তেল নিতে এসে মাথায় হেলমেট়। রবিবার, মোমিনপুরে। — নিজস্ব চিত্র
একটাই হেলমেট। সেটাই এ মাথা-ও মাথা ঘুরছে!
পুলিশ বলেছে, মোটরবাইকে তেল ভরতে গেলে হেলমেট পরতে হবে। নইলে পেট্রোল পাম্পগুলো তেল বিক্রি করবে না। কিন্তু বাস্তব বলছে, শহরের বাইকচালকদের অনেকেই এখনও হেলমেটে অভ্যস্ত নন। এ বিষয়ে আইনেরও তোয়াক্কা করেন না। পুলিশি নির্দেশের ভয়ে তাই হেলমেট ‘ধার’ নেওয়ার কায়দা চালু হয়েছে মহানগরে।
রবিবার দুপুরে মল্লিকবাজারের কাছে একটি পেট্রোল পাম্পে দেখা গেল তেমনই। যাঁরা বাইক নিয়ে তেল কিনতে আসছেন, বেশির ভাগেরই মাথায় হেলমেট নেই। তাই অন্য কারও হাতে হেলমেট দেখলেই আকুতি, ‘‘ও দাদা! একটু হেলমেটটা দিন না। তেল ভরে নিই।’’ তেল ভরা হয়ে গেলে মালিকের হাতে হেলমেট ফিরিয়ে সাঁ করে রাজপথে দাপাতে বেরিয়ে পড়ছে ‘বেপরোয়া’-র দল। মল্লিকবাজার, বেনিয়াপুকুর, পার্ক সার্কাসের কোথাও কোথাও আবার হেলমেট ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, এমন খবরও শোনা গিয়েছে ওই এলাকার কিছু যুবকের কাছে।
তার মধ্যেই হেলমেটহীন বাইক-আরোহীর দুর্ঘটনায় পড়াও অব্যাহত। এ দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দু’টি বাইকের মুখোমুখি ধাক্কায় একটির পিছনের আসন থেকে ছিটকে পড়ে প্রাণ হারান মনোজকুমার সাউ (২৪)। পুলিশ জানায়, তাঁর মাথায় হেলমেট ছিল না। পুলিশ এ-ও জেনেছে, অন্য বাইকটির চালক দীপক দে ও তাঁর দুই সঙ্গীর মাথাতেও হেলমেট ছিল না। শেষে তেল ভরার জন্য একটি হেলমেট জোগাড় করে পাম্প থেকেই ফিরছিলেন তাঁরা।
নিয়ম যেমন থাকে, তেমন থাকে নিয়মের ফাঁকও। সেই ফাঁক গলেই এমন হেলমেট ‘ঋণ প্রকল্প’ চালু করেছেন লোকজন। কিন্তু হেলমেট তো একটাই। মোটরবাইকে যদি দু’জন থাকে? সেই সমাধানও করে ফেলেছেন ‘বেপরোয়া’ যুবকেরা। পাম্পে ঢোকার আগেই পিছনের সিট থেকে নেমে যাচ্ছেন আরোহী। শান্ত ভাবে তেল ভরে পাম্প থেকে বেরোনোর পরেই বিনা হেলমেটে ফের মোটরবাইকে চ়ড়ে বসছেন তিনি।
কোথাও কোথাও আবার তেল না মিললে কড়া ‘ওষুধ’ প্রয়োগেও পিছপা হচ্ছেন না কিছু কিছু তল্লাটের ‘বেপরোয়া’ যুবকেরা। পার্ক সার্কাস-মল্লিকবাজারের একটি পাম্পেই যেমন শনিবার রাতে রীতিমতো হাঙ্গামা বাধিয়েছেন কিছু যুবক। কর্মীদের গালাগালি, মারধর করা হয়েছে। ‘দেখে নেওয়া’-র হুমকিও দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে ওই পাম্প যে তেল সংস্থার ডিলার, সেই সংস্থার এক অফিসার সকাল থেকেই হাজির ছিলেন সেখানে। তিনি জানান, স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। নিরাপত্তার আবেদন জানিয়ে এসেছেন সেখানে। বন্দর এলাকার কিছু পাম্পের কর্মীরা যেমন জানিয়েছেন, লিখিত নির্দেশ যা-ই থাকুক না কেন, ওই সব এলাকায় হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীদের তেল দিতে প্রত্যাখ্যান করার সাহস তাঁদের নেই।
তবে শহরের বহু পাম্পেই এখন হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীকে তেল দেওয়া হচ্ছে না। আলিপুরের এক পাম্পে রবিবার দুপুরে এসেছিলেন এক যুবক। দামি মোটরবাইক, ব্র্যান্ডেড টি শার্ট, চুলে স্পাইক। কিন্তু হেলমেট নেই। পাম্পকর্মী সটান জানালেন, হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া যাবে না। ‘কৌনসা নোটিস?’ ‘কৌন বোলা?’ গলা চড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন বটে। কিন্তু যখন বুঝলেন, এত সহজে তেল মিলবে না, তখন বিরক্ত হয়ে পাম্প ছাড়লেন। মোমিনপুর পাম্পে তেল না পেয়ে কর্মীদের উপরে গলা চড়ান এক দল যুবক। বচসা বাধতেই হাজির পুলিশ। পরিস্থিতি আর খারাপ হতে পারেনি। ‘পশ্চিমবঙ্গ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর কর্তারা জানান, পরিস্থিতি সামলাতে আরও পুলিশি নজরদারি প্রয়োজন। পাম্পগুলিকে নিরাপত্তাও দিতে হবে। সংগঠনের সভাপতি তুষার সেনের মতে, তাড়াহুড়ো করাতেই এই সমস্যা। সমস্যা জানিয়ে আজ, সোমবার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে চিঠি দিচ্ছেন তাঁরা।
নিয়মের ফাঁক গলে যে এখনও অনেকে তেল পাচ্ছেন, তা মানছেন পুলিশেরই অনেকে। বলছেন, এত দিন ধরে হেলমেট না পরাই যেন রীতি হয়ে গিয়েছিল। সেই অভ্যাসে বদল আনতে একটু তো বেগ পেতেই হবে। এক পুলিশ অফিসারের যুক্তি, ‘‘হেলমেট ছাড়া তেল না পাওয়া নিশ্চিত করা হচ্ছে। পিছনের সওয়ারিকে পাম্পের আগে নামিয়ে দিচ্ছে কি না, তাতে নজর রাখা কঠিন।’’
আবার খালি মাথায় তেল কিনতে আসা অনেকে দাবি করছেন, এই নোটিস সম্পর্কে তাঁরা এখনও জানেন না। কিছু ক্ষেত্রে পাম্পের কর্মীরাও নোটিস সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নন বলে জানিয়েছেন। তুষারবাবু বলেন, ‘‘সোমবার অফিস খুললেই সব পাম্পে পুলিশের নির্দেশিকা পাঠানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy