Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

পুর ল্যাব কি যোগ্য, প্রশ্ন অন্য ল্যাবের

বেসরকারি ল্যাবগুলির একাংশের পাল্টা প্রশ্ন, পুরসভার ১৫টি বরোর ১৫টি ল্যাবের একটিতেও কোনও এমডি ডিগ্রিধারী প্যাথোলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট বা বায়োকেমিস্ট নেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ১০:৫০
Share: Save:

বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলির দেওয়া ডেঙ্গি পরীক্ষার রিপোর্ট পুনরায় পরীক্ষা করে দেখার যোগ্যতা কি আদৌ কলকাতা পুরসভার ল্যাবরেটরিগুলির রয়েছে? আপাতত এই প্রশ্নে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি ল্যাবে (যার মধ্যে এনএবিএল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একাধিক ল্যাব রয়েছে) ডেঙ্গি পরীক্ষা ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না, তা যাচাই করছে পুরসভা। ল্যাবরেটরিগুলি রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়ার পরে তাদের মধ্যে যে কোনও ল্যাব থেকে ইচ্ছে মতো রক্তের নমুনা নিয়ে পুরসভা তাদের ল্যাবে আবার পরীক্ষা করছে। এর জন্য পরীক্ষার পরে রক্তের সব নমুনা সাত দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলিকে।

বেসরকারি ল্যাবগুলির একাংশের পাল্টা প্রশ্ন, পুরসভার ১৫টি বরোর ১৫টি ল্যাবের একটিতেও কোনও এমডি ডিগ্রিধারী প্যাথোলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট বা বায়োকেমিস্ট নেই। রয়েছেন শুধু টেকনিশিয়ান ও এমবিবিএস চিকিৎসক। তাঁরা কী করে বেসরকারি ল্যাবেরেটরির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকদের সই করা রিপোর্ট চ্যালেঞ্জ করে ফের পরীক্ষা করাচ্ছেন?

কলকাতার একাধিক নামী ল্যাবরেটরি স্বাস্থ্য দফতরে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছে, কলকাতা পুরসভা যেন তেন প্রকারে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা কম দেখাতে চাইছে। তাই যে ল্যাবরেটরি বেশি সংখ্যায় ডেঙ্গি পজিটিভ রিপোর্ট দিচ্ছে, তাদের উপরে চাপ তৈরি করতে সেখান থেকে রক্তের নমুনা তুলে পুরসভার ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে। অথচ, ওই ল্যাব বা তার কর্মীরা কোনও ভাবেই সেই বেসরকারি ল্যাবের কর্মীদের তুলনায় বেশি দক্ষ নন। পুর ল্যাবের টেকনিশিয়ানদের সকলের বৈধ ডিগ্রি রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছে ওই ল্যাবগুলি।

এ কথা পুর কর্তাদের কানে পৌঁছতে তারা জোরালো ভাবে তা অস্বীকার করেছেন। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের কথায়, ‘‘বেসরকারি ল্যাবগুলির পরীক্ষায় অনেক গলদ ধরে ফেলায় অবান্তর অভিযোগ আনা হচ্ছে।’’ আর পুরসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কাউকে অপদস্থ করার অভিপ্রায় পুরসভার নেই। পুরসভা শুধু জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে কাজ করে।’’

বেসরকারি হাসপাতালের এমডি ডিগ্রি বা ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকদের সই করা রিপোর্ট কি পুর ল্যাবের টেকনিশিয়ান বা এমবিবিএস চিকিৎসকদের আবার পরীক্ষা করার এক্তিয়ার আছে? অতীনবাবুর বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষা তো ডাক্তার বা টেকনিশিয়ান করেন না। করে যন্ত্র। আমাদের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। যন্ত্রগুলি চালানোর জন্য আমাদের টেকনিশিয়ানদের আলাদা প্রশিক্ষণ রয়েছে। তাই আমাদের রিপোর্টই সেরা। কোনও এমডি দরকার নেই।’’ যা শুনে কলকাতার এক এনএবিএল স্বীকৃত ল্যাবের কর্ণধারের বক্তব্য, ‘‘তা হলে কি পুরসভা দাবি করছে যে, বেসরকারি ল্যাবের যন্ত্রপাতি সব নিম্নমানের?’’

তপনবাবুর জবাব, ‘‘বেসরকারি ল্যাবগুলি এটা কেন ভাবছে যে, ওদের বিপদে ফেলতে চাইছি? আসলে আমরা কতটা ঠিক পরীক্ষা করতে পারছি, সেটা দেখার জন্যও ওদের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করছি।’’ পুর ল্যাবের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, সেগুলির কোনওটিতেই ডেঙ্গি নির্ণয়ের জন্য ‘প্যাক সেল ভলিউম’ (পিসিবি) পরীক্ষা হয় না। তা স্বীকার করেই পুর কর্তাদের যুক্তি, ‘‘পিসিবি পরীক্ষা ডেঙ্গি বোঝার জন্য জরুরি নয়। জরুরি হল এলাইজা প্রক্রিয়ায় এনএস-১ এবং আইজিএম পরীক্ষা। সেটা আমাদের ল্যাবে অত্যন্ত উন্নত মানের হয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy