Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
নোটবন্দির বছর পার, অন্ধকারে আমজনতা

ভাগ্য আর ফেরেনি কাজু শিল্পের

কাঁথি মহকুমায় কাজু প্রসেসিং ইউনিটের সংখ্যা এমন প্রায় সাড়ে সাতশো। ‘নোটবন্দি’র পর বন্ধ হয়ে যায় অনেকগুলিই, দাবি মালিকদের।

বদল: কাজুর কারখানা এখন গাড়ি রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। নিজস্ব চিত্র

বদল: কাজুর কারখানা এখন গাড়ি রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু বেরা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২১
Share: Save:

রাজ্যের কাজুবাদাম শিল্পে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম কাঁথি মহকুমা। কিন্তু সেখানেই এখন রিকশা চালান কাজু প্রসেসিং ইউনিটের শ্রমিক সঞ্জয় মান্না। একই অবস্থা শ্রমিক শেখ তৈমুরের। স্থানীয় সূত্রে খবর, ‘নোটবন্দি’র পর কাঁথিতে কাজ হারান কাজু শিল্পের প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক।

সূত্রের খবর, কাঁথি মহকুমায় কাজু প্রসেসিং ইউনিটের সংখ্যা এমন প্রায় সাড়ে সাতশো। ‘নোটবন্দি’র পর বন্ধ হয়ে যায় অনেকগুলিই, দাবি মালিকদের। কাজু শিল্পে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অর্থাৎ কাঁচা কাজু বীজের প্রায় ৮০ শতাংশ ভারতের বাইরে থেকে আসে। বাকি ২০ শতাংশ আসে অন্যান্য রাজ্য থেকে।

কাঁথির প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত। মহিলারা কাজু বাদাম ছাড়ানোর কাজ করেন। ‘নোটবন্দি’র পর তিন মাস বেতন না পাওয়ায় কারখানায় আসা বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় দক্ষিণ শিলামপুরের অংশুমান প্রধানের কারখানা। এখন সেটিকে গ্যারাজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ‘নোটবন্দি’ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “কারখানা আজও খোলেনি। এতে যে কার লাভ হল, জানি না।” ‘কন্টাই কাজু ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক মলয় সামন্ত বলেন, “আমার কারখানায় ৫০ জন শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। ‘নোটবন্দি’র গেরোয় ব্যাঙ্ক থেকে একসঙ্গে টাকা তুলতে পারিনি। তাই শ্রমিকদের তিন মাস বেতন দিতে পারিনি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাজপুরের এক কাজু কারখানার মালিক বলেন, “নোট বাতিলে বিপদে পড়েছিলাম। এক দিকে শ্রমিকদের বেতনের চাপ, অন্য দিকে পরিবারের প্রাত্যহিক খরচ। সে সময়ে শ্রমিক বিক্ষোভের ফলে চড়া সুদে ধার করেছিলাম। সেই খেসারদ এখনও দিতে হচ্ছে।”

নভেম্বর থেকে জানুয়ারি, এই তিন মাস হল কাজু শিল্পের মরসুম। সে সময়ে কাজ থমকে যাওয়া কার্যত বন্ধ হয়ে যায় বহু ইউনিট। কারখানাগুলিতে পুরনো কাজু জমে যায়।

এ দিকে মার্চের পর কাজু শিল্পে নতুন কাঁচামাল আমদানি করা হয়। সে সময়ে নতুন কাজুর চাহিদা বাড়ে। তাই ফেব্রুয়ারিতে বহু ইউনিটের মালিকই কম দামে, ক্ষতিতে পুরনো কাজু বিক্রি করে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাজনার এক ইউনিটের মালিক বলেন, “তিন মাসে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে।” কাঁথিতে কাজু শিল্পে নিয়ম রয়েছে, বছরে অন্তত ২২৫ দিন কাজ দিতে হবে শ্রমিকদের। ‘নোটবন্দি’র গেরোয় গত বছর এই নিয়মও রয়ে গিয়েছে খাতায় কলমে।

কাজ হারানো শ্রমিকেরা এখন কী করছেন? কাজু প্রসেসিং ইউনিটের কর্মী বেদগেড়া গ্রামের সঞ্জয় মান্না জানান, এখন রিকশা চালিয়ে সংসার চলে তাঁর। আর এক শ্রমিক শেখ তৈমুর কথায়, “যাঁদের কালো টাকা আছে, নোট বাতিলে তাদের তো কোনও ক্ষতি হল না! ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আমাদের মতো গরিব মানুষদেরই ক্ষতি হল।”

আজ, বুধবার ‘নোটবন্দি’র এক বছর পূর্ণ হল। কিন্তু কাজু শিল্পের ঘা কবে শুকোবে, সেই অপেক্ষাতেই কাঁথি।

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Pee nut Factory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy