স্টলে আদিবাসী মহিলাদের ভিড়।—নিজস্ব চিত্র।
জৈব সার ও জৈব পদ্ধতিতে কীটনাশক তাঁরা নিজেরাই তৈরি করেন। আর তা দিয়ে শ্রী পদ্ধতিতে ধান ও সব্জি চাষ করে রীতিমতো সফল জঙ্গলমহলের স্ব-সহায়ক দলের আদিবাসী-মূলবাসী মহিলারা। সেই সাফল্যের মন্ত্র বাকিদের সঙ্গে ভাগ করে নিতেই লালগড় ব্লকের রামগড় অঞ্চলের ১৪০টি স্ব-সহায়ক দলের মহিলারা শুক্রবার অড়মা গ্রামের ফুটবল মাঠে কৃষি মেলার আয়োজন করলেন। মেলার মূল আয়োজক স্থানীয় ‘জানাম আয়ো সঙ্ঘ’-এর সম্পাদিকা ধনি সরেন জানালেন, শ্রী পদ্ধতির চাষে এলাকাবাসীকে আগ্রহী করে তুলতেই এই মেলার আয়োজন।
জানাম আয়ো সঙ্ঘের আওতায় রয়েছে রামগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৪০ টি মহিলা স্ব-সহায়ক দল। মোট সদস্য সংখ্যা ১,৪০০ জন। মেলা করার খরচ জুগিয়েছেন সদস্যারাই। এ জন্য প্রত্যেক সদস্যা নগদ তিরিশ টাকা ও এক কিলো করে চাল দিয়েছেন। সেই টাকায় মেলার মঞ্চ থেকে স্টল তৈরি হয়েছে। মাইক ভাড়া করা হয়েছে। কেনা হয়েছে পুরস্কারের ট্রফি। অনুদানের চালে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ দিন মেলার উদ্বোধন করেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ। নির্মলবাবুর কথায়, “নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রামগড় পঞ্চায়েত এলাকার আদিবাসী-মূলবাসী সম্প্রদায়ের মহিলারা নজির গড়েছেন। কৃষি দফতর ও জাতীয় স্তরের কৃষি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রদান’-এর কারিগরি সহযোগিতায় বছর তিনেক আগে মহিলা স্ব-সহায়ক দলের কয়েক জন সদস্যা শ্রী পদ্ধতিতে ধান ও সব্জি চাষ শুরু করেছিলেন। এখন সেই সংখ্যাটা তিনশো ছাড়িয়ে গিয়েছে।” মহিলাদের এই মেলা দেখে অভিভূত নির্মলবাবু স্ব-সহায়ক দলগুলিকে উদ্যান পালন দফতর থেকে এক কালীন উৎসাহ ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
লালগড় ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা রণজিৎ পোদ্দার বলেন, “রামগড় অঞ্চলের ৩৪৮ জন মহিলা শ্রী পদ্ধতিতে ধান ও সব্জি চাষ করছেন। এ ছাড়া এলাকার বিভিন্ন গ্রামে নিজেরাই জৈব সার ও জৈব কীটনাশক-ছত্রাক নাশক তৈরি করছেন মহিলারা। এই চাষে কম খরচে অধিক ফলন হচ্ছে। মেলায় সেই কথা জানতে পারছেন আরও অনেকে।” প্রদান সংস্থার লালগড় ব্লক এলাকায় কর্মরত একজিকিউটিভ সৌরভ মাইতি বলেন, “এলাকার ৩০ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষি সহায়ক হিসেবে চাষিদের উৎসাহিত করছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন। সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দিচ্ছেন।”
শ্রী পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য কেঁন্দডাঙা গ্রামের ছবিরানি মাহাতোকে এ বছরের সেরা ধান চাষির পুরস্কার দেওয়া হয়। তিনি জানালেন, আগে বিঘে প্রতি সাত কুইন্ট্যাল ধানের ফলন হতো। শ্রী পদ্ধতিতে চাষ করে এবার বিঘে প্রতি সাড়ে দশ কুইন্ট্যাল ফলন হয়েছে। সেরা সব্জি চাষির পুরস্কার পাওয়া বেনাচাপড়া গ্রামের রিনা হেমব্রম জানালেন, শ্রী পদ্ধতিতে করলা ও ঢেঁড়শ চাষ করে প্রতি ডেসিমেলে ৯৪৭ টাকা লাভ হয়েছে। লাভের অঙ্কটা প্রায় দ্বিগুণ। বেলবনি গ্রামের বিরবাহা স্বসহায়ক দলটিকে সেরা দলের পুরস্কার দেওয়া হয়। জানা গেল, চাষাবাদের পাশাপাশি, গ্রামের উন্নয়ন, শিক্ষা ও সার্বিক স্বাস্থ্যবিধানে বাসিন্দাদের সচেতন করার ক্ষেত্রে এই দলটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। স্ব-সহায়ক দলগুলির উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য পশ্চিম শালুকা গ্রাম সংসদের সাগেন সাকাম উপ-সঙ্ঘকে পুরস্কৃত করা হয়।
মেলায় শ্রী পদ্ধতিতে চাষ ও জৈব সার তৈরি হাতে কলমে শেখার মডেল সহযোগে স্টল ছিল। উৎপাদিত সব্জির প্রতিযোগিতামূলক প্রদর্শনী ছিল। সন্ধ্যায় আদিবাসী লোক সংস্কৃতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ম্যাজিক শো-র আয়োজন করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy