Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
পড়শি জেলা

শিশুশ্রমিক স্কুল বন্ধের নির্দেশ দিল প্রশাসন

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল অনেক দিন থেকেই। শেষ পর্যন্ত কড়া পদক্ষেপ করল জেলা প্রশাসন। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ৭৭টি শিশু শ্রমিক স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল জেলা শিশু শ্রমিক পুনর্বাসন সমিতি। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৪৪
Share: Save:

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল অনেক দিন থেকেই। শেষ পর্যন্ত কড়া পদক্ষেপ করল জেলা প্রশাসন। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ৭৭টি শিশু শ্রমিক স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল জেলা শিশু শ্রমিক পুনর্বাসন সমিতি। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।

২০০৬ সালে নদিয়ায় ১০০টি শিশু শ্রমিক স্কুল চালু হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। স্কুলগুলির নাম দেওয়া হয় ‘স্পেশাল ট্রেনিং সেন্টার’। নদিয়া জেলায় বিভিন্ন শিশু শ্রমিক স্কুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কখনও বা পড়ুয়াদের সংখ্যায় কারচুপি তো কখনও সাধারণ ছাত্রছাত্রীকে শিশু শ্রমিক সাজিয়ে টাকা তুলে নেওয়া।

সম্প্রতি জেলার একশোটি স্কুলের উপরেই সমীক্ষা করা হয়। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, এই সমীক্ষাতে অনেক অনিয়ম ধরা পড়েছে। কোথাও খাতায় কলমে ৫০ জন পড়ুয়া দেখানো হলেও বাস্তবে স্কুলের অস্তিত্বই নেই।

জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “দুর্নীতি বন্ধ করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশ্চর্যজনক ভাবে প্রতিটি স্কুলেই পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০ জন। এটা কি সম্ভব?”

অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন স্কুলগুলির সঙ্গে জড়িত শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, জেলা প্রশাসনের এই সব দাবি কোনও কোনও স্কুলের ক্ষেত্রে আংশিক ভাবে সত্যি। তবে বেশিরভাগ স্কুলেই ভাল পড়াশোনা হয়। এর পিছনে প্রশাসনের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। শিশু শ্রমিক স্কুল তুলে দিয়ে প্রমান করতে চাইছেন, জেলায় কোনও শিশু শ্রমিক নেই। এসটিসি অ্যন্ড স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদিকা চায়না মণ্ডল বলেন, “যাঁরা অনিয়ম করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক প্রশাসন। বাকি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার পিছনে আসল উদ্দেশ্য হল জেলাকে শিশু শ্রমিক শূন্য দেখিয়ে পুরষ্কার পাওয়া।’’ আর এক সংগঠন স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন অফ ন্যাশনাল চাইন্ড লেবার ওযেল ফেয়ার স্কুলের জেলা সম্পাদক সঞ্জয় মিত্র বলেন, “প্রশাসন বলছে, অনেক স্কুলে নাকি শৌচাগার নেই। তাহলে নদিয়া জেলা নির্মল জেলা হিসাবে পুরষ্কার নিয়ে এল কী ভাবে?’’ প্রশাসনের নির্দেশ হাতে পেয়ে সম্প্রতি কৃষ্ণনগরে দুটি সংগঠনের সদস্যরা বৈঠকে বসেন। সেখানেই আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া স্কুলের তালিকাভূক্ত পলাশীপাড়া সতীশ সর্দার এসটিসির শিক্ষক দিব্যেন্দু বিশ্বাস বলেন, “আসলে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য কিছু ছুতো খুঁজে বার করা হয়েছে।”

শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের দাবি, ২০০৬ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে তাঁরা ৩১ মাসের বেতন পাননি। পড়ুয়াদের মাসে মাসে যে ১৫০ টাকা দেওয়ার কথা। সেটাও মেলেনি প্রায় ৪২ মাস। তাঁদের অভিযোগ, “বেতন দেওয়ার কোনও উদ্যোগ নেই। অথচ স্কুল বন্ধ করতে নেমে পড়েছে প্রশাসন।’’

জেলা শাসক বলেন, “শিশু শ্রমিকের সংখ্যা জানতে নতুন করে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, সংখ্যাটা খুবই কম। আর স্কুল কর্তৃপক্ষগুলি বলছেন, সংখ্যাটা ৫ হাজার। যেটা অবিশ্বাস্য।” তবে বন্ধ হতে বসা স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বকেয়া বেতন দ্রুত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক।

অন্য বিষয়গুলি:

child labor schools
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy