লণ্ডভণ্ড ঘর। রবিবার, আইএ ব্লকের সেই বাড়িতে। ছবি: ঋজু মজুমদার
ছিনতাইয়ের চেষ্টার পরে এ বার চুরি। রবিবার বিধাননগরের দক্ষিণ থানা এবং কমিশনারেটের সদর দফতরের নাকের ডগায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের উল্টো দিকে সেই আইএ ব্লকেই একটি ফাঁকা বাড়িতে অনায়াসে চুরি করে পালাল দুষ্কৃতীরা। ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরপর এমন ঘটনায় তাঁরা আতঙ্কিত। পুলিশের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। চুরির ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
পরপর কয়েকটি অভিযানের পরে বিধাননগরে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল বলেই দাবি বাসিন্দাদের। কিন্তু আই এ ব্লকে পরপর দু’টি ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠেছে, বিধাননগরে চুরি-ছিনতাই আটকাতে পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ হচ্ছে কেন। কিছু দিন আগেই ভরসন্ধ্যায় আই এ ব্লকে এক মহিলার গলা থেকে হার ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছিল। তার পরে পুলিশকে নজরদারি বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছিল বলে দাবি বাসিন্দাদের। সেই মতো নজরদারিও চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তার মাঝেই ফের চুরির ঘটনা ঘটল।
পুলিশ জানায়, আই এ ব্লকের প্রবীণ নাগরিক তুষার ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী বেঙ্গালুরুতে ছেলের বাড়িতে গিয়েছিলেন। দিন কুড়ি ধরেই বাড়ি ফাঁকা ছিল। রবিবার দুপুরে মালি দেখতে পান, বাড়ির পিছনের গ্রিল কাটা। খবর পেয়ে ছুটে যান তুষারবাবুর মেয়ে-জামাই। হাজির হন স্থানীয় ব্লক কমিটির সদস্য ও তাঁর প্রতিবেশীরা। ঘরে ঢুকে দেখা যায়, একাধিক আলমারি ভাঙা। নগদ টাকা ছাড়াও গয়নাও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাড়ির সদস্যরা। দোতলার কোনও ঘরই বাদ দেয়নি দুষ্কৃতীরা। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, চুরির ধরন দেখে মনে হচ্ছে, দীর্ঘক্ষণ ধরেই চুরির ঘটনা ঘটেছে।
আইএ ব্লক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ মজুমদার বলেন, “এ বার মনে হচ্ছে বাড়ি ফাঁকা রেখে কোথাও যাওয়া যাবে না। কিছু দিন আগেই ব্লকের এক বাসিন্দার কাছ থেকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছে। তার পরেও পুলিশি নজরদারি ঢিলেঢালা!” কমিটির আর এক সদস্য প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ছিনতাইয়ের পরে পুলিশ নজরদারি বাড়ানোর আশ্বাস দিলেও আখেরে যে কাজ হয়নি, তা স্পষ্ট। আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।”
প্রতিবেশীদের দাবি, বেশ কিছু দিন তুষারবাবু বাড়িতে নেই। যে ভাবে চুরি হয়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে ওই বাড়ি নিয়ে রীতিমত রেকি করেছে দুষ্কৃতীরা। তুষারবাবুর জামাই ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “একতলা-দোতলার সব ঘর লণ্ডভণ্ড। অনেক কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।”
তবে বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবও স্পষ্ট। বাড়ি ফাঁকা থাকলে সেই তথ্য আগাম জানিয়ে রাখার আবেদন বার বার করেছে পুলিশ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সাড়া দেননি বাসিন্দারা। এ ক্ষেত্রেও পুলিশের কাছে ওই বাড়ি ফাঁকা থাকার সম্পর্কে তথ্য ছিল না। বেঙ্গালুরু থেকে তুষারবাবু বলেন, “অনেক বার বাড়ি ফাঁকা রেখে বাইরে গেছি। কখনওই এমনটা হয়নি। তাই পুলিশকে বাড়ি ফাঁকা রাখার কথা জানাইনি।”
তবে পুলিশ যে দাবিই করুক না কেন, নজরদারি ঢিলেঢালা বলেই অভিযোগ বিধাননগরবাসীর। বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “অধিকাংশ সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি বা ভিআইপি ডিউটি দিতে ব্যস্ত থাকে পুলিশ। কর্মীর সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। উপরন্তু বোঝা যাচ্ছে পুলিশের নিজস্ব সোর্সের অভাব ঘটছে। বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়েই এই ঘটনার মোকাবিলা করতে হবে।”
বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বাড়ি ফাঁকা থাকার তথ্য পেলে নজর রাখার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। যদিও আগাম সেই তথ্য পুলিশ পায় না। পরিকাঠামো বেড়েছে, নজরদারিও। সোর্সেরও অভাব ঘটেনি। এ ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে কোনও চক্রের কাজ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy