পাতে যখন ইলিশ। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।
পাতে সবে পড়েছে এক টুকরো ইলিশ! দেখে আনন্দে চোখ গোল গোল খুদেদের। বছরে তো দু’একবারই পাতে পড়ে। শিক্ষকের অনুমতি পেতেই শুরু হল কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া। কচিকাঁচাদের তখন ধরে কে। তাদের লাফানো-ঝাঁপানো দেখে আপ্লুত শিক্ষকেরা।
সোমবার ইলিশ ভোজনের দিন। হাজির ছিল ২৭৪ জন পড়ুয়া। খাওয়াদাওয়া শেষে বাড়ি ফেরার যখ তাদের বাড়ি ফিরার পথে আলোচনাতেই ছিল সেই ইলিশ।
শুধু ইলিশ নয়, ডোমকলের সাগরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঝে মাঝে পড়ুয়াদের খাওয়ানো হয় ফ্রায়েড রাইস, মরগির মাংস, চাটনি-পাপড়। ফি শনিবার মুখে স্বাদ বদল আনতে পাতে পড়ে পায়েস!
স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রত্যুষ সরকার জানান, কাছেই পদ্মা। সাগরপাড়া বাজারে সস্তায় ভাল ইলিশ মেলে। তাই পড়ুয়াদের পাতে এক টুকরো ইলিশ তুলে দিতে বছর ভর মিড-ডে মিলের বরাদ্দ থেকে একটু একটু করে টাকা বাঁচিয়ে রাখা হয়। সেই টাকায় কেনা হয়েছে ইলিশ।
শুধু খাওয়াদাওয়া নয়, লেখাপড়া, নিয়নমানুবর্তিতা, খেলাধূলা সতেবেই চমক দিচ্ছে সাগরপাড়ার এই স্কুল। প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও রয়েছেন স্কুলের নিজস্ব ওয়েবসাইট, গ্রন্থাগার। পড়ুয়ারা রয়েছে লাইব্রেরি কার্ড। সেই কার্ড দিয়ে পড়ুায়ারা বই তুলতে পারে। স্কুলেই রয়েছে কম্পিউটার। মাঝেমাঝে পড়ুয়াদের দেখানো হয় কার্টুন।
যাতে কষ্ট না হয় তার জন্য কচি কাঁচাদের থালা-হাত ধুইয়ে দেয় উঁচু ক্লাসের দাদা বা দিদিরা। স্কুলের ভেতরে রয়েছে ‘আমার দোকান’। সেখানে খাতা পেন-সহ লেখাপড়ার সরঞ্জাম মেলে। অনেকে খাতা পেন আনতে ভুলে যায়। ফলে সেগুলি কিনতে গেলে বাইরে যেতে হয়। স্কুলের সামনেই রাজ্য সড়ক, দুর্ঘটনার ভয়ে একেবারে স্কুলের ভেতর দোকান!
কিন্তু যে সময়ে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় ধুঁকছে, একটু ‘সুশিক্ষা’র আশায় অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেসরকারি স্কুলমুখো হচ্ছেন সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সরকারি স্কুলে এতো কিছু সম্ভব হচ্ছে হচ্ছে কী করে? মৃদু হেসে প্রধান শিক্ষকের উত্তর, ‘‘ইচ্ছে থাকলেই সব করা যায়।’’
এমন স্কুলে নিজেদের ছেলেমেয়েদের পড়াতে পেরে খুশি অভিভাবেকরা। সাগরপাড়ার তাপস দাস বলেন, ‘‘এই স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত। কেবল খাওয়া নয়, শিক্ষা, সংস্কৃতি, নিয়মানুবর্তিতার পাঠ দেওয়া হয় নিয়মিত।’’ আরও এক অভিভাবক মন্দিরা সরকার বলেন, ‘‘আমাদের কপাল ভাল, এলাকায় এমন একটি স্কুল পেয়েছি।’’
স্কুলে প্রায় সাড়ে তিনশো পড়ুয়া। শিক্ষক-শিক্ষিকা মোট ৮ জন। প্রধান শিক্ষক জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ পড়ুয়া উপস্থিত থাকে। মাসে দু’দিন স্কুলে সভা বসে। সভা পরিচালনার দায়িত্বে কচিকাঁচারাই! সভাপতি নিবার্চন থেকে বিরতি বা সভার সমাপ্তি সবই দক্ষতার সঙ্গে সামলায় তারা। মাঝে মাঝে নাচগান, বক্তব্যও চলে। শিক্ষকদের দাবি, এর ফলে স্কুলে আসতে অনিহা এমন পড়ুয়া পাওয়া মেলা ভার।
আর কী বলছে পড়ুয়ারা?
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী প্রত্যাশা বিশ্বাস বলে, ‘‘আজ খুব মজা হয়েছে স্কুলে। ইলিশ, পাঁপড়-চাটনি খেয়েছি স্কুলে।’’ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মাসুরা খাতুন আধো আধো গলায় বলে, ‘‘আমার স্কুলে ভাল ভাল খাবার দেয়। তাই দাদু বলেেছ আমার স্কুলে পড়বে।’’অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক জলঙ্গি দক্ষিণ চক্র দীলিপ মণ্ডল জানান, যার হাত ধরে এই স্কুল এখন মডেল সেই প্রধান শিক্ষকও তাঁর সহপাঠী। তিনি বলেন, ‘‘ইচ্ছে থাকলে কি করা যায় সেটা ওই স্কুলে না এলে বোঝা কঠিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy