এক সময় ভেষজ লতাগুল্মের খোঁজে কবিরাজেরা বনে ঘুরে বেড়াতেন। সে সমস্ত দিন তামাদি হয়ে ঠাঁই নিয়েছিল গল্পের বইয়ের পাতায়। কিন্তু হালফিলে ফের ভেষজের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মানুষের। এ বারে তাই বনের মধ্যেই সাজানো বাগান গড়তে উদ্যোগী হল বনদফতর। পুরুলিয়া জেলার তিনটি ডিভিশনেই ভেষজ লতাগুল্মের বাগান গড়া হবে বলে দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জেলা বন আধিকারিক (কংসাবতী দক্ষিণ) উৎপল নাগ জানান, ওই ডিভিশনে মানবাজার থানার কুঁয়োরডি এবং মাড়োয়াগাড়া গ্রামে ২০ হেক্টর জমিতে ওষধি বাগান গড়া হবে। মানবাজার রেঞ্জ আধিকারিক সুরেশ বর্মন বলেন, ‘‘সম্প্রতি দু’টি বনরক্ষা কমিটির সদস্যদের নিয়ে আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। জেলার সহকারি বন আধিকারিক ব্যোমকেশ দত্তও ছিলেন। ওই বৈঠকে বনরক্ষা কমিটিগুলিকে ভেষজের বাগান গড়ার আর্থিক লাভের দিকটি বোঝানো হয়েছে।’’ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, কংসাবতী উত্তর এবং পুরুলিয়া ডিভিশনের কর্মী এবং আধিকারিকেরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন।
কী রকম হবে ভেষজের বাগান?
মাড়োয়াগাড়া এবং কুঁয়োরডিতে শাল গাছের জঙ্গল রয়েছে। বন দফতরের আধিকারিকেরা জানান, সারি সারি গাছের মধ্যে অনেকটা ফাঁকা জমি থাকে। আপাতত সেখানেই বাগান গড়া হচ্ছে। জমির মাটি পাওয়ার টিলার দিয়ে খুঁড়ে সরু সরু খাল করে তার মধ্যে গাছ লাগানোর কাজ চলছে। প্রথম পর্যায়ে লাগানো হবে ঘৃতকুমারী এবং সিট্রোনেলা গাছ। পরের দফায় সর্পগন্ধা, গুড়মার প্রভৃতি লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
দফতরের আধিকারিকেরা জানান, শুধু পুরনো গাছের ফাঁকে লতা-গুল্মের চাষ নয়, পরে পুরোদস্তুর ভেষজের বাগান গড়ে তোলা হবে। বনের মধ্যে ফাঁকা জায়গা খুঁজে সেখানে লাগানো হবে আমলকি, হরিতকি, বহড়া, নিম, অর্জুন, পিয়াশাল, অশোকের মতো বড় গাছ। তারই ফাঁকে ফাঁকে থাকবে ছোট গুল্ম। বড় গাছের গা বেয়ে উঠে যাবে ভেষজ লতা। এই বছর শালের জঙ্গলে গুল্মের চাষ করে আগামী বছরই বড় গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে দফতরের।
ভেষজ চাষে লাভ কী?
বৈঠকে বনরক্ষা কমিটিগুলিকে লাভের অঙ্ক বোঝাতে গিয়ে দফতরের কর্তারা জেলার একটি সংস্থার উদাহরণ টেনে এনেছিলেন। তাঁরা জানান, ওই সংস্থা সম্প্রতি পাঁচ বিঘা জমিতে ঘৃতকুমারী চাষ করেছিল। বীজ কেনা থেকে শুরু করে জমি তৈরি, সেচ, রক্ষণাবেক্ষণ-সহ মোট খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা। বনদফতরের কয়েক জন কর্তা তাঁদের দিল্লির একটি ওষুধ তৈরির নামজাদা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। সংস্থাটি এক বছরের মধ্যে দু’ দফায় গাছ বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন বলে বৈঠকে দাবি করা হয়েছে।
আধিকারিকেরা জানান, পুরুলিয়ার মাটিতে ঘৃতকুমারী দ্রুত বাড়ে। মাস ছয়েকের মধ্যেই পাতা কেটে বিক্রি করা যায়। আপাতত বনদফতরের তত্ত্বাবধানে দু’টি বনরক্ষা কমিটির সদস্যদের নিয়ে বীজ সরবরাহ, মাটি তৈরি, বেড়া দেওয়া প্রভৃতি কাজ করা হবে। পরে রক্ষণাবেক্ষণের ভার তুলে দেওয়া হবে বনরক্ষা কমিটির হাতে। পরে আরও কয়েকটি বনরক্ষা কমিটিকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হতে পারে বলে জানিয়েছে দফতর।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে চাষ করা গাছগুলি ওষুধ বা প্রসাধন তৈরির বিভিন্ন সংস্থাকে বিক্রি করা হবে। লাভের টাকা জমা পড়বে বনরক্ষা কমিটির তহবিলে। পরে দফতর নিজেই চাষ করা ওষধি গাছ থেকে তেল তৈরির কথা ভাবনা চিন্তা করছে।
এক আধিকারিক জানান, সিট্রোনেলা গাছের চাষ বাড়লে পুরুলিয়াতেই একটি তেল নিষ্কাশনের যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বন দফতরের।
দফতর জানিয়েছে, ঔষধি গাছের চাষ এবং পরিচর্যা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য মেদিনীপুরে বনদফতরের একটি স্বাধীন ডিভিশন রয়েছে। সেখান থেকেই পুরুলিয়া বন দফতরকে ওষধি গাছের বীজ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনীয় যাবতীয় পারামর্শও মিলবে সেখান থেকেই। সেই বাগানে বন আরও সবুজ হওয়ার পাশাপাশি অনেক মানুষের আয়েরও উৎস হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy