সেই কবেই কবিগুরু লিখে গেছেন ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী’। দেশে দেশে দিশে দিশে প্রবল শক্তিমান দুর্বল হীনবলের উপরে কারণে অকারণে অত্যাচার করেছে, নিপীড়ন করেছে এবং এখনও করে চলেছে। কোথাও ধর্মের নামে, কোথাও অন্য কারণে। কিন্তু আজকে আমাদের দেখতে হচ্ছে আমার বাংলায় আমার মুর্শিদাবাদে এই সব চলছে।
এই সব দেখে আমরা, বিশেষত শিক্ষক সমাজ বিচলিত বোধ করছি। এই সর্বনাশের খেলার সমাপন ঘটুক এটা কায়মনোবাক্যে চাইছি।
কিন্তু এমন কেন হচ্ছে?
কোথায় সমস্যা?
এই হিংসার বীজ কিন্তু কোনও ভারতীয় বপন করেনি, শুধু আমরা ভারতবাসীরা এর বিষ-ফলের শিকার হয়েছি মাত্র। এর অবসান ঘটবে এক এবং এক মাত্র শিক্ষার আলোকবর্তিকায়। যে শিক্ষা পুথিগত শিক্ষা নয়, মানবিকতার শিক্ষা, সৌভ্রাতৃত্বের শিক্ষা, মনুষ্যত্বের শিক্ষা। যা শেখায় মানুষের বিপদে এক মাত্র মানুষই থাকে, মানুষ বিপথে চালিত হলে তাকে মানুষই সুপথে ফিরিয়ে আনে।
আমরা মহামানব রূপে যাঁদের পেয়েছি তাঁরা কখনওই নিজের ধর্মের কথা বলেননি, পরধর্মদ্বেষী হতে বলেননি। মানবতাবাদের কথা বলেছেন। ‘‘আমি রামেরও মা রহিমেরও মা’’ এমন কথা বলেছেন মা সারদা। শ্রীচৈতন্যের অন্যতম শিষ্য ছিলেন যবন হরিদাস। আমি ছোটবেলায় বন্ধু রূপে রাম, শ্যাম, যদু বা জাকির, রহমত, আলাউদ্দিন যাদের পেয়েছি বড়বেলায় সেই বন্ধুদের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্ব বজায় আছে। কারণ আমরা কেউ কাউকে ধর্ম দিয়ে বিচার করিনি। তাই আজ এক থালায় মিডডে মিল খাওয়ার ছবি আমাকে সেই ছোটবেলায় এক লহমায় পৌঁছে দিল। সব ধর্মের মানুষের কাছে আমার সবিনয় নিবেদন, এই হিংসার বাতাবরণ থেকে আলোর পথ দেখানোর দায়িত্ব আমাদের সবার।