুলে কোনও না কোনও পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল— তাদের হাত ধরে একটা খোলা হাওয়ার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আর সে জন্য বেছে নিয়েছেন খেলাকে। মোশারফ বলছেন, ‘‘খেলা মানুষকে অনেকটা খোলা হাওয়া দিতে পারে। খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামটাকে না বাঁচালে আর চলছিল না। আর সে জন্য সবার আগে দলে টানা দরকার ছিল গ্রামের ছেলেদের। সেটাই করার চেষ্টা করছি।’’
গ্রামে চারটে দল গড়েছেন তিনি। শনি আর রবিবার আইপিএলের ঢঙে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করেছেন তাঁরা। রংয়ের উৎসবের ঠিক আগে এই খেলার হাত ধরেই এক নতুন উৎসব কুচিয়ামোড়ায়। গুমোট অন্ধকার থেকে নতুন আলো দেখতে পাচ্ছে ডোমকলের সেই গ্রাম।
খুনের বদলা খুন, দিন দুপুরে বোমাবাজি, রক্ত নিয়ে হোলি খেলা লেগেই থাকত ডোমকলের কুচিয়ামোড়ায়। মামলায় জর্জরিত গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবার। মাস কয়েক আগেও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য-সহ পাঁচজন খুন হয়েছে ওই গ্রামে, আর তার পর থেকেই অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে গোটা গ্রাম জুড়ে। প্রতি রাত মানেই আতঙ্কের প্রহর গোনা, গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে কিছু দিন আগেও ড্রোন উড়িয়ে তল্লাশি চালাতে হয়েছিল পুলিশকে ওই গ্রামে। প্রতিশোধের আগুন চোখেমুখে। তার মধ্যেই গ্রামকে আবার খাদের কিনারা থেকে বাঁচাতে পথে নেমেছে সেনা জওয়ান মোশারফ হোসেন।
মোশারফ বলেন, ‘‘২০ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করছি, অনেক লড়াইয়ে থেকেছি সামনে। আমার গ্রামও আজকে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে, আমার বিশ্বাস সে দিনের মতো করেই বাঁচাতে পারবো আমার গ্রাম কে। আর তা বাঁচাবে কেলাধুলোর পরিবেশ। মিলিয়ে নেবেন।’’
তবে এই প্রথম নয়, গ্রামের জন্য এর আগেও অনেক লড়াই করেছেন মোশারফ। গ্রামের নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কখনও বিদ্যুতের দাবিতে ছুটেছেন দফতরে, কখনও ছুটেছেন পঞ্চায়েত বা ব্লক অফিসে। গ্রামের মাঝে খেলার মাঠ তৈরির জন্য দিনের পর দিন দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন পাগলের মত। চাঁদা তুলে নিজের অর্থ দিয়ে করেছেন খেলার মাঠ। সেই মাঠে শনি ও রবিবার এখন ক্রিকেট আতঙ্কটা কেটে যেন সূর্যের দেখা মিলছে কুচিয়ামোড়ার আকাশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy