এখানেই বোমা ছোড়া হয় ব্যবসায়ীকে।
দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে এক ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠল। ঘটনাস্থল হলদিয়ার দুর্গাচক থানার মঞ্জুশ্রী এলাকায়। বুধবার রাতের এই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন ব্যবসায়ী মন্টুগোপাল অধিকারী। তাঁকে প্রথমে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে জখম ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আটক করা হয়েছে এক যুবককে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ব্যবসা নিয়ে রেষারেষির জেরে ওই ব্যবসায়ীর উপর বোমা ছোড়া হয়। একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদতে ঘাটালের বাসিন্দা মণ্টুগোপালের ফাইবারের আসবাপত্রের দোকান রয়েছে দুর্গাচকে। বছর একত্রিশের মন্টুগোপাল স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মঞ্জুশ্রী এলাকায়। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ দোকান বন্ধ করে সাইকেল চেপে বাড়ি ফিরছিলেন মন্টুগোপাল। সেই সময়ই তাঁর পিছু নেয় বাইক চেপে দুই যুবক। তাঁদের মুখ ঢাকা ছিল কাপড়ে। মন্টুগোপালের স্ত্রী বিপাশাদেবীর কথায়, ‘‘বাড়ির কাছাকাছি আসার সময়ই আমার স্বামী দিকে বোমা ছোড়ে ওরা। বিকট শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি, রাস্তা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আর আমার স্বামী রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছে। এই ঘটনা ওর মুখ থেকেই পরে শুনেছি।’’ জানা গিয়েছে, মন্টুগোপালবাবুর মুখের ডানদিক কিছুটা ঝলসে গিয়েছে।
বন্দর শহর হলদিয়ায় এমন ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। এলাকার বাসিন্দা রাধেশ্যাম মণ্ডলের কথায়, ‘‘এলাকায় এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। রাতে বিকট শব্দ শুনে গিয়ে দেখি এমন ঘটনা। আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’’ স্থানীয় আর এক ব্যবসায়ী অলোক চক্রবর্তী বলেন, “আমরাও তো রাতবিরেতে ব্যবসার কাজ সেরে ফিরি। মন্টুবাবুও আমাদের সঙ্গে ফেরেন। কি যে হয়ে গেল!’’ দুর্গাচক কলোনি বাজার দোকানদার সমিতির সম্পাদক শঙ্কর মাইতি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমরা খুব আতঙ্কিত। পুলিশের কাছে গিয়ে দ্রুত অভিযুক্তকে খুঁজে বার করার দাবি জানানো হবে।’’ অথচ এই এলাকাতেই রয়েছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির অফিস। সেখানে বসেই জেলার তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার বললেন, ‘‘রাতে আমরাও এই অফিস বন্ধ করে চলে গিয়েছিলাম। সকালে এসে শুনি এই ঘটনা।’’ এমন জমজমাট এলাকায় এমন বোমাবাজির ঘটনা ঘটল কীভাবে? উত্তর মেলেনি।
ব্যবসায়ী আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ফের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল মহকুমা জুড়ে। বন্দর শহরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন পর্যটনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী স্বয়ং। তারপর হলদিয়াকে নজরদারি ক্যামেরা দিয়ে মুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। সেই কাজ বেশ কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর অবশ্য ক্যামেরার কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তারপর ফের উন্নতমানের নজরদারি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে শহরে। দুর্গাচক এলাকায় বাজার, দোকান, ছোট ব্যবসায়ী, মাঝারি মাপের কোম্পানি রয়েছে। এমন রমরমে এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে বোমা মারার ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সিসিটিভি নজরদারিও কোনও সাহায্যে এল না। শহরে রাতে পুলিশ টহলদারি আরও কড়া করার বিষয়েও সওয়াল করেছেন স্থানীয়রা।
পুলিশ কর্তাদের দাবি, মূল সড়কে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কিন্তু গলিপথে ক্যামেরা না থাকায় কোনও ছবি ধরা পড়েনি। চাপে রয়েছে প্রশাসনও। হলদিয়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক তন্ময় মুখোপাধ্যায় আক্রান্ত ব্যবসায়ীর সঙ্গে কলকাতায় গিয়ে দেখা করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “নাগরিক নিরাপত্তা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। কোন খামতি পুলিশের পক্ষ থেকে ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটেছে যা অস্বীকার করা যাবে না। তবে বিচ্ছিন্ন এই ঘটনা দিয়ে হলদিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিচার করা উচিত নয়।’’
নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy