Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

সংক্রমিতদের পাশে প্রকৃত বন্ধু  সমাজমাধ্যম

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য প্রকৃত বন্ধুই করোনা সংক্রমিত রোগী ও তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজের মানবিক মুখ হয়ে উঠেছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

সোনারপুরের বাসিন্দা, কোভিড আক্রান্ত তনিমা মণ্ডলের বুধবার রাত থেকেই প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বহু চেষ্টা করেও পরিবার হাসপাতালে শয্যা পাচ্ছিল না। অবশেষে সংক্রমিতের ছেলে সুদীপ্ত ফেসবুকের মাধ্যমে কয়েক জন যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বৃহস্পতিবার তাঁরাই অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে ওই রোগীকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বাসিন্দা রহমানের বাবার জন্য অক্সিজেন খুঁজছিলেন ছেলে। পাচ্ছিলেন না। শেষে ফেসবুকের মাধ্যমে কয়েক জন যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা হয়। শুধু তাই নয়, ফেসবুক থেকে ফোন নম্বর জোগাড় করে অপরিচিত কয়েক জনের সহায়তায় ওই রোগীকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

বৃহস্পতিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ পোস্ট করে জানান, বেলেঘাটা আই ডি-র সামনের রাস্তায় পড়ে আছেন এক রোগী। স্বাস্থ্য ভবনে ফোন না পাওয়ায় তাঁর নাম রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে না। এ দিকে, অক্সিজেন নেমে যাচ্ছে। খুব দ্রুত তাঁকে ভর্তি না করালে বাঁচানো সম্ভব না। এ ক্ষেত্রেও ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে ওই রোগীকে ভর্তির ব্যবস্থা করানো হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকা এমন অসংখ্য প্রকৃত বন্ধুই করোনা সংক্রমিত রোগী ও তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজের মানবিক মুখ হয়ে উঠেছেন। সংক্রমিতের বাড়িতে খাবার, ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছিয়ে দেওয়া, রক্ত বা প্লাজ়মা দেওয়ার মতো গুরুদায়িত্ব পালনেও এখন সোশ্যাল মিডিয়া যথেষ্ট সক্রিয়। এই সব কাজে এগিয়ে এসেছেন কলকাতা ও শহরতলির বেশ কিছু পড়ুয়া। কেউ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কেউ প্রেসিডেন্সি, কেউ আবার আশুতোষ কলেজ বা আর্ট কলেজের পড়ুয়া। দিন সাতেক আগে গোটা দশেক বন্ধু নিয়ে তৈরি ফেসবুকের একটি গ্রুপের বর্তমান সদস্য আড়াই হাজার। উদ্দেশ্য, কলকাতা ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সংক্রমিতদের জন্য ঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো। ফেসবুকে ওই গ্রুপের নামকরণ করা হয়েছে, ‘কোভিড কেয়ার: ডিস্ট্রিক্টস ইউনাইটেড’।

গ্রুপের অ্যাডমিন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি নিয়ে পড়া, বারুইপুরের তনুময় নস্কর বলেন, “দিন সাতেক আগে মাত্র দশ জন বন্ধু নিয়ে শুরু করা ফেসবুক পেজ যে এত দ্রুত মহীরুহে পরিণত হবে, তা ভাবনার অতীত। বিভিন্ন জেলার করোনা রোগীদের ভর্তি করাতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাত জেগে কাটিয়েছি। শুধু কয়েক জন নয়, সকলকে এগিয়ে আসতেই হবে। মনে রাখতে হবে, এগন এই রাজ্যে কোনও সরকার ক্ষমতায় নেই। সবাই মিলে তাই সাহায্যের হাত বাড়ালে করোনা হার মানবেই!”

তনুময়ের সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের ছাত্র, কৃষ্ণনগরের দ্বীপশুভ্র আলি, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবিদা সুলতানা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌম্য কারক, মিডিয়া সায়েন্সের দিপ্র বিশ্বাস এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার পড়ুয়া নীলাঞ্জন বসুরা। ফেসবুকে রাজ্যের যে কোনও প্রান্তের দুর্ভোগে পড়া কোভিড আক্রান্তদের তথ্য পেলেই নিজেদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট রোগীর কাছে প্রয়োজনীয় পরিষেবা পৌঁছনোর যাবতীয় ব্যবস্থা তাঁরা করছেন।

তনুময়ের কথায়, “কলকাতায় সংক্রমিতদের পাশে দাঁড়াতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে সক্রিয় হলেও জেলার আক্রান্তেরা বেশ নাজেহাল হচ্ছেন। তাই জেলা জুড়ে এই কাজে বেশি ফোকাস করতে চাই।” টেলিফোনে কথার ফাঁকেই উঠে এল ডায়মন্ডহারবারের বাসিন্দা এক করোনা রোগীর প্রসঙ্গ। তনুময় জানান, ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা, এক ব্যক্তি নিজেই বৃহস্পতিবার তাঁকে ফোন করে সমস্যার কথা জানান। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রুপের সদস্যেরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। এই সাহায্যে খুশি রোগীর পরিবার।

সংক্রমিতের এক আত্মীয় মানস মিদ্যা শুক্রবার বলেন, “সামাজিক মাধ্যম যে কত বড় বন্ধু হতে পারে, আজ তা জানলাম। এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে সবাই এগিয়ে এলে আমরা লড়াইয়ের রসদ পাব। এটা নিশ্চিত।”

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy