খড়্গপুরের পোর্টারখোলিতে আবর্জনার স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ ।
চারিদিকে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে শুয়োর, যত্রতত্র জমে আবর্জনার স্তূপ, নেই শৌচাগারও- পুর পরিষেবার এমন নজির দেখে হতাশ খড়্গপুর শহরের রেল এলাকার বাসিন্দারা। নোংরা জলের দুর্গন্ধ ও দূষণকে সঙ্গী করেই দিনাতিপাত স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, খড়্গপুরে ওয়াই ফাই পরিষেবা চালু করতে চলেছে পুরসভা। কিন্তু রেল এলাকায় এখনও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেনি পুরসভা। রেল ও পুরসভার টানাপড়েনে সাধারণ মানুষের কপালে জোটে শুধু দুর্ভোগ। সামনেই শহরে পুরভোট। ভোট দেওয়ার আগেও তাই এ বার কাজের হিসাবটাও বুঝে নিতে চাইছেন খড়্গপুর রেল কলোনি এলাকার বাসিন্দারা।
শতাব্দী প্রাচীন রেলশহরে বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের বাস। জনসংখ্যা বাড়তে থাকায় ক্রমে রেল কোয়ার্টারের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠে বস্তি। ২০১০ সালে উন্নয়নের কথা ভেবে পুর এলাকার পুনর্বিন্যাস হয়। রেল এলাকাও পুরসভার অধীনে আসে। বর্তমানে খড়্গপুর পুরসভার ১৩, ১৫, ১৮, ২০, ২১, ২২, ২৬, ২৭- এই আটটি ওয়ার্ড রেল এলাকার মধ্যে পড়ে। স্থানীয়দের আশা ছিল, পুরসভার অধীনে আসায় হয়তো এলাকার চিত্রটা বদলাবে। তারপরেও পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও হাল ফেরেনি এলাকার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রেল কলোনি এলাকায় শুধুই হাহাকার। আছের থেকে নেই-এর তালিকাটাই দীর্ঘ। পুরসভার দাবি, রেল কর্তৃপক্ষ মন্ত্রকের নীতি মেনে পুরসভাকে ওই এলাকায় কাজ করতে দিতে নারাজ। ফলে একসময়ের সুসজ্জিত রেল এলাকা এখন অতীত।
শহরের প্রাণকেন্দ্র গোলবাজার সংলগ্ন পোর্টারখোলি এলাকা। অষ্টাদশ শহরের শেষভাগে রেল কারখানা গড়ে ওঠার সঙ্গে বসতি এলাকাগুলি পরিবেশ নির্মল রাখতে হরিজন নিয়োগ করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। বহু বছর ধরেই শহরের এই পোর্টারখোলিতে সমাজের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। তাঁদের একটা অংশ বর্তমানে রেল কোয়ার্টারেই থাকেন। তবে বাইরে থেকে আসা বহু মানুষ এখন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কোয়ার্টারের ধার ঘেঁষেই ঝুপড়ি গড়ে তুলেছেন। রেল কর্তৃপক্ষ সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য শৌচালয়ও গড়ে তোলেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন সেই শৌচালয় বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অনেকেই বাড়ির সামনেই গড়ে তুলেছেন চাঁচের অস্থায়ী শৌচালয়। আবর্জনায় রুদ্ধ সেই শৌচাগার থেকে নির্গত জল বেরনোর নিকাশি নালাও। এলাকার বাসিন্দা সাবিত্রী শুক্লা, রেল কর্মী ললিতকুমার যাদবদের কথায়, “রেল এখন আর এলাকার উন্নয়নে কোনও উদ্যোগ নেয় না। বহুবার আবেদন করেও সাড়া না পেয়ে বছরের পর বছর এ ভাবেই আমরা মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করে যাচ্ছি। দেশকে স্বচ্ছ করার ডাক দেওয়া হলেও আমরা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছি।”
গত পাঁচ বছরে এলাকায় পানীয় জলের বন্দোবস্ত ছাড়া আর কিছু কাজই হয়নি। আবর্জনা সাফাইয়ের জন্য পুরসভা দু’জন সাফাইকর্মীকে নিয়োগ করলেও যথাযথ সাফাই হয় না বলেই অভিযোগ। যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর কংগ্রেসের সুজিতকুমার দাস বলেন, “রেলের ওয়ার্ড হওয়ায় কম অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু তা দিয়েই যতটা সম্ভব কাজ করছি কিন্তু রেল বারবার বাধা দিচ্ছে। আমরা রেলকে লিখিত ভাবে সমস্যার কথা জানিয়েও সুফল পাইনি।” তবে পুরসভার নিয়োগ করা দু’জন সাফাই কর্মীকে দিয়ে যে সাফাই কার্যত অসম্ভব তা স্বীকার করছেন তিনি। একই মত, রেল এলাকার বাকি ওয়ার্ডের অধিকাংশ কাউন্সিলরদেরও।
সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে রেল এলাকার ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানাবর্তী নিকাশি নালা। ফলে ওই এলাকায় বাড়ির সামনেই জমছে বর্জ্য জল। পুরসভার বিরুদ্ধএ ক্ষোভ উগরে দিয়ে এলাকার বাসিন্দা এন গীতা বলেন, “আমরা অনেক আশা নিয়ে পুর নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই আশাও পূরণ করেনি পুরসভা। অন্তত সাফাই তো পুরসভা করতে পারে, কিন্তু সেই কাজটুকুও করে না। এখন মনে হয় ভোট দিয়েই ভুল করেছিলাম।” পথবাতি না থাকায় সন্ধ্যা নামলেই আঁধারে ডুবে যায় নিমপুরা, আয়মা, মথুরাকাটি, নিউ সেটলমেন্টের মতো রেল এলাকার বস্তিগুলি। রেলের পুরাতনবাজার থেকে স্টেশন, ঝাপেটাপুর থেকে স্টেশন, নিমপুরা থেকে অরোরা গেটের রাস্তার দশাও জীর্ণ। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে হরিশচন্দ্র শ্মশান ঘাটের পর নিকাশি নালা কাঁচা হওয়ায় নোংরা জলের দুর্গন্ধে টেকা দায়। স্থানীয় কাউন্সিলর সিপিআইয়ের মুমতাজ কুদ্দুসি বলেন, “রেলের উদাসীনতার জন্য আমাদের ওয়ার্ডগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বহুবার রেলকে ওই নর্দমা পাকা করার কথা জানিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি।”
শহরের পুর-পরিষেবার হাল ফেরাতে কেন উদ্যোগী হচ্ছে না পুরসভা? জবাবে পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের অভিযোগ, “রেল রাজ্যের জমিতে দীর্ঘমেয়াদি লিজে রয়েছে। কিন্তু রেলের কয়েকজন আধিকারিক শহরে তুঘলকি নিয়ম চালু করেছেন।” তাঁর সাফাই, “আমরা শহরে জলের বন্দোবস্ত করেছি। কেন্দ্রীয় সরকার গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর কথা বলেছে। কিন্তু এখানে রেল আধিকারিকেরা বিদ্যুৎ সংযোগের কাজে বাধা দিচ্ছেন।” পুরপ্রধানের দাবি, রেলের বাধাতেই পুরসভা স্বাবলম্বী হতে পারছে না। তাই আমরা আদালতে গিয়েছি। রাজনৈতিক ও আইনি পথে লড়াই চালিয়ে যাব। তবে এত কিছুর পরেও রেল-কর্তৃপক্ষ নিজের জায়গায় অটল। যদিও খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখানে রাজ্যের আইন মেনে রেল এলাকা পুরসভার অধীনে গিয়েছে। কিন্তু রেলের আইন বদলায়নি। রেলের নিয়ম মেনেই আমরা রেলের জমিতে কোনও জবরদখল বা নির্মাণ কাজ করতে দিতে পারি না। প্রশ্ন, তাহলে কেন রেল ওই এলাকার উন্নয়নে উদ্যোগী হচ্ছে না? গৌতমবাবুর জবাব, “যেটুকু অর্থ বরাদ্দ হয়, তা দিয়েই ওই এলাকায় ধারাবাহিক ভাবে উন্নয়ন
কাজ হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy