Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরায় ডোমকলও

শীত ফুরিয়ে আসছে, প্রাক-ফাগুনে ছুটতে শুরু করেছে শুকনো হাওয়া, সেই হাওয়ায় গ্রাম-শহরের আনাচ কানাচ থেকে আসছে আগুন লাগার খবর, অথচ জেলার অধিকাংশ জায়গাতেই নেই দমকলকেন্দ্র, তারই খোঁজ নিল আনন্দবাজার চারদিকে আগুনের লেলিহান শিখা

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

চারদিকে আগুনের লেলিহান শিখা। গোটা এলাকা দাউদাউ করে জ্বলছে। চোখ বন্ধ করলেই ছবিটা এখনও ভেসে ওঠে জরিনা বিবির। সেই আগুনের সঙ্গে বিস্ফোরণের শব্দটা এখনও গোটা গ্রামের মানুষের কানে বাজে। ডোমকলের কুচিয়ামোড়া গ্রামে গত বছর ঠিক এই সময়ে ভয়াবহ দু’টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়েছিল ১৪টি বাড়ি। রান্নাঘরে থাকা সিলিন্ডার ফেটে জখম হয়েছিলেন এক ব্যক্তি।

আর জলঙ্গির এনায়েতপুর গ্রামে রান্নার গ্যাসের ছোট সিলিন্ডার ফেটে মৃত্যু হয়েছিল তিন জনের। ফলে ফাগুন আসার আগে থেকেই আগুন নিয়ে আতঙ্কে থাকে ডোমকল। আর এই আতঙ্কের বড় কারণ ডোমকলে দমকলকেন্দ্র না থাকা। ডো মকলের বাসিন্দাদের দাবি, একে জেলার প্রত্যন্ত এলাকা ডোমকল। সেখানকার অনেক গ্রামে এখনও চলাচলের উপযুক্ত রাস্তা গড়ে ওঠেনি। তার মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেই ৬০-৭০ কিমি দূর থেকে দমকলের ইঞ্জিন এসে গ্রামে পৌঁছনোর আগেই চোখের সামনে একের পর এক বাড়ি পুড়ে খাক হতে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকে না!

ডোমকল থেকে প্রায় ২০ কমি দূরত্বে ডোমকলের গ্রাম কুচিয়ামোড়ার। এলাকার বড় এই গ্রামে আছে স্কুল থেকে পঞ্চায়েত ভবন। সেখানেই গত বছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়েছিল ১৪টি বাড়ি। গড়াইমারি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের মহম্মদ সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘‘কেবল আগুন নয়, আগুনে সিলিন্ডার ফেটে জখমও হয়েছিলেন এক ব্যক্তি। এখনও সেই অগ্নিকাণ্ডের কথা মনে পড়লে আঁতকে উঠি। গোটা পাড়া ছাই হয়ে গিয়েছিল ঘন্টা খানেকের মধ্যে। আর ঘটনার পরে প্রায় ২ ঘণ্টা পরে গ্রামে এল দমকলের ইঞ্জিন।’’ ডোমকলে দমকল দফতর দ্রুত চালু করার ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে পঞ্চায়েত।

কেবল দূরত্বই বাধা নয়, গ্রামের ভেতরের সংকীর্ণ রাস্তাও দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দমকলের কর্তাদের একাংশের দাবি, অনেক গ্রামে রাস্তা ঘেঁষে পরিকল্পনাহীন ভাবে পাকা বাড়ি তৈরি হচ্ছে। ফলে অনেক গ্রামে দমকলের ইঞ্জিন যেতে বেগ পেতে হয়।

কেবল গ্রাম নয়, অনেক শহর বাজার বা গঞ্জেও কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তৈরি হচ্ছে পাকা বাড়ি। ডোমকল এলাকার শিক্ষক গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘‘রাস্তা দখল করে নেওয়া ডোমকলের সংস্কৃতি হয়ে দাড়িয়েছে। গ্রাম থেকে শহর সব এলাকাতেই ছবিটা প্রায় একই। পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা সব ক্ষেত্রেই নিয়মকানুন মেনে বাড়ি নির্মিত হচ্ছে না।’’

কুচিয়ামোড়া এনায়েতপুর এখনও ফাগুন এলেই আঁতকে ওঠে। হুকোহারা কাশিপুর এখনও সামলে উঠতে পারেনি আগুনের ক্ষত। এর মধ্যে কিছুটা হলেও আশার কথা শুনিয়েছে দমকলের নদিয়া মুর্শিদাবাদের ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস বন্দোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘ডোমকলে আমাদের পরিকাঠামো তৈরি ডোমকলে। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। খুব কম সময়ের মধ্যেই চালু হবে ওই দমকল কেন্দ্র। আর সেটা চালু হলেই ডোমকলের অনেক

সমস্যা মিটবে।’’

তবে ডোমকলের মানুষ ঘরপোড়া গরুর মতই দমকল নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে। তাঁদের কথায়, সামন‌েই লোকসভা ভোট। ফলে তার আগে আর কিছু হবে বলে মনে হয় না। ফলে আরও একটা বছর হয়ত দমকলহীন ডোমকলকে আগুনের আতঙ্কেই কাটাতে হবে দিন!

অন্য বিষয়গুলি:

Domkal Fire Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy