দিনেদুপুরে ব্যবসায়ী খুনের পরে কেটে গিয়েছে আট দিন। প্রতিবাদে বন্ধ থেকে থানা ঘেরাও সবই হয়েছে। চারজন দুষ্কৃতী এই কাজ করেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। কিন্তু এখনও অধরা খড়্গপুরের গোলবাজারের পেঁয়াজ গদির
মালিক বছর চল্লিশের জয়শঙ্কর সাউ খুনের দুষ্কৃতীরা।
উদ্বেগে ওই ব্যবসায়ীর পরিজনেরা। শহরে একের পর এক দুষ্কর্মের পরে এই খুনের ঘটনায় এখনও আততায়ীরা গ্রেফতার না হওয়ায় আতঙ্কে শহরবাসীও। প্রশ্ন উঠছে পুলিশি তদন্তের অগ্রগতি নিয়েও। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী নেতাদের কটাক্ষ, মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজশের পরে পুলিশ কীভাবে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করবে? তাই সব জেনেও নিষ্ক্রিয় পুলিশ।
পুরভোটের আগে ও পরে অশান্ত থেকেছে অপরাধের রেলশহর। কাউন্সিলরদের বাড়ি লক্ষ করে গুলি চলেছে। হয়েছে একাধিক ছিনতাই। আতঙ্কে আত্মগোপন করতে হয়েছে বিরোধী কাউন্সিলরদের। এই নিয়ে চড়েছে রাজনীতির পারদ। কিন্তু খড়্গপুর বদলায়নি। গত ১৮ জুন দিনের আলোয় খরিদার বাসিন্দা বাবসায়ী জয়শঙ্কর সাউকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। ব্যবসায়ী মহলের একাংশের কথায়, ধারাবাহিকভাবে টাকা চেয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনই কোনও ঘটনার শিকার হতে হয়েছে জয়শঙ্করবাবুকে। যদিও পুলিশের ধারণা, এর পিছনে ব্যবসায় আর্থিক কোনও লেনদেন জড়িয়ে রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তা থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে গোলবাজারের জনতা মার্কেটে খুনের সময়ে চারজন দুষ্কৃতী থাকলেও এর পিছনে অন্য ‘মাথা’ রয়েছে। ইতিমধ্যে ওই চারজনকে শনাক্ত করা গিয়েছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে দু’জন রাজ্যের বাইরে বলে দাবি পুলিশের। খড্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “রাজ্যের বাইরে থাকা দুই দুষ্কৃতীর মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান দেখে খোঁজ চলছে। চারজনকেই শনাক্ত করা গিয়েছে। তদন্তের কাজ সামান্য বাকি।”
কিন্তু বাকি দু’জন তো শহরেই ঘুরছে, তবে তাদের কেন ধরছে না পুলিশ? এক্ষেত্রে পুলিশের দাবি, তদন্তের জাল অনেকটাই গুটিয়ে আনা হয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই গ্রেফতার করা হবে। অবশ্য সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “শহরে পুলিশ-মাফিয়া একটা যোগসাজশ হয়েছে। তাই এই ধরনের জঘন্য অপরাধ ঘটলেও পুলিশ কিনারা করতে পারছে না। পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তা অপরাধীরা প্রশ্রয় পাওয়ায় মানুষ নিরাপদে নেই।”
এ দিকে ছেলে খুনে আগেই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিলেন বাবা বুধরাম সাউ। শনিবার বাড়িতে বসে তিনি বলছিলেন, “পুলিশ বলেছিল ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপরাধী ধরবে। কিন্তু আট দিন পেরিয়ে গেল। দুষ্কৃতীরা ধরা না পড়ায় আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে না। বাজারের ব্যবসায়ীরাও ভয়ে আছে।”
ঘটনায় ৪৮ ঘন্টার বন্ধ ডেকেও একদিন পরেই পুলিশের আশ্বাসে পিছিয়ে এসেছিল জেলা বণিকসভার খড়্গপুর শাখা। এ দিন জেলা বণিকসভার সম্পাদক রাজা রায় বলেন, “পুলিশ আমাদের কাছে সময় চেয়েছিল। কংগ্রেস বিধায়ক চাচা জ্ঞানসিংহ সোহন পালের কাছেও ১০দিন সময় চেয়েছে পুলিশ। কিন্তু এখনও দুষ্কৃতীরা ধরা না পড়ায় আমরা এক-দু’দিনের মধ্যে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে যাব।”
শহরের প্রাণকেন্দ্র গোলবাজারে এমন ঘটনায় আতঙ্কিত শহরবাসী। কারণ, শহরের এই খুনের একমাসের মধ্যে মালঞ্চ এলাকায় দু’টি বড় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। ছিনতাই হয়েছে গোলবাজারের ব্যবসায়ী প্রবীর চক্রবর্তীর সুভাষপল্লির বাড়ির সামনে থেকেও। সে গুলির এখনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে এখন সন্ধ্যে ৮টার পরেই বাজার কার্যত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এখনও আঁধারে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পথ।
শহরের মালঞ্চ এলাকার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখন তো দিনেও শহর নিরাপদ নয়। একজন ব্যবসায়ীর খুনের পরেও যদি অপরাধীরা ঘুরে বেড়ায় তবে তো আতঙ্ক বাড়বেই। এর আগেও একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ কিনারা করতে পরেনি। এটা তো পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রমাণ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy