দয়া করে ৫০০ টাকা দেবেন না! এমনই আবেদন এক বিক্রেতার। মেদিনীপুরের রাজাবাজারে।
চিত্র এক: ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণার পরেই বেজায় চিন্তায় পড়ে যান খড়্গপুরের অমিত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কাছে একটাও একশো টাকা নেই। সব পাঁচশো টাকার নোট। চিন্তা নিয়েই বুধবার সকালে বাজারে যান তিনি। বাজারে মাছ কিনে পাঁচশো টাকা বের করতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন বিক্রেতা। কিন্তু টাকা যে নেই, কী হবে। অনেক অনুরোধের পর মাছ বিক্রেতা ধারে মাছ দিতে রাজি হয়ে গেলেন। অমিতবাবুর কথায়, ‘‘এই প্রথম ধারে বাজার করলাম। তাও রক্ষে যে পেয়েছি এটাই অনেক।’’
চিত্র দুই: খড়্গপুরের একটি নার্সিংহোমে বুধবার চোখের অস্ত্রোপচার করাতে আসেন কেশিয়াড়ির খাজরার রাধারানি চন্দ। অস্ত্রোপচারের জন্য দরকার ছিল ১২ হাজার টাকা। এই টাকার বেশিরভাগটাই ৫০০ টাকার নোটে জমা দিতে যান রাধারানিদেবীর ছেলে পীযূষবাবু। যদিও প্রথমে টাকা নিতে অস্বীকার করেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অস্ত্রোপচার কি বন্ধ থাকবে। একের পর এক রোগীর এমন পরিস্থিতি দেখে আপাতত টাকা ছাড়াই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দু’দিন পরে টাকা মিটিয়ে দিলেই হবে।
শুধু অমিতবাবু বা রাধারানিদেবী নন, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে এমন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন আরও অনেকে। গোলবাজারের পাইকারি বাজারেও এ দিন সমস্যায় পড়েন অনেকে। গোলবাজারে বাজার করতে এসেছিলেন ডিভিসির বাসিন্দা আইআইটি অতিথি নিবাসের কর্মী শিবু রাও। শিবুবাবুর কথায়, “অনেক কিছু কেনার ছিল। কিন্তু পাঁচশো টাকার নোট কেউ নিতে চাইছে না। তাই যে কটা একশো টাকার নোট ছিল, তাই দিয়েই সামান্য কিছু বাজার করলাম।’’
৫০০ ও ১০০০ টাকা না দেওয়ার কথা জানিয়ে নোটিস দেওয়া হয়েছে বুধবার খড়্গপুরের এক সোনা দোকানে।
মেদিনীপুরেও ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিতে অস্বীকার করেন অনেক বিক্রেতা। এ দিন বাজার করতে গিয়ে চিন্তায় পড়ে যান মেদিনীপুরের বাসিন্দা গণেশ মাইতি। আলু কেনার পরই বিক্রেতা হাতজোড় করে জানালেন, দয়া করে ৫০০ টাকার নোট দেবেন না। গণেশবাবু চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘তাহলে বাজার করব কী করে?’ বিক্রেতা সুশান্ত চাবড়ি তাঁকে স্বস্তি দিয়ে জানালেন, ‘‘পরে দেবেন। আপনি তো চেনা লোক।”
ক্রেতাদের সমস্যা দেখে অনেকে অবশ্য ৫০০ টাকার নোট নিয়েও নিয়েছেন। মেদিনীপুরের এক পেট্রোল পাম্পে গিয়েও দেখা গেল, তাঁরা ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট নিতে রাজি। কিন্তু পুরো টাকার তেল কিনতে হবে। ৫০০ টাকা দিয়ে ২০০ টাকার তেল কিনলে চলবে না। কেন? পেট্রোল দোকানের মালিক জানিয়ে দিলেন, “আমি কি ১০০ টাকার নোট তৈরি করব। এত টাকা ফেরত তেব কোথা থেকে।’’
যদিও ব্যবসা বাঁচাতে অনেকে এ দিন ধারেই বিক্রিবাটা করেছেন। খড়্গপুরের চাল ব্যবসায়ী বাবলু কুণ্ডু, লক্ষ্মণ বৈশ্যদের কথায়, “৫০০ টাকার নোট নিলে পরে ব্যাঙ্কে জমা দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হবে। তাই যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলছি। তবে ব্যবসা তো চালাতে হবে। তাই পরিচিতদের ধারেই চাল বিক্রি করছি।” শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের সম্পাদক বুলান দাশগুপ্তও বলেন, “আমরা মানুষকে টাকার জন্য ফিরিয়ে দিইনি। পরে টাকা দিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে পরিষেবা প্রদান করেছি।”
এ দিন ১০০ টাকার অভাবে রেলের টিকিট কাটতে গিয়ে অনেক যাত্রী বিপাকে পড়েন বলে অভিযোগ। বুধবার ও বৃহস্পতিবার রেলের টিকিট টাকার কাটার ক্ষেত্রে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট ব্যবহারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তারপরেও অনেক বুকিং কাউন্টারে ৫০০ টাকার নোট নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এ দিন ঘাটশিলা যাওয়ার টিকিট কাটতে খড়্গপুর স্টেশনে গিয়েও ফিরে আসেন তারাচাঁদ মুর্মু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘চারজনের জন্য ঘাটশিলার টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ৫০০ টাকার নোট নিতে চাইছেন না বুকিং ক্লার্ক।” একইভাবে, আদ্রার বাসিন্দা সুজিত প্রসাদেরও অভিযোগ, ‘‘খড়্গপুর থেকে ট্রেনে হায়দরাবাদ যাব। টিকিট কাটতে ১০০০ টাকার নোট দিলেও নিচ্ছে না। খুব সমস্যায় পড়েছি।’’ এ বিষয়ে খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারি বলেন, “সকলে যদি ৫০০, ১০০০ টাকার নোট দিয়ে টিকিট কাটেন তবে বুকিং ক্লার্ক কী ভাবে খুচরো দেবেন। তাই একটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছি।”
— ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল ও রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy