অঘটন: এই গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে রেলিংয়ের লোহা ঢুকে যায় এক যুবকের মাথায়। শনিবার, ভিআইপি রোডে। নিজস্ব চিত্র
সার্ভিস রোডের উপরে উল্টে পড়ে রয়েছে গাড়ি। ভিতরের তিন জন সওয়ারি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। খালপাড়ের রেলিংয়ের লোহা উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে চালকের পাশের আসনে বসা যুবকের মাথায় ঢুকে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গিয়েছে। চালকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। পিছনের আসনে থাকা যুবকের মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। শনিবার গভীর রাতে ভিআইপি রোডে এমনই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন তিন যুবক।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতে আড়াইটে নাগাদ গাড়িটি বাগুইআটির দিক থেকে উল্টোডাঙার দিকে যাচ্ছিল। গোলাঘাটার কাছে মূল রাস্তা ছেড়ে আচমকা সার্ভিস রোড ধরে গাড়িটি। মুহূর্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কেষ্টপুর খালপাড় সংলগ্ন ফুটপাতের উপরে উঠে গিয়ে গাড়িটি রেলিংয়ে ধাক্কা মারে। তাতেই রেলিংয়ের লোহা উইন্ডস্ক্রিন ভেদ করে ঢুকে যায়। ঘটনাস্থলের কাছে সার্ভিস রোড মেরামতির কাজ করছে পূর্ত দফতর। বিকট আওয়াজ পেয়ে ছুটে আসেন সেখানকার কর্মীরা। ভিআইপি রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে আরও কিছু গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় লেক টাউন থানার টহলদারি গাড়ি। পুলিশ গিয়ে দেখে, চালক ২৪ বছরের কৌসর আলি সংজ্ঞা হারিয়েছেন। গাড়ির পিছনের সিটে বসা মহম্মদ সামসুল কোনওমতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেও কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বছর সাতাশের মহম্মদ তারিকের। তাঁর বাঁ চোখের উপরের অংশে রেলিংয়ের লোহা ঢুকে মাথার পিছনের দিকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তড়িঘড়ি সামসুল এবং কৌসরকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরে শুরু হয় তারিককে উদ্ধারের কাজ। ওই যুবক যে ভাবে গাড়ির সিটে বসেছিলেন, তা দেখেই কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা বোঝেন যে, দমকল ছাড়া তারিককে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। কিন্তু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, দমকল আসতে অনেক দেরি করে। আড়াইটের সময়ে দমকলের মানিকতলা স্টেশনে প্রথমে ফোন করে পুলিশ। রাত তিনটে বেজে গেলেও দমকলের দেখা না মেলায় শেষে দমদমের দমকল স্টেশনে খবর দেওয়া হয়। সওয়া তিনটে নাগাদ সেখান থেকে আসে দমকলের গাড়ি। কিন্তু কর্মীরা জানান, তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই। শেষে পৌনে চারটে নাগাদ মানিকতলা থেকে যন্ত্র নিয়ে পৌঁছন দমকলকর্মীরা। গোটা সময়টা গুরুতর জখম অবস্থায় গাড়ির ভিতরেই বসে থাকেন তারিক। ভোর চারটে নাগাদ তারিককে উদ্ধার করে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রবিবার থানায় এসে তারিকের বন্ধুরা জানান, লোহার রডটি তাঁর মাথা থেকে বার করা হয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টা না কাটলে বিপদ থেকে মুক্তির আশ্বাস দেওয়া যাবে না। কৌসর এবং সামসুলকে সল্টলেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ডিভাইডারের উপরে ছড়িয়ে আছে কাচের টুকরো। দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে রেলিং। রাস্তা এবং রেলিংয়ে তখনও রয়েছে রক্তের দাগ। লেক টাউন থানায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির সামনের সিটে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। গাড়ির বাঁ দিকের অংশ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
সার্ভিস রোড সারাইয়ের কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্মী সরমন দাস বলেন, ‘‘কাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। বিকট আওয়াজ শুনে তাঁবু থেকে বেরিয়ে দেখি, ফুটপাতের উপরে উল্টে গিয়েছে গাড়ি। ভয়ঙ্কর দৃশ্য!’’
পুলিশের অনুমান, চালক-সহ তিন যুবকই মত্ত অবস্থায় ছিলেন। ডাক্তারি পরীক্ষার পরেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানায় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy