উত্তরে হিমশিম
কোথাও শিক্ষকদের ঘুম নেই, কাল কী হবে ভেবে। কোথাও পড়ুয়াদের পাতে সমানে সয়াবিন। মালদহ থেকে জলপাইগুড়ি, উত্তরের বেশির ভাগ জেলাতেই মিড ডে মিল নিয়ে হিমশিম অবস্থা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যা প্রাথমিক স্কুলে। কারণ, অনেক জায়গায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে এখন টেস্ট পরীক্ষা চলছে। ফলে মিড ডে মিলের বালাই নেই। কিন্তু প্রাথমিকে রোজ বাচ্চাদের পাতে কী দেওয়া হবে, তা নিয়ে মাথা খারাপ হতে বসেছে রায়গ়ঞ্জ, বালুরঘাট, জলপাইগুড়ি, মালদহের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। অনেকেই পকেট থেকে টাকা দিয়ে পাত ভরাচ্ছেন। কেউ কেউ সব্জি বাজারে ধারে বাজার করতে চাইছেন। হাতে ধরে অনুরোধ করছেন, যাতে বাচ্চাদের কথা ভেবে দোকানিরা সদয় হন। কেউ সাড়া পাচ্ছেন। তাই কোথাও শিশুদের পাতে এখনও ফুল কপি, বাঁধা কপির দেখা মিলছে। কোথাও দোকানিরা কড়া। তাই সেখানে বরাদ্দ শুধু সয়াবিন। কচ্চিৎ ডিমের দেখা মিলছে। কিন্তু দেখা দিয়েই সে মুখ লুকোচ্ছে।
এই অবস্থায় মালদহের গাজোলে শ্যামসুখী বালিকা শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষিকা প্রতিভা পোদ্দার চেক বই হাতে নিয়ে ঘুরছেন বাজারে। বোঝাচ্ছেন, চেক না নিলে টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই তাঁদের। ‘‘কাজটা সহজ ছিল না। তবু করতে হল,’’ বললেন তিনি। ইসলামপুরের কদমগাছি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ বৈদ্য বলেন, ‘‘সব্জির পাইকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকেই বাকিতে সব্জি নিয়ে যাচ্ছি।’’ বালুরঘাটে কোথাও চলছে বিনিময় প্রথা।
এই অবস্থায় কিছুটা স্বস্তি কোচবিহারে। লোকসভা উপনির্বাচনের জন্য সেখানে শুক্রবার থেকেই বেশ কিছু স্কুল বন্ধ। দিন দুয়েক যে ভাবতে হচ্ছে না, তাতেই হাঁফ ছেড়েছেন বেঁচেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ!
ভাঙাতে জেরবার
বেলপাহাড়ি ব্লকের শিমূলপাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বসহায়ক দলের
সদস্যা অনিতা মানকি, বেলারানি মানকিদের বক্তব্য, “ব্যাঙ্ক থেকে ২ হাজার টাকার নোট দেওয়া হচ্ছে। গরিব এলাকায় এত বড় নোট ভাঙাব কোথায়? খুচরোর অভাবে তাই ডিম ও শাকসব্জি কেনা যাচ্ছে না। তাই বাগান থেকে লাউ, কুমড়ো চেয়ে চিন্তে চালাচ্ছি।” ঝাড়গ্রাম ব্লকের আগুইবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের জঙ্গলে ঘেরা কুমারী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বরূপচন্দ্র বিশুই বলেন, “স্থানীয় দোকানদার এখনও সহযোগিতা করে চলেছেন। এ ভাবে চললে জানি না পরে কী হবে!”
ধারেই ভরসা
খড়্গপুর শহরের ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের মিড-ডে মিলের টাকা এসেছে নভেম্বরে। কিন্তু টাকা তুলতে না পারায় শোধ করা যায়নি ধার। ফলে মিড-ডে মিল চালাতে ধারই ভরসা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থ ঘোষ বলেন, “২৭ নভেম্বর পর্যন্ত পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণির মিড-ডে মিল চলবে। কিন্তু নভেম্বর মাসে যে টাকা এসেছে, তা ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে না পারায় সেপ্টেম্বর মাসের ধারের টাকাই শোধ করতে পারিনি।”
পাতে পেঁপে
নোটের চোটে বাড়ন্ত খুচরো টাকা। মিড-ডে মিলের সব্জি কিনতে হিমশিম দশা। স্কুলের পড়ুয়াদের পাতে সব্জির সংস্থান করতে তাই নিজের বাড়ির গাছের পেঁপে নিয়ে এলেন কাঁথির শ্রীরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীলরতন সাউ। নীলরতনবাবুর কথায়, ‘‘ডাল, মশলাপাতির মাসকাবারি বাজার করা থাকে। কিন্তু সব্জি, আনাজ প্রতিদিন কিনতে হয়। খুচরো না থাকায় স্কুলের দেড়শো-দু’শো জন ছাত্রছাত্রীর মিড ডে মিলের বাজার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির বাগানের গাছের পেঁপে নিয়ে এসে আজকের দিনটা চলে গেল। এর পরে কী হবে জানি না।’’
মিড-ডে মিল চালাতে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কাছেও তাঁদের বাড়ির বাগানের সব্জি ধারে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন কাঁথির বনমালীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম সিংহ ও ঘাটুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্নেহলতা পাণিগ্রাহী। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘বাড়ির বাগানের বা খেতের সব্জি ধারে দিতে অনুরোধ করেছি অভিভাবকদের।’’
সমস্যা কম
নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়ায় বিশেষ সমস্যা নেই বলেই জানিয়েছেন একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের যুক্তি, স্থানীয় দোকান থেকে তাঁরা ধারে মাল কেনেন। মাসের শেষে বা পরের মাসের গোড়ায় সেই বকেয়া মেটান চেকে। নভেম্বরের গোড়ায় আগের মাসের বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছে বেশির ভাগ স্কুল। ফলে হাজার বা পাঁচশোর নোট বাতিলের প্রভাব এখনও তাঁদের ঘাড়ে চেপে বসেনি। হাওড়ায় কিছু স্কুলে টেস্ট পরীক্ষা চলছে বলে মিড ডে মিলের সমস্যা আপাতত নেই। বীরভূম জেলায় অবশ্য কয়েকটি স্কুলে সমস্যা রয়েছে। টাকা না থাকায় তাঁরা রাধুনিদের বেতন দিতে পারছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy