বিদ্যুত্ সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশি অসহযোগিতার উঠল ডেবরায়। অভিযোগ, পুলিশি সাহায্য না মেলায় গুটিকয় মানুষের বাধায় আটকে যাচ্ছে সরকারি প্রকল্পে বিদ্যুদয়নের কাজও! বিদ্যুত্ সংযোগ পাচ্ছেন না এলাকার অন্যান্য মানুষও।
বিদ্যুত্ সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশি সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিডিও থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিদ্যুত্ কর্মাধ্যক্ষ - সকলেই লিখিতভাবে জানিয়েছেন ডেবরা থানার পুলিশকেও। তা সত্ত্বেও পুলিশের সাহায্য মেলেনি। ফলে একটি বাতিস্তম্ভ পুঁততে গিয়ে বারেবারে ফিরে আসতে হয়েছে বিদ্যুত্ দফতরের কর্মীদের। বিদ্যুত্ সংযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ডেবরা থানা এলাকার খানামোহন পঞ্চয়েতের আষাড়ি মৌজার কয়েকটি পরিবার।
বিদ্যুত্ সংযোগের দায়িত্বে থাকা এল এন্ড টি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার রাজীব ষড়ঙ্গীর অভিযোগ, “আমরা চার বার কাজ করতে গিয়েছিলাম। বাধা পেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। তারপর বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতি ও দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। প্রশাসনিক সাহায্য পেলেই আমরা কাজ করতে প্রস্তুত।’’ ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুত্ কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চল হেমব্রম বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও— সকলেই লিখিতভাবে পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে আদালতে গিয়েছিলাম। আদালত পুলিশকে সাহায্যের জন্য নির্দেশ দিলেও পুলিশ সাহায্য করেনি।’’ কেন বাতিস্তম্ভ পুঁততে পুলিশ প্রয়োজন?
বিদ্যুত্ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় ট্রান্সফরমার রয়েছে। রয়েছে একাধিক বাতিস্তম্ভও। কিন্তু এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় সংযোগ দিতে হলে একটি নতুন বাতিস্তম্ভ প্রয়োজন। তা গ্রামেরই একজনের জমির আলে পুঁততে হবে। কিন্তু জমির মালিকেরা জমিতে বাতিস্তম্ভ পুঁততে দিতে রাজি নন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে জমিতে বাতিস্তম্ভ পোঁতা হবে তা জলা জমি। এর ফলে চাষে ক্ষতিরও আশঙ্কা নেই। কারণ, জমির আলে পোঁতা হবে বাতিস্তম্ভ। যা দেখেই আদালতও বাতিস্তম্ভ পোঁতার পক্ষেই রায় দিয়েছিল।
প্রশ্ন উঠছে, তা সত্ত্বেও ওই ব্যক্তি কেন বাতিস্তম্ভ পুঁততে দিতে রাজি নন?
স্থানীয় সূত্রে খবর, তাঁরা একটি নতুন রাস্তা দাবি করছেন। পঞ্চায়েত সমিতি পুরনো রাস্তা সংস্কারের জন্য আশ্বাস দিলেও তাঁরা তাতে রাজি হননি। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে গেলেও জটিলতা কাটেনি। ডেবরা ব্লক তৃণমূল সভাপতি রতন দে-র কথায়, “আমি উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাঁরা রাজি হননি।’’
পঞ্চায়েত সমিতির কার্যকরী সভাপতি আশিস দে-র কথায়, “পাশে রাস্তা থাকা সত্ত্বেও পুকুর বুজিয়ে অন্য দিকে রাস্তা তৈরির প্রস্তাব দিচ্ছিলেন জমির মালিক। তা মানা সম্ভব হয়নি। তাই আমরা আদালতে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। যেহেতু জমিটি জলা জমি ও জমির আলে খুঁটি পোঁতা হবে, ফলে চাষেরও ক্ষতি হবে না। তা দেখে আদালত আমাদের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশের সহযোগিতা না মেলায় আমরা গরিব মানুষ ও অন্যান্য মানুষের বিদ্যুত্ সংযোগের ব্যবস্থা করতে পারছি না।’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, গ্রামে বিভিন্ন ব্যক্তির এক এক রকম দাবি থাকতেই পারে। সবার সব দাবি মেটানো যাবে কিনা তা নিয়ে আলোচনাও চলতে পারে। কিন্তু পুলিশ কী ভাবে আদালতের নির্দেশ অমান্য করছে? তাও আবার সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে? গত বছর থেকে চলতি বছরে পঞ্চায়েত সমিতি মেদিনীপুরের সিভিল আদালত (জুনিয়র ডিভিসন) ও পরপর দু’বার খড়্গপুরের এক্সিটিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে গিয়েছিলেন। রায়ও তাদের পক্ষেই গিয়েছে। তারপর পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে খুঁটি পোঁতার লিখিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তা থানাকে জানানোও হয়। তা সত্ত্বেও থানা পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেনি বলে অভিযোগ।
পুলিশের অসহযোগিতা করার কারণ কী?
অভিযোগ, জমির মালিক পক্ষের সঙ্গে পুলিশের ভাল সম্পর্ক। তাই জমির মালিকের মতোই পুলিশও বারেবারে আগে রাস্তা তৈরির উপরেই জোর দিতে বলেছে পঞ্চায়েত সমিতিকে। ফলে নিখরচায় যে সব গরিব মানুষের বাড়িতে সংযোগ দেওয়ার কথা, তাঁরাও যেমন সংযোগ পাননি তেমনি সাধারণ মানুষও সংযোগ পাননি। বিদ্যুত্ সংযোগ না পাওয়া শান্তনু আদগিরির কথায়, “দু’বছর হতে চলল বিদ্যুত্ সংযোগের জন্য আবেদন জানিয়েছি। টাকাও জমা দিয়েছি। অথচ, আলো থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। পাখা না থাকায় গরমেও কষ্ট হয়।” জয়ন্ত প্রামাণিক বলেন, “এই নতুন সংযোগ হলে গ্রামে লো ভোল্টেজ সমস্যা থাকবে না। গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারেই বিদ্যুত্ও পৌঁছে যাবে।’’ এ বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতির কথায়, “ভাবতেই পারছি না, একজন থানার ওসি, কী ভাবে বারংবার আদালতের নির্দেশ অমান্য করেন! বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’
ডেবরা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁরা রাস্তার দাবি করেছেন, তাঁদের সঙ্গে থানার সখ্যতা থাকায় পুলিশও চেয়েছিল রাস্তা তৈরি করার পরেই বাতিস্তম্ভ করা হোক। এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে মধ্যস্থতা করার চেষ্টাও করে। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতি তাতে রাজি হয়নি। থানার এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “বাতিস্তম্ভের পাশাপাশি রাস্তাটিও হয়ে গেলে ভাল হত।” তাই বলে আদালতের নির্দেশ অমান্য করবেন? ওই পুলিশকর্মীর কথায়, “পঞ্চায়েত সমিতি নিতান্তই তাতে রাজি না হলে, পরে বাতিস্তম্ভ পোঁতার কাজেই সাহায্য করতে যেতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy