Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

নামেই নিষেধ, শব্দবাজিতে অতিষ্ঠ শহর

নিষেধাজ্ঞা আছে বটে। তবে তার তোয়াক্কা না করেই দেদার বিকোচ্ছে শব্দবাজি। চকোলেট, দোদোমা, কালীপটকা, নারকেল বোমা— বাদ নেই কিছুই।

বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৪
Share: Save:

নিষেধাজ্ঞা আছে বটে। তবে তার তোয়াক্কা না করেই দেদার বিকোচ্ছে শব্দবাজি। চকোলেট, দোদোমা, কালীপটকা, নারকেল বোমা— বাদ নেই কিছুই।

মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহরেই এক ছবি। পুলিশি নজরদারির ফাঁক গলে শহর এবং শহরতলিতে ঢুকে পড়েছে প্রচুর শব্দবাজি। খড়্গপুর গ্রামীণের মাওয়া, মেদিনীপুর সদরের ছেড়ুয়া, কেশপুরের অকুলথাঁড়া, গড়বেতার উত্তরবিল এলাকা বাজি তৈরির জন্য বিখ্যাত। মূলত ছেড়ুয়া থেকেই এ বার মেদিনীপুরে প্রচুর শব্দবাজি ঢুকেছে। অভিযোগ, গতবার ছেড়ুয়া ও তার আশপাশের এলাকায় যে রকম পুলিশি নজরদারি ছিল, এ বার তা নেই। ফলে, অনেকেই মেদিনীপুর থেকে ছেড়ুয়ায় গিয়ে বাজি কিনে এনেছেন। এর মধ্যে একাংশ ব্যবসায়ীও রয়েছেন। যদিও শব্দবাজি তৈরির অভিযোগ মানতে নারাজ ছেড়ুয়ার বাজি প্রস্তুতকারকরাও। ছেড়ুয়ার বাজি ব্যবসায়ী হাবলু খান বলেন, “বাজি তৈরি হয়েছে। শহর থেকে অনেকে এসে নিয়েও গিয়েছে। তবে সবই বৈধ বাজি।’’

শুক্রবার সন্ধের পর থেকেই মেদিনীপুরে শব্দবাজি ফাটা শুরু হয়েছে। রাত যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শব্দ দৈত্যের তাণ্ডব। আর তা শহরবাসীর ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। প্রবীণ অতনু সমাদ্দার, তপন সাহারা বলছেন, “আওয়াজে বুক ধড়ফড় করে ওঠে। উৎসবের সুরটাই কেটে যায়। শব্দদূষণের বিরুদ্ধে পুলিশকেও তো তৎপর হতে দেখা যায় না।’’ পুলিশের অবশ্য দাবি, মেদিনীপুর ও তার আশপাশ থেকে প্রচুর অবৈধ শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। সর্বত্র নজরদারি চলছে। ছেড়ুয়াতেও অভিযান চালানো হয়েছে। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষও বলেন, ‘‘অবৈধ শব্দবাজি নিয়ে অভিযোগ এলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানও চলে।’’

তবে বাস্তব হল গত বছর পিংলা বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরে বেআইনি বাজি বিরোধী অভিযানে অতি-তৎপর ছিল পুলিশ। প্রথম থেকেই কড়া অভিযান চলেছিল। এ বার অতটা তৎপরতা নেই। ফলে, মেদিনীপুরের মতো বাজি-বাজারগুলোয় প্রকাশ্যে না-হলেও আড়াল-আবডালে চলছে অবৈধ শব্দবাজি বিক্রি।

মিশ্র সংস্কৃতির শহর খড়্গপুরে আবার দীপাবলি-কালীপুজোর জাঁকই আলাদা। এখানেও ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি, তুবড়ির পাশাপাশি চকোলেট, দোদমা, নারকেল বোমার নিষিদ্ধ শব্দবাজির দাপট দেখা যাচ্ছে। বিকোচ্ছে লঙ্কা পটকা, তাল পটকা, দেওয়াল বোমা, শট্‌, সিটির মতো শব্দবাজি। অথচ খড়্গপুরে এখন সব রকমের শব্দবাজিই নিষিদ্ধ। সম্প্রতি কোবরা বাহিনী শহর থেকে ২০টি ‘ইম্প্রোভাইজড্‌ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস’ (আইইডি) উদ্ধার করে। পুলিশের আশঙ্কা, আলোর উৎসবে শব্দবাজির আওয়াজে শহর যখন ডুবে থাকবে, তখন নাশকতার ছক কষা হতে পারে। সেই মতো সব রকমের শব্দবাজিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন মহকুমাশাসক। তা অবশ্য খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে। ইন্দা, পুরাতনবাজার, কৌশল্যা, সুভাষপল্লি, ভবানীপুর, ঝাপেটাপুর, আয়মা, খরিদা, শ্রীকৃষ্ণপুর, কুমোরপাড়া, ছত্তীসপাড়া, ঢেকিয়া, রবীন্দ্রপল্লি, তালবাগিচা এলাকায় অবাধে ফাটছে শব্দবাজি। তালবাগিচার বাসিন্দা সঞ্জীব ঘোষ দস্তিদার বলেন, “ছোট ছোট ছেলেরাই শব্দবাজি ফাটাচ্ছে।’’ মালঞ্চ ঢেকিয়ার বাসিন্দা পাপিয়া সেনেরও বক্তব্য, ‘‘আমাদের এলাকায় মাঝেমধ্যেই শব্দবাজি ফাটছে।” কৌশল্যার বাসিন্দা প্রধান শিক্ষক মদনকুমার নাগের তাই আশঙ্কা, কালীপুজো-দীপাবলির আগে থেকেই যে হারে শব্দবাজি ফাটছে, তাতে আগামী দু’-দিন দাপট কোথায় পৌঁছবে বোঝাই যাচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এত শব্দবাজি ফাটছে কী করে?

শহরবাসীর অভিযোগ, পুলিশি নজরদারির অভাবেই এই পরিস্থিতি। যদিও খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “আমরা বিজ্ঞপ্তির কথা মাইকে প্রচার করছি। পুলিশ গোটা শহরে টহল দিচ্ছে। কেউ শব্দবাজি ফাটালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

illegal fire crackers sound pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy