প্রচারে তৃণমূলের প্রতীক চেনাচ্ছেন তাপস চট্টোপাধ্যায়। ছবি: শৌভিক দে
ঘরের দেওয়ালে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ছবির পাশে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি টাঙানো হয়েছে লালকুঠির তিনতলা বাড়িটির দোতলার ঘরের দেওয়ালে। বা়ড়ির গলির মুখে পার্টি অফিসের লাল রং মুছে নীল-সাদা না করলেও আপাতত সাদা করে দিয়েছেন তিনি। তা সত্ত্বেও ‘লাল অতীত’ যেন তাঁর পিছু ছাড়ছে না। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে তাই ভোটারদের তাঁর নতুন দলের ঘাসফুল প্রতীক চেনাতেই সময় যাচ্ছে ‘জিম্বু দা’র।
রাজারহাটের আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা তাঁকে যত না তাপস চট্টোপাধ্যায় নামে চেনেন, বেশি চেনেন জিম্বু নামে। সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে শুরু রাজনৈতিক জীবন। এর পরে সিপিএমের হয়ে এক বার রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার উপ-পুরপ্রধান। পরে ওই পুরসভারই ১৫ বছরের চেয়ারম্যান। তার জেরে এক সময়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপ তাপসবাবুর নাম রাজারহাটে সিপিএম দলের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে উচ্চারিত হত। কিন্তু সেই নামের ফেরেই এ বার খানিকটা হলেও পড়তে হচ্ছে তাপসবাবুকে। যা নিয়ে চিন্তিত তিনি এবং অনেকেই।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় নারায়ণপুর বাজারের ভিড় ঠেলে গাড়ি ঢুকল তাঁর কেন্দ্র বিধাননগর পুর-নিগমের তিন নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বেড়াবেড়িতে। গলায় তৃণমূলের উত্তরীয়, পরনে দুধসাদা পাঞ্জাবি-নীল জিন্স, পায়ে চটি। গাড়ি থেকে নামলেন তাপসবাবু। প্রত্যন্ত এলাকায় নিমেষের মধ্যে হাজির ৭০-৮০ জন মানুষ। তাপসবাবুর উদ্দেশে ভেসে এল, ‘চেয়ারম্যান এসেছেন’, ‘আপনার প্রতীক তো চিনি’, ‘এত বছর আপনাকেই ভোট দিয়েছি’ গোছের নানা মন্তব্য।
এতেই প্রমাদ গুনছেন কেউ কেউ। তাই প্রচার মিছিলে তাপসবাবুর অনুগামীদের দেখা গেল বারবার ভোটারদের বোঝাতে হচ্ছে তাপসবাবু এখন তৃণমূলে। তাঁর দলের প্রতীক জোড়া ঘাসফুল। কাস্তে, হাতুড়ি, তারা নয়। তাঁর নেত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হোর্ডিংয়েও তাই তাপসবাবুর সঙ্গে থাকছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কাকলি ঘোষদস্তিদারের ছবি। তাপসবাবুর অনুগামী সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া জনৈক নেতার কথায়, ‘‘আমরা সকলেই সিপিএমে ছিলাম। তাপসবাবুর সঙ্গে তৃণমূলে এসেছি। ভোটারদের সব সময়ে সচেতন করতে হচ্ছে, তাপসবাবুর ছবি দেখেই ভুলবশত সিপিএমে ভোট না দেন।’’
তাপসবাবুর সঙ্গে পশ্চিম বেড়াবেড়িতে মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে দেখা গেল, তিনি নিজেও একাধিক বার ভোটারদের বললেন, ‘‘আমি কিন্তু এখন তৃণমূলে। সেই বুঝে ভোট দেবেন।’’
২০১১-এ রাজ্য থেকে সিপিএম বিদায় নিলেও সিপিএমের হয়ে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা দখলে রাখেন তাপসবাবু। লোকমুখে প্রচার তৃণমূলের ‘ঝড়’ সমানে তাপসবাবুর বুঁদির কেল্লায় আছড়ে পড়ছিল। সেই চাপ আর নিতে না পেরে তাপসবাবুরা গত জুলাইয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এতে রাজারহাটের সিপিএমের কার্যত কোমর ভাঙলেও তাপসবাবুকে এখনও অনেকেই তৃণমূল-নেতা হিসেবে ভাবতে পারছেন না বলেই খবর।
যদিও তাপসবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘এত বছর সিপিএমে ছিলাম। সদ্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। ভোটাররা জানেন। আসলে কোনও ভোট যাতে সিপিএমের দিকে পড়ে নষ্ট না হয়, তাই প্রচারে তৃণমূলের প্রতীক তুলে ধরতে হচ্ছে। তবে সিপিএম এখানে আর দাঁড়াতে পারবে না। লোকসভায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭০০ ভোটে জিতেছিল সিপিএম। এ বার সেই ভোটগুলি তৃণমূলে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy