Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
হাতুড়ের কাছে আশাকর্মীও
Dengue

চারদিনের জ্বরে মৃত্যু আটাং গ্রামে

দিন দশ-পনেরো হাতুড়ের ওষুধ খেয়ে সুস্থও হয়েছিলেন। মঙ্গলবার জ্বরে পড়েন পাঁশকুড়ার আটাং গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের অর্চনা মাইতি। তাঁরও গতি হয়েছিল হাতুড়ের কাছে। তবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় শুক্রবার রাতে ৫০ কিলোমিটার দূরে তমলুক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু রাত ১টা নাগাদই মৃত্যু হয় তাঁর।

নোংরা: ঘরের পিছনেই জমে রয়েছে জল। নজর নেই। নিজস্ব চিত্র

নোংরা: ঘরের পিছনেই জমে রয়েছে জল। নজর নেই। নিজস্ব চিত্র

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০৭:১০
Share: Save:

বাড়ির সকলেই জ্বরে ভুগেছেন। দিন দশ-পনেরো হাতুড়ের ওষুধ খেয়ে সুস্থও হয়েছিলেন। মঙ্গলবার জ্বরে পড়েন পাঁশকুড়ার আটাং গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের অর্চনা মাইতি। তাঁরও গতি হয়েছিল হাতুড়ের কাছে। তবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় শুক্রবার রাতে ৫০ কিলোমিটার দূরে তমলুক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু রাত ১টা নাগাদই মৃত্যু হয় তাঁর।

গ্রামগুলিতে জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে স্বীকার করলেও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল অর্চনাদেবীর মৃত্যুর কারণ সেপটিসেমিয়া বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই মহিলাকে শুক্রবার রাত ৮ টা ২০ মিনিট নাগাদ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। চিকিৎসাও শুরু হয়েছিল। তবে রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসক রিপোর্ট দিয়েছেন সেপটিসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ওই মহিলা মারা গিয়েছেন।’’

ডেঙ্গি জীবাণু ছিল কি ছিল না— তা জানাই যায়নি। কারণ তাঁর রক্ত পরীক্ষা করানোর সুযোগই মেলেনি। তবে তিন-চার দিন ধরে অর্চনাদেবী প্রবল জ্বর, মাথা ও সারা শরীরে যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছেন। সঙ্গে ছিল বমি ভাব। ফলে সেগুলিকে ডেঙ্গির উপসর্গ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

পাঁশকুড়ার হাউর পঞ্চায়েতের আটাং, দশাং, আলুগ্রাম, আমদান, কুলিয়া প্রভৃতি গ্রামে গত প্রায় দেড় মাস ধরে জ্বরের প্রকোপ চলছে। স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দল গেলেও লাভ বিশেষ কিছু হয়নি, অভিযোগ করছেন বাসিন্দারা। কয়েকজনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ভরসা শেষ পর্যন্ত হাতুড়েই।

মৃত অর্চনাদেবীর স্বামী হরিপদ মাইতি বলেন, ‘‘পাশের বাড়িতেই ভাই থাকে। ভাইয়ের বৌ-ও গত আট দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত।’’ গত বৃহস্পতিবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত আটাং গ্রামের সহায়ক স্বাস্থ্য কর্মী (আশা) তনুশ্রী সামন্ত। তিনি নিজেও হাতুড়ের শরণাপন্ন। কেন? কথা এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।

বরং তনুশ্রী বলেন, ‘‘১১ অগস্ট গ্রামে মেডিক্যাল টিম আসা পর্যন্ত ৫৫ জন জ্বরের রোগীর সন্ধান পেয়েছিলাম। গত জুলাইয়ে প্রথমবার রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েনি। চলতি মাসে রক্ত পরীক্ষায় কয়েকজন ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে।’’

হাতুড়ে প্রসঙ্গে মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, ‘‘আক্রান্তদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীরা গ্রামে গিয়ে প্রচার করছেন। কিন্তু একাংশ গ্রামবাসী স্থানীয় ভাবেই চিকিৎসা করাচ্ছেন।’’

আটাং গ্রামের বাসিন্দা অমল নায়েক, শঙ্কর কালীদের অভিযোগ, ব্লক ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে গ্রামে দু’দিন মেডিক্যাল টিম এসে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা হয়নি। এমনকী এলাকায় জমে থাকা জল ও ঝোপ জঙ্গলেও কারও নজর পড়ে না। তার জেরে মশার উপদ্রব বাড়ছেই।

অমলবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে মাত্র ২৫ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার ও ফিনাইল দেওয়া হয়েছে। অথচ এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এখনও জ্বরের প্রকোপ চলছে। কারও দেখা নেই।’’

অগত্যা বাসিন্দারা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রথমে হাতুড়ের কাছে যাচ্ছেন। অবস্থার অবনতি হলে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি বা তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। গত দেড় মাসে কয়েকজনকে আবার কলকাতার নীরলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা করানো হয়েছে। তবে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dengue Fever আটাং Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy